সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হিসেবে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করা চীনের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হয়ে উঠেছে।
চীনের উত্তরাঞ্চলে শীতকাল শুরু হয়েছে। অতীতে, উত্তরের শহরগুলির বাসা ও স্থাপনা গরম করার জন্য কয়লা ব্যবহার করা হতো। এতে প্রচুর কালো ধোঁয়া নির্গত হতো। এখন অনেক পরিবার প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করে, যা উষ্ণ ও পরিচ্ছন্ন। যেমন, শানতুং প্রদেশের জিবো শহর শীতকালে গ্রামীণ এলাকায় পরিচ্ছন্ন গ্যাস ব্যবহার করে উষ্ণায়নের সংস্কার চলছে। জানা গেছে, ২০১৭ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত, জিবো শহর প্রায় ৫.১৮ লাখ পরিবার প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করে সংস্কার বাস্তবায়ন করেছে।
গ্লাসগো জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনকালে, আন্তর্জাতিক জনমত আবারও চীনের অবদানের প্রশংসা করেছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী চীন ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমনে চূড়ান্ত অবস্থা এবং ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জনের জন্য চেষ্টা করবে। চীন আরও বলেছে যে, নতুন করে আর কোনও কয়লা বিদ্যুত্ প্রকল্প নির্মাণ করবে না।
চীন সক্রিয় ও জোরালোভাবে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’-এর সবুজ উন্নয়ন প্রচার করছে এবং ‘এক অঞ্চল, এক পথ’-এর বিনিয়োগে সবুজায়ন প্রবণতা সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, ২০২১ সালের প্রথমার্ধে, চীন ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের অধীনে কোনো কয়লাভিত্তিক প্রকল্পে অর্থায়ন করেনি।
কিছু দেশে কয়লা বিদ্যুত্ খাতে বিনিয়োগ করা হতো। সেসব দেশে জ্বালানি রূপান্তরের গতি জোরদার করা হয়েছে এবং কয়লা বিদ্যুত্ প্রকল্পের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। যেমন, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলি তাদের জ্বালানি নীতি ও পরিকল্পনার সমন্বয় করেছে এবং কয়লাভিত্তিক সিরিজের বিদ্যুত্ প্রকল্প বাতিল করেছে।
২২ সেপ্টেম্বরে ‘কার্বন নিরপেক্ষতা ও চীনের অ্যাকশন’ শিরোনামে একটি বৈশ্বিক লাইভ সেমিনারে, চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহবুব উজ্ জামান বলেছেন যে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় চীন একটি দায়িত্বশীল দেশের ভূমিকা পালন করেছে এবং গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্ব দিয়েছে। “বাংলাদেশ চীনের সাফল্য থেকে আরও মূল্যবান অভিজ্ঞতা শেখার আশা করছে।”
বিশ্বের বৃহত্তম উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে, চীন তার নিজস্ব অর্থনীতি ও সামাজিক সমস্যা কাটিয়ে উঠেছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অভ্যন্তরীণ একাধিক পদক্ষেপ বাস্তবায়নের পাশাপাশি, চীন বিশ্বের বিপুলসংখ্যক উন্নয়নশীল দেশের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করেছে।
অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলিকে প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করা এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার আওতায় চীন এক বিলিয়ন ইউয়ানেরও বেশি বরাদ্দ দিয়েছে, প্রায় ৪০টি দেশে জ্বালানি-সাশ্রয়ী ও নতুন জ্বালানি সরঞ্জাম দান করেছে এবং ১২০টি উন্নয়নশীল দেশকে জলবায়ু পরিবর্তন খাতে প্রায় ১৫০০ কর্মকর্তা ও প্রযুক্তিবিদদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
২০২০ সাল থেকে, চীনের অর্থায়নকৃত পোশাক প্রস্তুতকারক লিদ্যে গ্রুপ বাংলাদেশের ঢাকায় তার কারখানায় ফটোভোলটাইক পাওয়ার স্টেশন (Photovoltaic power station) স্থাপন করে। যা কার্বন নির্গমন হ্রাস করবে এবং সবুজ উন্নয়নের দৃষ্টিকোণ থেকে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ নির্মাণে সহায়তা করেছে।
‘চীন ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমনে চূড়ান্ত অবস্থায় পৌঁছাবে এবং ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জনের চেষ্টা’ করছে। এর অর্থ হলো, বিশ্বের বৃহত্তম উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে, চীন স্বল্পতম সময়ের মধ্যে বিশ্বে কার্বন নির্গমনকারী দেশগুলোর মধ্যে ভালো অবস্থায় পৌঁছে যাবে। চীন অব্যাহতভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সহযোগিতা করে, টেকসই উন্নয়ন ও প্রাকৃতিক সভ্যতা নির্মাণে বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিশ্বে ‘নেট জিরো’ অবস্থা বাস্তবায়নে শক্তি যোগাবে।
জিনিয়া/তৌহিদ/শুয়েই