যুক্তরাজ্যের গ্লাসগোতে জাতিসংঘের জলবায়ুবিষয়ক শীর্ষসম্মেলন কপ২৬ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলনে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে অংশ নেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। অনুষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট। বৈশ্বিক নানা দুর্যোগের কারণ হিসেবে ইতোমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনকেই মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। এমনই সময় প্রকাশিত এক রিপোর্টে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলে নিয়মিত ভয়াবহ দাবানলের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনই দায়ী।
পয়লা নভেম্বর যুক্তরাজ্যের স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে জাতিসংঘের বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন বা কপ২৬ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনায়কদের পাশাপাশি চীন ও রাশিয়ার নেতা ভিডিও লিংকের মাধ্যমে এতে যোগদান করেন। বিশ্বের ক্ষতিকর কার্বনডাই অক্সাইড গ্যাস নিঃসরণ কমাতে বিশ্বনেতারা কী পদক্ষেপ নেবেন- সেদিকেই দৃষ্টি ছিল বিশ্ববাসীর।
বর্তমান বিশ্বে কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণকারী প্রধান দেশ যুক্তরাষ্ট্র। এরপর রয়েছে চীন। তালিকায় আছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও ভারত। পঞ্চম অবস্থানে আছে রাশিয়া।
এর আগে, ২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে বিশ্বনেতারা একমত হয়েছিল যে- তাঁরা বিশ্বের তাপমাত্রার দ্রুতগতির বিপজ্জনক বৃদ্ধি ঠেকানোর জন্য কার্বন নির্গমনের হার কমাবে।
সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। ভাষণে প্রেসিডেন্ট সি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, বিশ্ব অর্থনীতির পুনরুদ্ধার জোরদার করাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে চীনের প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। তিনি বলেছেন, বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাব দিনদিন স্পষ্ট হয়ে উঠছে। বৈশ্বিক কার্যক্রমের প্রয়োজনীয়তা ক্রমেই বাড়ছে।
চীনা প্রেসিডেন্ট এ সময় জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং বিশ্ব অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে তিনটি প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, বহুপাক্ষিক মতৈক্য রক্ষা, বাস্তব পদক্ষেপের ওপর মনোযোগ দেওয়া এবং সবুজ রূপান্তর দ্রুততর করা দরকার। চীনা প্রেসিডেন্ট জোর দিয়ে বলেন, চীন পরিবেশকে অগ্রাধিকার দেয় এবং সবুজ ও নিম্ন-কার্বন উন্নয়নের প্রতি জোর দেয়। পাশাপাশি দ্রুত সবুজ ও নিম্ন-কার্বনের আবর্তনশীল উন্নয়নের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে। তিনি বলেন, শিল্প কাঠামোগত সমন্বয় জোরদার করে ব্যাপক টেকসই জ্বালানি উন্নয়নে বৃহদাকার বায়ুশক্তির ফটোভোলটাইক প্রকল্প নির্মাণ করেছে চীন। চীন বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং যৌথভাবে মানবজাতির অভিন্ন বাসস্থান রক্ষা করবে।
উল্লেখ্য চীনে কার্বন নির্গমন সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছাবে ২০৩০ সালে। এই সময়ের মধ্যে চীনের শক্তি উৎপাদনের ২৫ শতাংশ আসবে ফসিলজাত নয়- এমন সব জ্বালানি থেকে। চীন অঙ্গীকার করছে যে, ২০৬০ সালের মধ্যে দেশটি 'কার্বন-নিরপেক্ষ' হবে। প্রধানত কয়লা নির্ভরতার কারণে চীনের কার্বন নির্গমন বাড়ছে। এ কারণে গত মাসে প্রেসিডেন্ট সি ঘোষণা করেন যে, চীন নতুন করে আর কোনও কয়লাভিত্তিক প্রকল্পে অর্থায়ন করবে না।
একই সময় নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি ঘটিয়েছে চীন। পৃথিবীতে এখন যত সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় তার এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি হয় চীনে। সেই সঙ্গে রয়েছে বায়ুচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন। এই খাতে চীন এখন পৃথিবীতে শীর্ষ স্থানে রয়েছে। চীনের এসব বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ তার লক্ষ্য অর্জনে আশার আলো দেখিয়েছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ২০৩০ সালের মধ্যে ২০০৫-এর মানের অর্ধেক কার্বন ডাইঅক্সাইড কমাবে বলে জানিয়েছে। ইইউ অঙ্গীকার করেছে ১৯৯০-এর মান থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন ৫৫ শতাংশ কমানো হবে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে সবচেয়ে বড় কার্বন নির্গমনকারী দেশগুলো হচ্ছে জার্মানি, ইতালি এবং পোল্যান্ড। ভারতের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে নির্গমনের মাত্রা ৩৩-৩৫% কমিয়ে আনা। রাশিয়া ২০৩০ সালের মধ্যে নির্গমন ৩০% কমানোর কথা বলেছে। তারা অঙ্গীকার করেছে, ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন-নিরপেক্ষ হবে রাশিয়া।
এদিকে সদ্য প্রকাশিত এক জলবায়ু রিপোর্টে দেখা গেছে পশ্চিম যুক্তরাষ্ট্রে নিয়মিত ভয়াবহ দাবানলের কারণ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা। মানুষের বিবেচনাহীন কাজের ফলে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে এবং বনভূমি পুড়ে ছাই হচ্ছে।
জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের মতে, মানুষের কার্যক্রমের কারণে সৃষ্ট গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ বৃদ্ধি পাওয়ায় এরই মধ্যে পৃথিবী প্রায় ১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণ হয়েছে। যা গত ৫০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ উষ্ণতার রেকর্ড।
তাই বিশ্বের দেশগুলো তাদের কথা না রাখলে ভয়াবহ বিপদে পড়তে পারে মানবজাতি। যার প্রধান ভুক্তভোগী হবে বিশ্বের সাধারণ মানুষ।