গত ৫ থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। চলতি বছরের মেলায় চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে অনেক বিদেশি ব্যবসায়ী প্রচুর অর্ডার পেয়েছেন। চীনের বিশাল বাজারের চাহিদা এবং সামর্থ্যের কারণে মেলায় অংশগ্রহণকারী অনেক ব্যবসায়ী লাভবান হয়েছেন। ফলে নিজেদের উন্নয়নের পাশাপাশি ভবিষ্যতের জন্য চীনের অর্থনীতির ওপর তাঁরা আস্থা খুঁজে পেয়েছেন। এভাবেই আমদানি মেলা বিশ্ব অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে প্রত্যয় ও চালিকাশক্তি যুগিয়েছে। এবারের মেলায় মোট লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৭০.৭২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিভিন্ন পক্ষের অভিন্ন প্রচেষ্টায় এবারের মেলা সফল ও ফলপ্রসূ হয়েছে।
সারা বিশ্বে মহামারীর ওঠা-নামা সত্ত্বেও এবারের মেলা শুধু সময়তো শুরু হয়েছে- তা নয়, বরং অংশগ্রহণকারী দেশ ও প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও গত বারের চেয়ে অনেক বেশি বেড়েছে। মেলায় অংশগ্রহণকারী ব্যবসায়ীদের গুণগতমানের এবং প্রদর্শনীর মানও বেড়েছে। অনেক অংশগ্রহণকারী ব্যবসায়ী এবারের মেলায় লাভবান হয়ে আগামী বছরের মেলার ব্যাপারেও আশাবাদী হয়ে ওঠেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, এবারের এই বৈশ্বিক মহাসম্মিলনী উন্মুক্ত চীনের আকর্ষণীয় ও বাস্তব শক্তি প্রদর্শন করেছে, এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে প্রত্যয় ও চালিকাশক্তি যুগিয়েছে।
চলতি বছরের মেলায় অনেক প্রতিষ্ঠান নিজেদের বিখ্যাত পণ্য প্রদর্শন করেছে, সেসব আগামীতে চীনা বাজারের চাহিদা পূরণ করতে পারবে।
মেলায় জার্মান ব্র্যান্ড মেট্রো ২৩টি দেশের ১৩০টি আমদানি পণ্য প্রদর্শন করেছে, এর মধ্যে রয়েছে ৫০টি নতুন পণ্য।
‘চীনের অর্থনীতি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধির প্রবণতা ধরে রেখেছে। ফলে মানসম্মত আমদানি পণ্যদ্রব্যের বিশাল ভবিষ্যত তৈরি হয়েছে। চলতি বছর আমরা চতুর্থবারের মতো আমদানি মেলায় অংশ নিচ্ছি। এটা খুব ভাল একটি বিনিময় প্ল্যাটফর্ম। আমরা শুধু চীনা ভোক্তাদের মেট্রোর উচ্চমানের পণ্যদ্রব্য দেখাই নি, বরং আরো ভালোভাবে চীনা ভোক্তাদের চাহিদা উপলব্ধি করতে পেরেছি। যাতে আরো ভালোভাবে বিশ্ব সরবরাহ-চেইনের সুবিধা কাজে লাগিয়ে তাঁদের সেবা প্রদান করতে পারি,’ বলছিলেন চীনে মেট্রোর প্রেসিডেন্ট ছাই থিয়েনলে এমো।
অনেক প্রতিষ্ঠানের সর্বশেষ পণ্য ও প্রযুক্তি আমদানি মেলায় বা চীনে নিয়ে আসা নিঃসন্দেহে একটি সঠিক কাজ। চীনের বিশাল বাজার চাহিদা এবং পণ্যভোগ্যের সামর্থ্য অংশগ্রহণকারী ব্যবাসায়ীদের হতাশ নয়, বরং আরো বেশি আশাবাদী করেছে।
ইনগারসোল র্যান্ড কোম্পানির বুথে সর্বশেষ নতুন আরএম ব্যবস্থার মাইক্রো-তেল স্ক্রু সংকুচিত বায়ু সিস্টেম প্রোটোটাইপ বিক্রি করা হয়েছে। কোম্পানির প্রবীণ ক্লাইয়েন্ট উপদেষ্টা গু জে খাই বলেন, ‘এটি কেবল সেপ্টেম্বর মাসে বাজারে এসেছে। মেলায় অনেকে বুঝতে আসেন। তবে মেলার শুরুর দিকে ২ লাখ ইউয়ান মূল্যের যন্ত্রটি বিক্রি হয়েছে। এটা আমাদের কাছে খুব আশ্চর্যের বিষয়।’
