পান্ডা হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বিরল প্রজাতির প্রাণীগুলোর অন্যতম একটি। পান্ডার সংরক্ষণ ও লালনপালন হচ্ছে চীনে বিপন্ন প্রজাতির উদ্ধারের সফল একটি উদাহরণ। চীনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ও উদ্যমী সংরক্ষিত দৈত্য পান্ডা গ্রুপ। বিশ্বের ২০টিরও বেশি চিড়িয়াখানার সঙ্গে পান্ডা সংরক্ষণ নিয়ে সহযোগিতা ও গবেষণা করে থাকে চীন। চলতি বছর বিদেশে পাঠানো চীনা পান্ডাগুলো বাচ্চা জন্ম দিয়েছে। এটি মহামারীতে আচ্ছন্ন বিশ্বকে কিছুটা হলেও আনন্দ দিয়েছে। আর ঠিক এভাবেই পান্ডার বাচ্চারাও দেশ-বিদেশ মানুষে-মানুষে মৈত্রীর দূতে পরিণত হয়েছে।
গত অগাস্ট মাসে সিঙ্গাপুরে পাঠানো চীনা পান্ডা খাই খাই ও চিয়া চিয়া দম্পতি বাচ্চা জন্ম দিয়েছে। গত ২১ নভেম্বর ছিল তার জন্মের ১০০তম দিন। এ উপলক্ষ্যে সিঙ্গাপুর তার অনেক ছবি প্রকাশ করেছে।
পান্ডা বাচ্চাটির ওজন বর্তমানে ছয় কিলোগ্রাম ছাড়িয়েছে, তা জন্মের সময়ের তুলনায় ৩০ গুণ বেশি। তার বর্তমান উচ্চতা ৬৭ সেন্টিমিটার। তার দাঁতও গজিয়েছে। তার মা চিয়া চিয়া তাকে অনেক ভালবাসে। সবসময় তাকে কোলে রাখে।
জানা গেছে, পান্ডা বাচ্চাটির নাম আগামী মাসে যৌথভাবে প্রকাশ করবে সিঙ্গাপুর ও চীন। এই নাম অনলাইনে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হবে। এটি সিঙ্গাপুরের ঐতিহ্য এবং চীন-সিঙ্গাপুর মৈত্রীর প্রতিফলন ঘটাবে।
চলতি বছর আরো কয়েকটি দেশে জন্ম নিয়েছে বেশ কয়েকটি পান্ডা বাচ্চা। গত ৩১ মে মালয়েশিয়ায় পাঠানো পান্ডা লিয়াং লিয়াং তার তৃতীয় বাচ্চার জন্ম দিয়েছে। এটি তার প্রথম ছেলে বাচ্চা। একই দিন পালিত হয় চীন ও মালয়েশিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৪৭তম বার্ষিকী। তাই পান্ডা বাচ্চাটি আরও বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
মালয়েশিয়া জাতীয় চিড়িয়াখানার ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা পান্ডা বাচ্চার জন্ম দেখে খুব খুশি হয়েছি। তার জন্মদিনটি বিশেষ একটি দিন। তা মালয়েশিয়া ও চীনের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার বার্ষিকী। আমরা ভালভাবে পান্ডার যত্ন নিচ্ছি। একে নিয়ে আমরা গর্বিত। কারণ পান্ডা হল মালয়েশিয়া ও চীনের মৈত্রীর প্রতীক’।
সিয়াও সিয়াও ও লেই লেই
জাপানের টোকিও উয়েনো চিড়িয়াখানায় পাঠানো পান্ডা ‘পরী’ গত ২৩ জুন যমজ পান্ডা বাচ্চা জন্ম দিয়েছে। চার বছর আগে সে একবার বাচ্চা জন্ম দিয়েছিল। এবার সে জন্ম দেয় তার প্রথম যমজ পান্ডা বাচ্চা।
চিড়িয়াখানাটি পান্ডা বাচ্চার নামকরণের জন্য একটি উন্মুক্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। তাতে দুই লাখ নামের প্রস্তাব আসে। পরে পান্ডা দুটির নাম ঠিক করা হয় সিয়াও সিয়াও এবং লেই লেই। নাম দুটির অর্থ হল উজ্জ্বল ভোর থেকে ভবিষ্যতের উদ্দেশে এগিয়ে যাওয়া। বর্তমানে সিয়াও সিয়াও ও লেই লেইর ওজন প্রায় ১০ কিলোগ্রাম। তাই তাদেরকে কোলে নেয়া কঠিন। পান্ডা দুটি খুব প্রাণবন্ত এবং চতুর, সবসময় একসাথে খেলে।
হুয়ান লিলি ও ইউয়ান তুতু
ফ্রান্সের সেন্ট আইগনান শহরের বিউভালে চিড়িয়াখানায় রক্ষিত পান্ডা হুয়ান হুয়ানও গত ২ অগাস্ট যমজ পান্ডা বাচ্চার জন্ম দিয়েছে। জন্ম দেয়ার সময় চীনের ছেংতু পান্ডা প্রজনন গবেষণা কেন্দ্রের দুজন চীনা বিশেষজ্ঞ ও ফ্রান্সের ব্রিডার ও পশুচিকিৎসকগণ দিন রাত হুয়ান হুয়ানের সাথে ছিলেন। গত ১৮ নভেম্বর ছিল যমজ পান্ডা বাচ্চার জন্মের ১০০তম দিন। চিড়িয়াখানাটি তাদের নামকরণ অনুষ্ঠান আয়োজন করে সেদিন। ফ্রান্সের বিখ্যাত ফুটবল খেলোয়াড় এম্বাপে ও চীনের অলিম্পিক ডাইভিং চ্যাম্পিয়ন চাং চিয়া ছি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। মোট ১ লাখ ২২ হাজার অনলাই ভোটের মাধ্যমে তাদের নাম ঠিক করা হয় হুয়ান লিলি ও ইউয়ান তুতু। হুয়ান তাদের মায়ের নাম, আর লি মানে প্যারিস। ইউয়ান তাদের বাবার নাম এবং তু মানে ছেং তু। তাদের নাম থেকে প্রতিফলিত হয় চীন-ফ্রান্সের মৈত্রী নিয়ে মানুষের আন্তরিক প্রত্যাশা।
পান্ডা সংরক্ষণ ও গবেষণা-বিষয়ক আন্তর্জাতিক সহযোগিতা দেশ-বিদেশের সংস্কৃতি ও আদানপ্রদান এগিয়ে নিচ্ছে। আরও বেশি মানুষ পান্ডা সম্পর্কে জানতে পারছে । বর্তমানে পান্ডা বিপন্ন প্রজাতির তালিকা থেকে অরক্ষিত প্রজাতির তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বন্যপ্রাণী সুরক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতি হিসেবে পান্ডার সংরক্ষণ বিশ্ব জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে। (শিশির/এনাম/রুবি)