নভেম্বর ২১: ২০১৩ সালের শরত্কালে, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং কাজাখস্তান ও ইন্দোনেশিয়া সফরকালে যথাক্রমে যৌথভাবে ‘রেশমপথ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ এবং ‘একবিংশ শতাব্দীর সামুদ্রিক রেশমপথ’ নির্মাণের জন্য ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ স্থাপনের গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন।
আট বছরে সি চিন পিং-কেন্দ্রিক চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির দৃঢ় নেতৃত্বে, চীন উচ্চ মানের উন্নয়ন জোরদার করেছে, নতুন উন্নয়নের কাঠামো গঠন করেছে, যৌথভাবে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ নির্মাণ করেছে, যৌথ আলোচনা, যৌথ নির্মাণ এবং যৌথভাবে বিনিময়ের নীতিতে ‘এক অঞ্চল, এক পথের’ উচ্চ মানের উন্নয়ন মজবুত করেছে, ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ নির্মাণ মানবজাতির অভিন্ন ভাগ্যের কমিউনিটি গড়ে তোলার গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চে পরিণত হয়েছে, যা বিভিন্ন দেশের জন্য অভিন্ন সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথ উন্মোচন করেছে।
সম্প্রতি চীন ও লাওস রেলপথের অভ্যন্তরীণ অংশ পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে। এ বছরের শেষ নাগাদ লাওসের অংশটিও চালু হবে। চীন ও লাওস রেলপথ প্রকল্প হল ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ এবং লাওসের উন্নয়ন কৌশল সংযোগের প্রতিনিধিত্বকারী প্রকল্প। যা আসিয়ান দেশের সঙ্গে বিনিময়ের ক্ষেত্রে আরও সুবিধাজনক আন্তর্জাতিক রেলপথ তৈরি করেছে।
চীন-লাওস রেলপথের মত, ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর অবকাঠামো খাতে চীন আরও যোগাযোগ বৃদ্ধি করেছে। চীন-থাইল্যান্ড রেলপথ, হাঙ্গেরি-সার্বিয়া রেলপথ, জাকার্তা-বান্দুং দ্রুতগতির রেলপথ, চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরসহ বিভিন্ন প্রতিনিধিত্ব গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে ইতিবাচক অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে।
যৌথভাবে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ নির্মাণ করা হল চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের যুগের অবস্থা বিবেচনা করে, বিশ্বের মুখোমুখি ‘যুগের চাহিদা’ পূরণে উত্থাপিত গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সহযোগিতার উদ্যোগ।
আট বছরেরও বেশি সময়ে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং নীতিগত বিনিময়, অবকাঠামো যোগাযোগ, বাণিজ্যিক সুষ্ঠুতা থেকে সুষ্ঠু, সবুজ, ডিজিটাল ও উদ্ভাবনসহ বিভিন্ন নতুন ক্ষেত্রের সহযোগিতা এগিয়ে নিয়েছেন। এর ফলে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ বিশ্বের বৃহত্তম এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মঞ্চ তৈরি করেছে এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় আন্তর্জাতিক গণপণ্যে পরিণত হয়েছে।
বর্তমানে চীন ১৪০টি দেশ ও ৩২টি আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে দুই শতাধিক ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ বিষয়ক সহযোগিতা দলিল স্বাক্ষর করেছে। ৯০টিরও বেশি দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার ব্যবস্থা স্থাপন করেছে। জাপান, ইতালিসহ ১৪টি দেশের সঙ্গে তৃপক্ষীয় বাজার সহযোগিতা দলিল স্বাক্ষর করেছে। ‘এক অঞ্চল, এক পথ’-এর আন্তর্জাতিক প্রভাবশক্তি আরো বাড়ছে। সহযোগিতার মানও দিন দিন বাড়ছে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চীন এবং সংশ্লিষ্ট দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ১০.৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছায়। করোনাভাইরাসের মহামারি মধ্যেও ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ সহযোগিতা আরও উন্নত হয়েছে। চলতি বছরের প্রথম দশ মাসে, চীন ও ‘এক অঞ্চল, একপথ’ সংশ্লিষ্ট দেশের আমদানি-রপ্তানির মোট পরিমাণ ২৩ শতাংশ বেড়েছে।
চীনের রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশনের আঞ্চলিক উন্মুক্তকরণ বিভাগের প্রধান সুই চিয়ান পিং বলেন, সামুদ্রিক ও বিমান পরিবহন খাতে বাধা এলেও চীন ও ইউরোপের ট্রেন নিয়মিত চলাচল করছে। যা মহামারি প্রতিরোধ ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের সেতু স্থাপন করেছে।
পাকিস্তানে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর ইতোমধ্যে সে দেশের জন্য ২৫.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রত্যক্ষ বিদেশি পুঁজি আকর্ষণ করেছে এবং বহু কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশে চীনের সহায়তায় তৈরি এবং দূরপাল্লায় মেরামত করা যায়—এমন সৌরশক্তি চালিত সড়কবাতি ব্যবস্থা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহরে ব্যবহার করা হচ্ছে। যা স্থানীয় আলোকব্যবস্থা উন্নয়নের পাশাপাশি পরিচ্ছন্ন জ্বালানির ব্যবহার বাড়িয়েছে।
‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের সুফল এখন সংশ্লিষ্ট দেশের মানুষের আরও বেশি কল্যাণ বয়ে এনেছে।
(শুয়েই/তৌহিদ/জিনিয়া)