চীন-কম্বোডিয়া অবাধ বাণিজ্য চুক্তি আগামি বছরের পয়লা জানুয়ারি কার্যকর হবে। চুক্তি অনুযায়ী, দু’দেশের মধ্যে পারস্পরিক শুল্ক-মুক্ত বাণিজ্য ৯০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চুক্তি বাস্তবায়নের ফলে দু পক্ষের আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতা আরো শক্তিশালী হবে।
কম্বোডিয়ার কামপং স্পিউ প্রদেশের চার নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে দেশটির মূল আম উত্পাদন এলাকা অবস্থিত। এখানকার ভৌগলিক বৈশিষ্ট্য আমকে সুগন্ধি ও মিষ্টি করে থাকে। প্রতিদিন আম টুকরা করে মিছরি মিশিয়ে শুকানোর পর আম স্লাইসে পরিণত করা হয়। পরে চীনা ভোক্তাদের হাতে পাঠানো হয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম দশ মাসে ১৫ হাজার টন আম স্লাইস রপ্তানি করে কম্বোডিয়া। তা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৯৫.৪ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে ১২ হাজার টন চীনে রপ্তানি করা হয়েছে।
আম ছাড়া চলতি বছরের প্রথম দশ মাসে কম্বোডিয়া চীনে ১১৭ হাজার টন চাল রপ্তানি করেছে, তা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৭ শতাংশ বেশি। চীন কম্বোডিয়ার কয়েকটি কৃষি পণ্যের বৃহত্তম রপ্তানি বাজারে পরিণত হয়েছে।
তাছাড়া, ভৌগলিকভাবে কাছাকাছি, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ভাল ও স্থিতিশীল রাজনীতি, প্রচুর পরিমাণে শ্রমশক্তি এবং উত্পাদন ব্যয় কমসহ নানা সুবিধা কাজে লাগিয়ে কম্বোডিয়া অনেক চীনা বিনিয়োগ আকর্ষণ করেছে। চীনা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের গবেষণালয়ের একাডেমিক কমিটির উপ-পরিচালক চাং চিয়ান পিং বলেন,
‘এক অঞ্চল এক পথ’ সহযোগিতার আওতায় কম্বোডিয়ায় নতুন করে বিনিয়োগ করছে চীন। যেমন: কম্বোডিয়ার সিনুক বন্দর এলাকায় হংতো শিল্প পার্ক সারা বছর সফলভাবে চলছে। চীনের টেক্সটাইল শিল্পের জন্য কর্পোরেট সামাজিক মানদণ্ড এ শিল্প পার্কে কাজে লাগছে। খনি সম্পদ, রিয়েল এস্টেট ও জলবিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণসহ অবকাঠামো এবং শ্রম-নিবিড় শিল্পে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করে চীনের কোম্পানিগুলোতা স্থানীয় যুব সমাজের জন্য বেশ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে এবং স্থানীয় অর্থনীতির উন্নয়নে অবদান রাখছে।
চীন টানা কয়েক বছর ধরে কম্বোডিয়ার বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার এবং সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগের উত্স দেশ হয়ে আসছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২০ সালে করোনা মহামারির প্রভাব সত্ত্বেও চীন ও কম্বোডিয়ার বাণিজ্যিক পরিমাণ ২০১৯ সালের তুলনায় ১.৪ শতাংশ বেড়ে ৯৫৬ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। এর মধ্যে চীনে কম্বোডিয়ার আমদানি ও রপ্তানি যথাক্রমে বৃদ্ধি হয়েছে ০.৯ শতাংশ ও ৩.৭ শতাংশ। দুদেশ ও দুদেশের জনগণ নানা ক্ষেত্রে দুদেশের বাস্তব সহযোগিতা থেকে উপকৃত হচ্ছে।
২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে চীন ও কম্বোডিয়া অবাধ বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু করে এবং ২০ জুলাই আলোচনার শেষ করে। ১২ অক্টোবর চুক্তি স্বাক্ষর করে দুদেশ। চীনা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, এ চুক্তি হবে দ্বিপক্ষীয় আর্থ-বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়নের নতুন মাইলফলক এবং দুদেশের কোম্পানি ও জনগণের জন্য কল্যান বয়ে আনবে এটি।
চুক্তি অনুযায়ী, দুদেশের মধ্যে পারস্পরিক শুল্ক অব্যাহতি ৯০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে এবং পরিষেবা বাজারও উন্মুক্ত হবে। পাশাপাশি, বিনিয়োগ সহযোগিতা, ‘এক অঞ্চল এক পথ’ প্রস্তাব বাস্তবায়ন, ই-বাণিজ্য, অর্থনৈতিক প্রযুক্তিসহ নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করতে একমত হয় দুদেশ।
এ প্রসঙ্গে চাং চিয়ান পিং বলেন,বতর্মানে অবাধ বাণিজ্য চুক্তি দুদেশের আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতার নানা দিকের প্রতিফল করছে। চীন ও কম্বোডিয়ার উচ্চ মানের অবাধ বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে দুপক্ষের বাজার ও শিল্প উন্নয়নের সুপ্ত শক্তি আবিষ্কার করা যাবে। পাশাপাশি, চীন-আসিয়ান অবাধ বাণিজ্য চুক্তির বাস্তবায়ন এবং আঞ্চলিক সার্বিক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বরের সম্পর্কের চুক্তি বাস্তবায়নের সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ।
কম্বোডিয়াও আসিয়ানের সদস্য দেশ। ২০২০ সালে করোনা মহামারির প্রভাবে চীন ও আসিয়ানের বাণিজ্য পরিমাণ ৬৮ হাজার ৪৬০ কোটি ডলার হয় এবং পরস্পরের বৃহত্তম বাণ্যিজিক অংশীদার হয়। সম্প্রতি চীন-আসিয়ান অবাধ বাণিজ্য এলাকার ৩.০ সংস্করণ শুরু হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ পরিমাণও আরও বেশি হবে। চাং চিয়ান পিং বলেন,
আসিয়ান হল আরইসিপির উদ্যোক্তা অর্থনৈতিক সত্তা এবং তার কেন্দ্র। চীন আরইসিপির গুরুত্বপূর্ণ সমর্থক ও প্রচারক। তাই আরইসিপির একই মান অনুযায়ী চীন-আসিয়ান চীন-আসিয়ান অবাধ বাণিজ্য এলাকা নির্মাণ করবে। (শিশির/এনাম/রুবি)