বন্ধুরা, চীনের দারিদ্র্যবিমোচন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের একটি পদ্ধতি হলো ‘একের সাহায্যে এক’। মানে, একটি উন্নত অঞ্চল অন্য একটি দরিদ্র অঞ্চলকে সাহায্য করবে। আজকের অনুষ্ঠানে আমি আপনাদেরকে ফোশানের সাহায্যে লিয়াংশানের দারিদ্র্যমুক্তির গল্প শোনাবো।
২৫ বছর বয়সী তরুণ হাইলাইফুথিয়ে খুব ভোরে কাজ শুরু করেন। গত বছরের প্রথম দিকে তিনি কুয়াংতং প্রদেশের ফোশান শহরের শুনদ্য শেফ একাডেমির ‘নির্মূল দারিদ্র্যবিমোচন প্রশিক্ষণ’ গ্রহণ করেন। তারপর তিনি নিজের জন্মস্থান সিছুয়ান প্রদেশের লিয়াংশা ই জাতির স্বায়ত্তশাসিত বান্নারের মেইগু জেলার গেমু গ্রামে ফিরে এসে স্যিইউয়ান নামের প্রাকৃতিক খামার প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি গ্রামসাবীদেরকে নিয়ে দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছেন।
এদিকে লিয়াংশান বান্নারের মুলি তিব্বতী জাতির স্বায়ত্তশাসিত জেলার দংজি গ্রামের লি ওয়ান মিং ফোশান শহরের গাওমিং এলাকার গেংহ্য থানার একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করেন। তিনি বলেন, “আমি ও আমার স্ত্রীর মাসিক বেতন ১০ হাজার ইউয়ানের বেশি। এটি আমাদের জন্মস্থানের গড় বার্ষিক আয়ের চেয়েও বেশি।” দুই বছর আগে তিনি ও স্ত্রী সুলাংলামু ফোশান জিনবাইছুন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কোম্পানিতে কাজ শুরু করেন। তাঁর প্রবীণ কন্যাও ফোশানের বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে।
চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) অষ্টাদশ জাতীয় প্রতিনিধি সম্মেলনের পর দারিদ্র্যবিমোচন পরিকল্পনা বাস্তবায়নকাজ চালু হয়। ফোশান শহরের সাহায্যে লিয়াংশানের ১১টি দরিদ্র জেলার ৪০ হাজার জনেরও বেশি বাসিন্দা কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছেন এবং দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছেন।
জানা গেছে, ফোশান পৃথক পৃথকভাবে ৫১ জন সিপিসি’র সদস্য ও ৪৭২ জন পেশাদার ব্যক্তিকে লিয়াংশানে পাঠিয়েছে। ২০১৬ সালের ২০ জুলাই সিপিসির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সি চিন পিং নিংস্যিয়া হুই জাতির স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চল সহযোগিতার সেমিনারে বলেন, পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে সহযোগিতা করে অভিন্ন উন্নয়ন বাস্তবায়ন করতে হবে।
গভীর দরিদ্র অঞ্চল হিসেবে লিয়াংশান ছিল চীনের দশটি সবচেয়ে দরিদ্র জেলার একটি এবং ১০০ শতাংশ দরিদ্র এমন ৬টি জেলার মধ্যে চতুর্থ স্থানে। ২০১৬ সালের অগাষ্ট মাসে ফোশান শহরের সাত জন ক্যাডার লিয়াংশান দারিদ্র্য সহযোগিতা কর্মগ্রুপ লিয়াংশানে আসেন। পাঁচ বছরে ফোশান টানা লিয়াংশানে দারিদ্র্যবিমোচনের জন্য ২.৪১৪ বিলিয়ন ইউয়ান বরাদ্দ করে। এরপর ফোশান পৃথক পৃথকভাবে লিয়াংশানে ৫১ জন সিপিসি’র ক্যাডার ও ৪৭২ জন পেশাদার ব্যক্তিকে পাঠায়।
লিয়াংশানের কর্মী বলেন, ফোশানের ক্যাডাররা খুবই পরিশ্রমী। তারা সহজে বিশ্রাম নেন না। আসলে লিয়াংশান দারিদ্র্যবিমোচনের কাজ কল্পনার চেয়েও অনেক কঠিন ছিল। লিয়াংশান পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত। প্রাকৃতিক পরিবেশ খারাপ। উন্নয়নের সামর্থ্যও কম। ২০১৬ সালের শেষ দিকে লিয়াংশানে আরও ১৬১৮ দরিদ্র গ্রাম ছিল।
