চীন মার্কিন শীর্ষনেতার বৈঠকে ইতিবাচক কথোপকথন হয়েছে
2021-11-20 16:49:59

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং গত মঙ্গলবার বেইজিং থেকে ভিডিও সংযোগের মাধ্যমে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বৈঠক করেছেন। বৈশ্বিক মহামারি, জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যু, ভূ-রাজনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যে দুই শীর্ষনেতার বৈঠক ছিল বেশ উল্লেখযোগ্য। সারা বিশ্বের গণমাধ্যমগুলো প্রেসিডেন্ট সি ও বাইডেনের কথোপকথনের ওপর নজর দিয়েছিল।

বৈঠকে প্রথমত গুরুত্ব পায় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক। বেইজিং-ওয়াশিংটনের মধ্যে এই সম্পর্ক আরও গভীর ও দৃঢ় করার আহ্বান জানিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি। তিনি বলেছেন, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, উইন-উইন সহযোগিতার পথ অনুসরণ এবং অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংঘাত নিরসনে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রকে পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে দায়িত্ব পালন করা উচিত। দুই দেশের মানুষ এবং সারা বিশ্ববাসী এমনটাই প্রত্যাশা করে।

তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্বের প্রধান দুটি অর্থনৈতিক সত্ত্বা এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে দু’দেশের উচিত পারস্পরিক সহযোগিতা ও যোগাযোগ বাড়ানো এবং মানবজাতির শান্তি ও উন্নয়ন এগিয়ে নেওয়া। এটি চীন-মার্কিন শীর্ষনেতাদের অভিন্ন দায়িত্ব বলে স্মরণ করিয়ে দেন জনাব সি।

সি উল্লেখ করেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশ উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছে এবং তারা মানবতার ‘গ্লোবাল ভিলেজ’ এর বহুবিদ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে।

চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক ইতিবাচক পথে এগিয়ে নিতে ঐক্য গড়ে তোলা এবং সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সাথে কাজ করতে চীন প্রস্তুত জানিয়ে সি চিন পিং বলেন, শান্তিতে সহাবস্থান, উইন-উইন সহযোগিতার পথ অনুসরণে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের পরস্পরকে সম্মান দেখানো উচিত।

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেছেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মতভেদ থাকাটা স্বাভাবিক, তবে গঠনমূলক উপায়ে তা মোকাবিলা করা উচিত, যাতে মতভেদ আর না বাড়ে।

তিনি বলেন, চীন অবশ্যই নিজের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের কল্যাণ রক্ষা করবে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাবের পরিবর্তনের আশা করে বেইজিং।

প্রেসিডেন্ট সি বলেন,  চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের উচিত সহনশীল ও গঠনমূলক উপায়ে মতভেদ দূরকরা, এবং বড় দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক সমাজকে সহযোগিতার মাধ্যমে অভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নেতৃত্ব দেয়া।

তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা হয়তো সবকিছু করতে সক্ষম হবে না, তবে সহযোগিতা ছাড়া কিছুই সম্ভব নয়।

তা ছাড়া, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রের আদান-প্রদান এবং আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংকট মোকাবিলায় সমন্বয় ও সহযোগিতা জোরদার করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

জলবায়ু পরিবর্তন ও মহামারি করোনাভাইরাসের মতো বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলাসহ এ দুই দেশের নিজস্ব উন্নয়নের কাজ এগিয়ে নিতে এবং শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যুক্তিসঙ্গত ও অবিচল সম্পর্ক বজায় রাখা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন সি চিন পিং।

 

চীন-মার্কিন  সহাবস্থানের সঠিক পথ খুঁজে বের করা আগামী ৫০ বছরে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠবে বলে মন্তব্য করেন চীনের প্রেসিডেন্ট।

বৈঠকে তাইওয়ান সম্পর্কে চীনের অবস্থান শক্ত করে তুলে ধরেন প্রেসিডেন্ট সি।

তিনি বলেন, চীন ধৈর্যের সঙ্গে সর্বোচ্চ আন্তরিকতার মাধ্যমে দুই তীরের শান্তিপূর্ণ একীকরণ বাস্তবায়ন করতে চায়। তাইওয়ানের কথিত স্বাধীনতাকামীদের উস্কানি দেওয়া হলে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে চীন।

বৈঠকে প্রেসিডেন্ট সি জোর দিয়ে বলেন, গণতন্ত্র কোনো ‘কাস্টমাইজড’ পণ্য নয় যে, সারা বিশ্বে তার আদল ও মানদণ্ড একই হবে। গণতন্ত্র বাস্তবায়নের পদ্ধতি ভিন্ন হলে তাকে বাধা দেয়াটাই অগণতান্ত্রিক আচরণ।

তিনি বলেন, পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে মানবাধিকার নিয়ে সংলাপ চায় চীন, তবে মানবাধিকারের অজুহাতে অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করে বেইজিং।

প্রেসিডেন্ট সি যু্ক্তরাষ্ট্রকে নিজের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ‘নতুন স্নায়ুযুদ্ধ’ পরিচালনা না-করার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করার আহ্বান জানিয়েছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, তিনি মনে করেন, দুই দেশের শীর্ষনেতা হিসেবে তাঁদের দুজনের ওপর অনেক দায়িত্ব রয়েছে। বিশেষ করে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বিতা যেন সংঘাতে রূপ না নেয়, সেজন্য তাদের ভূমিকা রাখতে হবে। তাই মতৈক্য প্রতিষ্ঠা করা এবং আন্তরিকতার সঙ্গে মতভেদ মোকাবিলা করতে হবে।