চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)-র শততম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উদ্যাপনী অনুষ্ঠান পালিত হয়েছে খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। এরই মধ্যে সিপিসি’র উনবিংশ কেন্দ্রীয় কমিটির ষষ্ঠ অধিবেশন শুরু হয়েছে গত ৮ নভেম্বর। বেইজিংয়ে শুরু হওয়া চার দিনব্যাপী এ অধিবেশনে সার্বিকভাবে সিপিসি’র শত বছরের গুরুত্বপূর্ণ অর্জন ও ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা আলোচিত হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তসমূহ গৃহীত হবে। “সিপিসি বিগত শত বছরে কেন সফল হয়েছে এবং ভবিষ্যতে কিভাবে এ সাফল্য ধরে রাখা যাবে?’—এ প্রশ্নের উত্তর অধিবেশনে যেমন আলোচিত হবে, তেমনি আন্তর্জাতিক সমাজ এ প্রশ্নের উত্তর পেতে চায়।
চীনা কমিউনস্ট পার্টি কেন সফল হয়েছে? একটা শব্দ আমার মনে হয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেটা হলো মানুষ বা জনগণ। যে জনগণের মন জয় করতে পারে, সে সাফল্য অর্জন করতে পারে। “চীনা মানুষের জন্য সুখী জীবন সৃষ্টি এবং চীন জাতিকে মুক্ত করা” ছিল সিপিসি’র প্রতিষ্ঠার সাংগঠনিক চেতনা। আগেকার চীনা কমিউনিস্ট পার্টি পুরো জাতিকে সংহত করে জাপানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জয়ী হয় এবং কুও মিন তাং পার্টির প্রতিক্রিয়াশীল শাসনের পতন ঘটায়। তারপর চীনে উন্মুক্তকরণ ও সংস্কার নীতি প্রণয়ন করে চীনা জাতিকে দ্রুত উন্নয়নের পথে নিয়ে যায় সিপিসি। বর্তমানে চীন সচ্ছল সমাজ গড়ে তুলেছে এবং সার্বিকভাবে সমাজতান্ত্রিক আধুনিক দেশ গড়ে তোলার পথে এগুচ্ছে। গত এক বছরে সিপিসি মানুষের স্বার্থে নানান সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এবারের উনবিশ কমিটির ষষ্ঠ অধিবেশনেও মানুষকে আগ্রাধিকার দেওয়া হবে। মার্কিন সাংবাদিক থিওডোর হ্যারল্ড হোয়াইট ও অ্যানালি জ্যাকবি’র লেখা Thunder Out of China শীর্ষক বইয়ে বলা হয়েছে: “সিপিসি কোনো ম্যাজিক জানে না। তারা কেবল জানে মানুষ কেমন পরিবর্তন চায়। তারা সে পরিবর্তন ঘটিয়ে থাকে।” চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সিপিসি’র শততম বার্ষিকীর উদযাপনী অনুষ্ঠানে বলেন, সিপিসি বরাবরই মানুষের মূল স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে। সিপিসি ও চীনা মানুষ বাঁচা-মরায় পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। সিপিসি’র সদস্যরা নিজেদের আন্তরিকতা, পরিশ্রম ও উত্সর্গীকরণের মধ্য দিয়ে মানুষের সঙ্গে রক্তাক্ত বন্ধন সৃষ্টি করেছে। মানুষের বাস্তব সুখী জীবন সৃষ্টি করেছে সিপিসি, যা মানুষের মন ও ভালোবাসা জয় করেছে।
শুধু চীনা মানুষ নয়। সিপিসি বিশ্ববাসীর শান্তি ও অগ্রগতির জন্য চেষ্টা চালিয়ে আসছে। “মানবজাতির অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট কমিউনিটি গঠন করা” বিশ্বের বৃহত্তম ক্ষমতাসীন পার্টি-সিপিসির কূটনৈতিক চেতনা। গত ২০১৩ সালে সিপিসি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সি চিন পি এই উদ্যোগ উত্থাপন করেন। এর পর থেকে চীন বিভিন্ন ক্ষেত্রে এ উদ্যোগের চেতনায় বিশ্ববাসীর স্বার্থ সাধনে বাস্তব কার্যক্রম চালিয়েছে। বিশেষ করে কোভিড ১৯ মহামারির প্রাদুর্ভাবের পর অভ্যন্তরীণ প্রকোপ দ্রুত নিয়ন্ত্রণে এনে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি অন্য দেশকে মহামারি প্রতিরোধে সহযোগিতা করেছে চীন। বর্তমানে চীন বাংলাদেশসহ ১০০টিরও বেশি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাকে ১৫০ কোটি ডোজ টিকা সরবরাহ করেছে। কোভ্যাক্সে ১০ কোটি মার্কিন ডলার অর্থ দেওয়ার ভিত্তিতে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আরও ১০ কোটি ডোজ উপহার হিসেবে টিকা সরবরাহ করবে। তাতে মানবজাতির অভিন্ন স্বার্থের কমিউনিস্ট গঠনের চেতনার বাস্তব প্রতিফলন ঘটবে।
বরাবরই মানুষকে সবকিছুর ওপর অগ্রাধিকার দেওয়া, নিজ দেশের মানুষ ও বিশ্ববাসীর জীবন ও স্বাস্থ্যকে অধিকার দেওয়া হচ্ছে সিপিসি’র আদর্শ ও মূল্যবোধ। এটিই তার বর্তমান সাফল্য এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কারণ। (রুবি/আলিম)