জানা গেছে, আগের তিনটি আমদানি মেলায় ইনগারসোল র্যান্ড প্রতিবার কমপক্ষে একটি দ্বিতীয় প্রজন্মের আর ব্যবস্থার উচ্চ দক্ষতার শক্তি সঞ্চয় বায়ু সংকোচকারী নিয়ে এসেছিল। মেলাটির কার্যকারিতা অব্যাহতভাবে সম্প্রসারিত হবার সঙ্গে সঙ্গে কোম্পানি অনেক নতুন অর্ডার পাচ্ছে। গত সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে কোম্পানির পণ্যের বিক্রয় পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে।
চীনের ইলেকট্রনিক্স জুহাই কোম্পানির ই-বাণিজ্য বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার ওয়ান ফাং বলেছেন, ‘এবারের আমদানি মেলায় আমরা শুধু অংশগ্রহণের মাত্রা সম্প্রসারণ করেছি, তা নয়, বরং প্রথমবারের মতো একসাথে ৪টি বুথে পণ্য প্রদর্শনী এবং লাইভস্ট্রিমিং সংযুক্ত করে মানুষের কাছে বৈদেশিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভাবমূর্তি তুলে ধরেছি। এবারের মেলা আমাদের জন্য ফলপ্রসূ হয়েছে। আগামী বছরও তাতে অংশ নেব।’
আসলে চলতি বছরের জুলাই মাসে লরিয়াল, বায়ার, মিশেলিন, হুন্ডাই মোটর ও ফাইজারসহ ২০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট সময়ের আগে ২০২২ সালের পঞ্চম আমদানি মেলার ‘প্রবেশ টিকিট’ পেয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের আদমানি মেলায় অংশগ্রহণের আগ্রহ এতো বেশি হওয়ার কারণ হলো উন্মুক্ত ও সম্প্রসারিত, বিশাল অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের এবং অসীম সুযোগের চীন।
চলতি বছর হলো চীনের বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডাব্লিউটিও) যোগদানের ২০তম বার্ষিকী। মেলায় এই সম্পর্কিত বিশেষ প্রদর্শনী ছিল খুবই আকর্ষণীয়। সেখানে সবচেয়ে বেশি দেখানো হয় চীনের“উন্মুক্ত’নীতি ও এতদসংক্রান্ত ফলাফল।
আসলে চলতি বছর থেকে উন্মুক্তকরণের ক্ষেত্রে চীন নতুন নতুন পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। বছরের প্রথমার্ধে চীনের বাণিজ্যিক আমদানি-রপ্তানির মোট পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৭.১ শতাংশ বেড়েছে। বাণিজ্যিক কাঠামো ধারাবাহিকভাবে সুবিন্যস্ত হচ্ছে। ফলে বিশ্ব বাণিজ্যকে স্থিতিশীল এবং পুনরুদ্ধার ত্বরান্বিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে চীন।
চলতি বছরের আমদানি মেলায় চীন সহযোগিতা ও পারস্পরিক কল্যাণের প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে সারা বিশ্বের সঙ্গে তার সুযোগ ভাগাভাগি করেছে।
বিশ্বে মহামারীর ওঠা-নামার ফলে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন এখনও অস্থিতিশীল ও অনিশ্চিত রয়ে গেছে। তবে এবারের মেলা আমাদের অনেক প্রত্যয় যুগিয়েছে। অংশগ্রহণকারীদের চেহারায় দৃঢ়তা ও আত্মবিশ্বাস দেখা গেছে। চীনের জাতীয় রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের স্থায়ী সদস্য, ও শাংহাই পৌর রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট চৌ হানমিন এ কথা বলেন।
তাহলে আগামী বছরের চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলায় আবারও দেখা হবে। আরো চিত্তাকর্ষক আমদানি মেলায় আপনাদের দেখার অপেক্ষায় রইলাম।
(প্রেমা/এনাম)