নভেম্বর ১১: আজ (বৃহস্পতিবার) চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বেইজিং থেকে ভিডিও-লিংকের মাধ্যমে এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থা (এপেক)-এর শীর্ষ সম্মেলনে ‘টেকসই উন্নয়নে অবিচল থাকা, যৌথভাবে এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের অভিন্ন ভাগ্যের কমিউনিটি গড়ে তোলা’ শীর্ষক ভাষণ দেন।
ভাষণে তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের মহামারী সারা বিশ্বে এখনও ছড়িয়ে পড়ছে। বিশ্বের অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের গতিও খুবই ধীর। এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের উচিত যৌথভাবে, যুগের দায়িত্ব গ্রহণ করে, নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করা এবং এশিয়া ও প্যাসিফিকের অভিন্ন ভাগ্যের কমিউনিটি গড়ে তোলার দিকে এগিয়ে যাওয়া।
প্রেসিডেন্ট সি তাঁর ভাষণে চার-দফা প্রস্তাব দিয়েছেন। এগুলো হচ্ছে:
প্রথমত, মহামারি প্রতিরোধে যথাসাধ্য চেষ্টা চালানো। এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের বিভিন্ন অর্থনৈতিক গোষ্ঠী ও সমাজের বিভিন্ন মহলের উচিত জনগণকে শীর্ষ স্থানে রাখা, মানুষের জীবনকে শীর্ষ স্থানে রাখা, এবং বিজ্ঞানসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মহামারীকে পরাজিত করা।
দ্বিতীয়ত, উন্মুক্তকরণ ও সহযোগিতায় অবিচল থাকা। বিভিন্ন পক্ষের উচিত সক্রিয়ভাবে উন্মুক্তকরণ সম্প্রসারণ করা, বাণিজ্য ও পুঁজি বিনিয়োগের অবাধকরণ ও সুবিধায়ন ত্বরান্বিত করা, শিল্প চেইন ও সরবরাহ চেইনের স্থিতিশীলতা ও সুষ্ঠতা নিশ্চিত করা, এবং অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের গতি বাড়ানো। তিনি বলেন, বিশ্বের পরিস্থিতির যে-পরিবর্তনই ঘটুক না কেন, এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের অর্থনীতি উন্নয়নের শক্তিশালী প্রবণতা অটুট থাকবে। ভবিষ্যৎমুখী মনোভাবে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চল কোনোভাবেই স্নায়ুযুদ্ধের আমলের বৈরিতা ও বিচ্ছিন্নতার অবস্থায় ফিরে যাবে না।
তৃতীয়ত, সবুজ রূপান্তর ত্বরান্বিত করতে হবে। যৌথভাবে সকল পক্ষকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে। তিনি বলেন, সবুজ ও নিম্ন কার্বন উন্নয়নের ধারণা একটি মহান ধারণা। উন্নয়ন ছাড়া সবুজ রূপান্তরের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক শক্তি অর্জন করা যাবে না। জনগণের জীবিকাকে উপেক্ষা করলে, সবুজ রূপান্তরের সামাজিক ভিত্তি হারিয়ে যাবে। আমাদের উচিত, জনগণকে কেন্দ্র করে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি, জনগণের জীবিকার নিশ্চয়তা ও জ্বালানি সাশ্রয় ও কার্বন নির্গমন কমানোর বিষয়গুলো সমন্বয় করা।
চতুর্থত, উদ্ভাবন বাড়াতে হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতের উদ্ভাবন বাড়ানো জরুরি। অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন চালিকাশক্তি লালন করতে হবে। এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের সদস্যদেশগুলোকে বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন খাতে সহযোগিতা জোরদার করতে হবে। বৈজ্ঞানিক উন্নয়নের জন্য উন্মুক্ত, ন্যায়সংগত ও বৈষম্যহীন পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। শিল্প ও বাণিজ্য মহলের উচিত গবেষণা ও বিজ্ঞানের প্রধান শক্তি হওয়া।
সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেন, চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের সহযোগিতার প্রক্রিয়া সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। চীন সময়মতো সার্বিকভাবে সচ্ছল সমাজ গড়ে তুলেছে, সার্বিকভাবে সমাজতন্ত্রের আধুনিকায়ন দেশ নির্মাণের নতুন যাত্রা উন্মোচন করেছে, যা এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য আরও বেশি সুযোগ সৃষ্টি করবে।
সি চিন পিং বলেন, চীন দৃঢ়ভাবে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ ত্বরান্বিত করবে, এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সহায়তা দেবে। চীন উচ্চ মানের বাজারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করছে, গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র ও বিষয়ে সংস্কারের নতুন অগ্রগতি অর্জনের চেষ্টা করছে। চীন উচ্চমানের উন্মুক্তকরণের কাঠানো স্থাপন করছে, স্থায়ীভাবে বাণিজ্যের পরিবেশ সুসংহত করছে।
তিনি বলেন, চীন গণমালিকানাধীন অর্থনীতি উন্নয়নে অবিচল থাকবে, অগণমালিকানাধীন অর্থনীতির উন্নয়নকে উত্সাহ দেবে এবং সমর্থন করবে; সুশৃঙ্খল বাজারব্যবস্থা স্থাপন করবে, অব্যাহতভাবে চীনের অর্থনীতির দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নের ভিত্তি মজবুত করবে, এশিয়া ও প্যাসিফিক এবং বিশ্বের শিল্প ও বাণিজ্য মহলের চীনে পুঁজি বিনিয়োগের জন্য আরো ভালো পরিবেশ সৃষ্টি করবে।
তিনি বলেন, চীন সহযোগিতা ও সকলের কল্যাণের জন্য চেষ্টা করে যাবে। চীন সত্যিকার অর্থের বহুপক্ষবাদে অবিচল থাকবে, সক্রিয়ভাবে বিশ্বের অর্থনৈতিক পরিচালনায় অংশ নেবে, উন্মুক্ত ধরনের বিশ্ব অর্থনীতির নির্মাণকে ত্বরান্বিত করবে। চীন দৃঢ়ভাবে ‘এক অঞ্চল, এক পথের’ উচ্চ মানের নির্মাণকাজ ত্বরান্বিত করবে; বিশ্বের দারিদ্র্যবিমোচন, খাদ্য নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের সহযোগিতা জোরদার করবে; এশিয়া ও প্যাসিফিকের অর্থনীতির পুনরুদ্ধার ও টেকসই উন্নয়নে শক্তি যোগাবে এবং বিশ্ব উন্নয়নের অভিন্ন ভাগ্যের কমিউনিটি গড়ে তুলতে সচেষ্ট থাকবে। (শুয়েই/আলিম/জিনিয়া)