‘প্রথম দিকে স্থানীয় বাসিন্দারা আমাদেরকে বিশ্বাস করছিলেন না।’ বললেন ফোশান শহরের ডেপুটি মেয়র গে ছেং শু। তিনি লিয়াংশানে দারিদ্র্যবিমোচন সহযোগিতা কর্মগ্রুপের প্রথম প্রধান ছিলেন। ‘তখন আমাদের কাজ অনেক কঠিন ছিল’, তিনি বলেন।
২০১৬ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ফোশান শহরের ৭৭টি প্রতিষ্ঠান টানা লিয়াংশানে আট বার নিয়োগ মেলা আয়োজন করে। কিন্তু খুবই কম স্থানীয় বাসিন্দা অংশ নেয়। তাঁরা বাইরে কাজ করতে চান না। কিন্তু ফোশান ও লিয়াংশানের পৌর সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের ব্যাখ্যা শুনে ও সুবিধাজনক পরিষেবার কারণে স্থানীয় বাসিন্দারা ফোশানে গিয়ে কাজ করা শুরু করেন। ২০১৮ সালে ৫ হাজারেরও বেশি লিয়াংশানের বাসিন্দা ফোশানে গিয়ে কাজ করেন।
এ ছাড়াও, পাহাড়ি এলাকা থেকে ভালো এলাকায় স্থানান্তর পদ্ধতিতে স্থানীয় বাসিন্দারা নতুন বাড়িঘর পেয়েছেন। তাদের আবাসিক এলাকায় সাংস্কৃতিক চত্বর, জাদুঘর ও বিনোদন কেন্দ্র নির্মিত হয়েছে। সড়কসহ বিভিন্ন অবকাঠামো অনেক উন্নত হয়েছে।
২০১৯ সালে ফোশান দারিদ্র্যবিমোচন কর্মগ্রুপ ‘জাতীয় দারিদ্র্যবিমোচন সংস্থার নব্যতাপ্রবর্তন পুরস্কার’ লাভ করে। ২০২০ সালের নভেম্বরে লিয়াংশানের মোট ১১টি দরিদ্র জেলা দারিদ্র্যমুক্ত হয়। গত ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় দারিদ্র্যবিমোচন সংক্ষিপ্তসার এবং প্রশংসা সম্মেলনে ফোশান গ্রুপ জাতীয় মর্যাদা পায়।
উল্লেখ্য, ফোশান শহরের ৯৬টি প্রতিষ্ঠান লিয়াংশানে বিনিয়োগ করেছে এবং ৪০০ বেশি শিল্প পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে। বর্তমানে স্থানীয় দারিদ্র্যবিমোচন পরিকল্পনা গ্রামের পুনরুজ্জীবন পরিকল্পনায় রূপান্তরিত হয়েছে। ফোশান অব্যাহতভাবে লিয়াংশানকে সহায়তা করে যাচ্ছে।
নতুন পর্যায়ে ফোশান লিয়াংশানের সঙ্গে আরও গভীরভাবে সহযোগিতা চালাবে। ফোশান লিয়াংশানের সমৃদ্ধ জ্বালানিসম্পদ ব্যবহার করে শিল্প ক্ষেত্র নির্মাণ করেছে। ফোশানের সমর্থনে লিয়াংশানে ৩১টি কৃষি উদ্যান নির্মিত হয়েছে। সবুজ কৃষি চাষ, প্রাকৃতিক পর্যটন ও কৃষি পণ্য উত্পাদনের শিল্প উন্নত হয়েছে। এ ছাড়াও, ই-কমার্স, ডিজিটাল বাণিজ্য ও বিক্রয়ের মাধ্যমে লিয়াংশানের বৈশিষ্ট্যময় কৃষিপণ্য কুয়াংতং, হংকং ও ম্যাকাও এমনকি আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রয় হবে।
গত বছর ফোশানের সহায়তায় লিয়াংশান অনলাইন ও অফলাইন মেলা আয়োজন করে। এবারের মেলায় বিক্রয়ের পরিমাণ ছিল ১২.৬ কোটি ইউয়ান। লিয়াংশানের কৃষি বাগান বর্তমানে কুয়াংতং, হংকং, ম্যাকাও উপসাগরীয় অঞ্চলের কৃষিপণ্যের ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে।
ফোশান ও লিয়াংশানের সহযোগিতায় লিয়াংশানের কৃষি ব্রান্ড জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ফোশান শহরের সিপিসি’র কমিটির সম্পাদক লু ই বলেন, পূর্ব ও পশ্চিমের সহযোগিতার ব্যবস্থা আরও উন্নত করতে হবে। দারিদ্র্যবিমোচন পরিকল্পনার সাফল্য কাজে লাগিয়ে গ্রামের পুনরুজ্জীবন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যেতে হবে।