আজহার লিমন, ঢাকা: বিশ্বব্যাংক বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে বাস্তচ্যুত হবে বাংলাদেশের প্রায় দেড় কোটি মানুষ। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্থ এই মানুষগুলোর অভিযোজন এবং ক্ষতিপূরণের জন্য অর্থায়নের অঙ্গীকার আছে দায়ী দেশগুলোর। কিন্তু প্রতিশ্রুত অর্থছাড় তারা করেছে কি? গ্লাসগো জলবায়ু সম্মেলনেই বা কতটা ভবিষত আছে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর?
ফাতেমা বেগম
আমাদের কথা হচ্ছিলো ফাতেমা বেগমের সঙ্গে বাংলাদেশের শেষ সীমানার জেলা সাতক্ষীরার শ্যামনগরের সাগরপাড়ের গ্রাম নীলডুমুর খেয়াঘাটে বসবাস তার। কয়েক পুরুষ ধরে প্রকৃতিক দুর্যোাগের সঙ্গে যুদ্ধ করে জীবন যাপন করা ফাতেমা বেগম বলছিলেন, ঝড় বৃষ্টির মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাটিয়ে ওঠা গেলেও, খাবার পানির সংকট কাটিয়ে ওঠা সহজ নয়।
এ বৃদ্ধা বলছিলেন, “কাছে কোন পানি নেই। পুকুরের পানি নোনা। ঐ যা থাল বাটি ধোয়া যায়।”
এ গ্রামের নলকূপগুলেঅর পানিও লবনাক্ত। অথচ দৈনন্দিন জীবনে একধরনের স্থায়ী ভোগান্তি যোগ হওয়া এসব মানুষেরা ঠিকভাবে জানেন না, ঠিক কী কারণে এমন হচ্ছে। তবে তাদের অভিজ্ঞতা অনুভূতি, কোন একটা পরিবর্তন হচ্ছে।
আমেনা খাতুন নামে একজন বলেন, “আমাদের টিকে থাকাটাই খুব কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা, দুর্যোগ এলাকা। আমাদের যখন বর্ষা হয়, ডুবে মরতে হয়, তখন গরম আসে, তখন গরমে টেকা যায় না।”
আমিনা খাতুন
এভাবে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বদ্বীপ বাংলাদেশের সমুদ্রউপকূলবর্তী জেলাগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের স্পষ্ট প্রভাব পড়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। আর এ কারণে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষেরাও ছেড়ে যাচ্ছে ভিটেমাটি। ফলে প্রতিবছর শহরের বস্তিগুলোকে বাড়ছে সব হারানো মানুষের সংখ্যা, বাড়ছে দারিদ্র, অভাব। বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস, ২০৫০ সাল নাগাদ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বা্সতুচ্যুত হওয়ায় শঙ্কায় আছে বাংলাদেশের দেড় কোটি মানুষ। কিন্তু এর জন্য কতটা দায়ী বাংলাদেশ। জানতে চেয়েছিলাম, ঢাকা বিশ্ববিদালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট এন্ড ভালনারেবল স্টাডিজের শিক্ষক অধ্যাপক ড. খন্দকার মোকাদ্দেম হোসাইনের কাছে।
জলাবায়ু অর্থায়ন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিবছর অভিযোজন এবং ক্ষতিপূরণ বাবদ আড়াই থেকে ৩ বিলিয়ন ডলার অর্থ প্রয়োজন জলবায়ু ঝুকিতে থাকা বাংলাদেশের। ক্ষতিগ্রস্থ অন্যান্য দেশের মত এখাত থেকে প্রতিশ্রুত এ অর্থ যেমন পাচ্ছে না বাংলাদেশ, তেমনি ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীর তাপামাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনার অঙ্গীকার থাকলেও, ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম সিভিএফের এক প্রতিবেদন বলছে, শিল্পোন্নত দেশগুলো যে হারে কার্বন নিঃসরণ করছে তাতে এই উষ্ণতা উল্টো ২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে।
সম্পাদনা: সাজিদ রাজু