নভেম্বর ১১: গত ৮ নভেম্বর বেইজিংয়ে শুরু হওয়া চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) ১৯তম কেন্দ্রীয় কমিটির ষষ্ঠ পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন আগামিকাল বৃহস্পতিবার শেষ হবে। সিপিসি প্রতিষ্ঠার ১০০তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে সম্মেলনটি আয়োজিত হয়েছে। ইতোমধ্যে এটি আন্তর্জাতিক সমাজের ব্যাপক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। আজকের টপিক অনুষ্ঠানে আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করবো।
সম্মেলনের আলোচ্যসূচি অনুসারে সিপিসি কেন্দ্রীয় কমিটির পলিটব্যুরো কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে তাদের কাজের রিপোর্ট পেশ করেছে। সম্মেলনটি এক শতাব্দীর সংগ্রামে সিপিসির প্রধান অর্জন এবং ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতার একটি সারসংক্ষেপ তৈরি করছে। সম্মেলনটি ‘সংগ্রামের শতাব্দীতে পার্টির প্রধান অর্জন এবং ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা সংক্রান্ত খসড়া প্রস্তাব’ যাচাই করছে।
বিখ্যাত ব্রিটিশ গণমাধ্যম ‘গার্ডিয়ান’ বিশ্লেষকদের উদ্ধৃত করে বলেছে, সম্মেলনটি দলের ইতিহাসের উপর একটি প্রস্তাব তৈরি করবে, যা আগামী দশকগুলোতে দেশীয় রাজনীতি ও সমাজকে প্রভাবিত করবে।
সুইস সংবাদমাধ্যম ‘নিউ জুরিখ নিউজ’ তার বিশ্লেষণে বলেছে, চীন ‘টার্বোচার্জ ডেভেলপমেন্ট রুট’কে বিদায় জানাতে চায়, তাই এই পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনটি অর্থনীতি, মানুষ এবং পরিবেশের মধ্যে আরও ভাল ভারসাম্য নিয়ে আলোচনা করতে পারে।
সিপিসির গত ১০০ বছরের ইতিহাস সম্পর্কে ইতালির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক-বিষয়ক অধ্যাপক ফ্যাবিউ প্যারেন্টি বলেন, ১০০ বছর আগে সিপিসি প্রতিষ্ঠার শুরুর দিকে এটি ‘জনগণকে কেন্দ্র করে জনগণকে সেবা দেওয়ার’ মৌলিক লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল। এটি এমন একটি পার্টি, যা চীন এবং বিশ্বকে সংশ্লিষ্ট সমস্যা সমাধানে সাহায্য করতে পারে। তিনি বলেন, সিপিসি চরম দারিদ্র্যদূরীকরণসহ নানা কাজে ধারাবাহিক সাফল্য অর্জন করেছে। এটি চীনা জনগণের বিজয়ের পাশাপাশি সমগ্র মানবজাতির বিজয়। সিপিসি সক্রিয়ভাবে বর্তমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে, যার মধ্যে রয়েছে প্রযুক্তিগত অগ্রগতির জন্য অবিরাম প্রচেষ্টা; তাতে চীনা জাতির মহান পুনরুত্থান নিশ্চিত হবে।
পোলিশ ‘ট্রিবিউন’-এর প্রধান সম্পাদক কাজিনভস্কি বলেছেন, গত কয়েক দশকে চীনের কয়েক মিলিয়ন মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনা হয়েছে, যা প্রমাণ করে, চীনের অর্থনৈতিক নীতি এবং মডেলগুলো উন্মুক্ত এবং সফল। এ ছাড়া, বিশ্বে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অবদান প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বিশ্ব অর্থনীতি এর সুফল পাচ্ছে।
পোল্যান্ড-চীন ফ্রেন্ডশিপ অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান আকানেশকা বলেছেন, গত ১০০ বছরে সিপিসি চীনা জনগণকে তাদের নিজেদের ভাগ্যের উপর পুনরায় নিয়ন্ত্রণ লাভে সফলভাবে নেতৃত্ব দিয়েছে। সিপিসি ইতোমধ্যেই বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশিলতা বজায় রাখায় একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হয়ে ওঠেছে।
আলবেনিয়ার বিশ্বায়ন গবেষণালয়ের কার্যনির্বাহী প্রধান বলেছেন, গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠা থেকে অর্থনীতি, সমাজ, রাজনীতি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে বিশ্বখ্যাত সাফল্য অর্জন করেছে, এটি সিপিসি’র নেতৃত্বের সফলতা। সিপিসি’র সাফল্যের রহস্য নিহিত রয়েছে চীনের নির্দিষ্ট অনুশীলনের সাথে মার্কসবাদের মৌলিক তত্ত্বগুলিকে একত্রিত করা এবং একটি উন্নত জীবনের জন্য মানুষের আকাঙ্ক্ষায় কার্যকরভাবে সাড়া দেওয়া।
ক্রোয়েশিয়ার অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা কলেজের অধ্যাপক এবং চীনা ইস্যু-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ইভিকা বাকোটা মনে করেন, সিসিপি তার ১০০ বছরের ইতিহাসে অন্তত দুটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে । একটি হচ্ছে চীনের কয়েক দশকের মধ্যে একটি কৃষি দেশ থেকে বৈশ্বিক শিল্প ও ব্যবসা খাতের শক্তিশালী দেশে পরিণত হওয়া। আরেকটি হচ্ছে সিপিসি প্রতিষ্ঠার শুরুর দিকে শুধু কয়েক জন সদস্য থেকে বেড়ে বর্তমান ৯ কোটি সদস্যের দলে পরিণত হয়েছে। বিশ্বে এমন একটি দেশ খুব কমই দেখা যায়, যেটি অল্প সময়ের মধ্যে একটি সুস্থ সমাজ গড়তে এত বেশি সংখ্যক মানুষকে নেতৃত্ব দিতে পেরেছে।
(ওয়াং হাইমান/এনাম/ছাই)