নভেম্বর ১২: ৮ থেকে ১১ নভেম্বর, চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)-র ঊনবিংশ কেন্দ্রীয় কমিটির ষষ্ঠ পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন বেইজিংয়ে আয়োজিত হয়। এবারের অধিবেশনে গৃহীত হয় একটি বিশেষ ‘শত বছরের সংক্ষিপ্তসার’—‘চীনা কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির শত বছরের সংগ্রামে অর্জিত গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য ও ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা’। নিয়ম অনুযায়ী, পুরো প্রস্তাবটি কয়েকদিনের মধ্যে প্রকাশিত হবে।
সিপিসি’র সাধারণ সম্পাদক সি চিন পিং চলতি বছরের পয়লা জুলাই এক ভাষণে বলেছিলেন, ‘আমাদের উচিত সিপিসির শত বছরের সংগ্রাম থেকে এ সত্য উপলব্ধি করতে চেস্টা করা যে, আমরা কেন সফল হয়েছি এবং ভবিষ্যতে কেন ও কিভাবে সফল হতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, বিগত শত বছরে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি চীনা জনগণকে নেতৃত্ব দিয়ে যা-কিছু ত্যাগ স্বীকার করেছে, যা-কিছু উদ্ভাবন করেছে, যা-কিছু অর্জন করেছে—তার একটিই লক্ষ্য ছিল: চীনা জাতির মহান পুনরুত্থান।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ষষ্ঠ পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের ইস্তাহার থেকে আমরা যেন একটি ‘টাইম টানেলে’ প্রবেশ করতে পারি। এতে বলা হয়েছে:
নতুন গণতান্ত্রিক বিপ্লবের সময়, সিপিসি জনগণকে নেতৃত্ব দিয়ে চীনা জাতির মহান পুনরুত্থানের জন্য মৌলিক সামাজিক পরিবেশ তৈরি করেছে;
সমাজতন্ত্রের বিপ্লবের সময় সিপিসি জনগণকে নেতৃত্ব দিয়ে আত্মনির্ভরশীল করেছে এবং চীনা জাতির মহান পুনরুত্থানের জন্য মৌলিক রাজনৈতিক ও ব্যবস্থাগত ভিত্তি স্থাপন করেছে;
সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ এবং সমাজন্ত্রের আধুনিকায়নের যুগে, সিপিসি জনগণকে নেতৃত্ব দিয়ে তাদের চিন্তার দৈন্যতা দূর করেছে; চীনা জাতির মহান পুনরুত্থানের জন্য প্রাণচঞ্চল ব্যবস্থাগত নিশ্চয়তা এবং দ্রুত উন্নয়নের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে;
সিপিসির অষ্টাদশ জাতীয় কংগ্রেসের পর থেকে চীনের বৈশিষ্ট্যময় সমাজতন্ত্র নতুন যুগে প্রবেশ করে। সিপিসি জনগণকে নেতৃত্ব দিয়ে চীনা জাতির মহান পুনরুত্থানের মহান লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
ঊনবিংশ কেন্দ্রীয় কমিটির ষষ্ঠ পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন পাঁচটি ক্ষেত্রে সিপিসির শত বছরের সংগ্রামের সাফল্য তুলে ধরা হয়: সিপিসি চীনা জনগণের ভাগ্যকে আমূল পরিবর্তন করেছে; চীনা জাতির মহান পুনরুত্থানের সঠিক পথ উন্মোচন করেছে; মার্কসবাদের জীবনীশক্তি ফুটিয়ে তুলেছে; গভীরভাবে বিশ্বের ইতিহাসের প্রক্রিয়ার ওপর প্রভাব ফেলেছে; এবং যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সিপিসির সামর্থ্য প্রমাণ করেছে।
অধিবেশনে সিপিসির শত বছরের সংগ্রামের ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতার পর্যালোচনা করা হয়েছে এভাবে: সিপিসির নেতৃত্বে অবিচল থাকা, জনগণকে শীর্ষস্থানে রাখা, নতুন নতুন তত্ত্বের উদ্ভাবন করা, স্বাধীনতায় অবিচল থাকা, চীনের বৈশিষ্ট্যময় পথে অবিচল থাকা, বিশ্বমুখী মনোভাব পোষণ করা, উদ্ভাবনে অবিচল থাকা, সংগ্রাম অব্যাহত রাখা, যুক্তফ্রন্টে অবিচল থাকা, আত্মসংস্কারে অবিচল থাকা।
ষষ্ঠ পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন ১৩টি দিক থেকে শত বছরে সিপিসি ও দেশের অর্জিত সাফল্যকে তুলে ধরা হয়েছে:
অর্থনীতির ক্ষেত্রে: চীনের অর্থনীতির ভারসাম্যপূর্ণ, সমন্বিত ও টেকসই উন্নয়ন সাধিত হয়েছে;
সংস্কৃতির ক্ষেত্রে: চীনাদের মতাদর্শে সার্বিক পরিবর্তন ঘটেছে;
প্রাকৃতিক সভ্যতার ক্ষেত্রে: চীনে প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক পরিবর্তন ঘটেছে;
দেশের নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রে: চীন রাজনীতি, অর্থনীতি, মতাদর্শসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে; চীন হংকং বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলের পরিস্থিতিকে সুশৃঙ্খল করতে সক্ষম হয়েছে; দৃঢ়ভাবে তাইওয়ান প্রণালীর দু’তীরের সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটিয়েছে।
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেছিলেন, চীনা জনগণের সুখী জীবনের জন্য কাজ করা, চীনা জাতির মহান পুনরুত্থানের লক্ষ্য সবসময় মনে রাখা হল সিপিসির শত বছরের সংগ্রামের মূল বিষয়।
এ ছাড়া, ঊনবিংশ কেন্দ্রীয় কমিটির ষষ্ঠ পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে ‘সিপিসির কুড়িতম জাতীয় কংগ্রেস আয়োজনের প্রস্তাব’ গৃহীত হয়েছে। এ প্রস্তাব অনুযায়ী, আগামী বছরের দ্বিতীয়ার্ধে কুড়িতম জাতীয় কংগ্রেস আয়োজিত হবে। (শুয়েই/আলিম/জিনিয়া)