জি-২০ জোটের শীর্ষসম্মেলনে প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি হিসাব
2021-11-05 19:56:09

অক্টোবরের শেষ দুই দিন ইতালির রোমে অনুষ্ঠিত হয় জি-২০ দেশসমূহের নেতাদের ১৬তম শীর্ষসম্মেলন। দুদিনব্যাপী এই সম্মেলন অনলাইন ও অফলাইনে অনুষ্ঠিত হয়। এবারের সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন ও করোনা মহামারি ইস্যু গুরুত্ব পায়। সম্মেলন শেষে ‘জি-২০ নেতাদের রোম শীর্ষসম্মেলন ঘোষণা’ গৃহীত হয়। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ভিডিও সংযোগের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন।

 

করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হওয়ার পর এই প্রথম সরাসরি অংশগ্রহণের মাধ্যমে জি-২০ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। বিশ্ব নেতাদের সম্মেলনের আগে জি-২০ভুক্ত দেশগুলোর অর্থ ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীরা আলোচনা করেন। অর্থমন্ত্রীরা রোমে সরাসরি বৈঠক করলেও স্বাস্থ্যমন্ত্রীরা করেন ভিডিও লিংকের মাধ্যমে।

এবারের শীর্ষসম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক সমাজের যৌথভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ইচ্ছা আরও বাড়ছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া। প্রধানত জলবায়ু পরিবর্তন, জ্বালানি এবং টেকসই উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে মন্তব্য করেছেন। পাশাপাশি করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ভ্যাকসিনের ন্যায্য বণ্টনের কথাও উঠে এসেছে। এতে উন্নয়নশীল দেশসমূহের যৌথ গবেষণা ও তাদের টিকা সরবরাহসহ ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা রয়েছে।

ভাষণে মানবজাতির বর্তমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় চীনের পক্ষ থেকে ৫টি প্রস্তাব দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট সি। এতে একটি বড় দেশের দায়িত্বশীল মনোভাব ফুটে উঠেছে। চীনের এসব প্রস্তাব দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংস্থার দায়িত্ব পালনে সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়।

প্রস্তাবগুলো হলো- ঐক্যবদ্ধ হয়ে সহযোগিতা করা, হাতে হাত রেখে মহামারি প্রতিরোধ করা, সমন্বয় জোরদার করা, পুনরুদ্ধারের গতি বাড়ানো, যৌথ উন্নয়ন, সুষম সহাবস্থান এবং সবুজ ও টেকসই উন্নয়ন এগিয়ে নেওয়া। এসব প্রস্তাব বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বার্থ বিবেচনা করে মানবজাতির যৌথ উন্নয়নের জন্য দিক-নির্দেশনা দিয়েছে।

এ ছাড়া, বর্তমান বিশ্বের অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানে জি-২০ গোষ্ঠীর করণীয় সম্পর্কেও প্রস্তাব দেন চীনের প্রেসিডেন্ট। চীন জোর দিয়ে বলেছে যে, জি-২০ সদস্যের উচিত সামষ্টিক আর্থিক নীতির সমন্বয় জোরদার করা এবং নীতিগত স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা উচিত্। পাশাপাশি চীনের প্রস্তাবে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকে কেন্দ্র করে বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ব্যবস্থাকে রক্ষা করা এবং উন্নয়নশীল দেশের স্বার্থ ও উন্নয়নের সুযোগ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।

জি-২০-এর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক গোষ্ঠী হিসেবে, চীন অব্যাহতভাবে উন্মুক্তকরণ বাস্তবায়ন করবে এবং নিজের উন্নয়নের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশকে আরও বেশি সুযোগ দেবে।

সম্মেলন শেষে ‘জি-২০ নেতাদের রোম শীর্ষসম্মেলন ঘোষণা’ গৃহীত হয়। এবারের সম্মেলনের লক্ষ্য ছিল সবচেয়ে জরুরি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, সম্মিলিতভাবে কোভিড-১৯ সংকট অতিক্রম, এবং জি-২০ সদস্য দেশ এবং সারা বিশ্বে সবুজ ও ন্যায়সঙ্গত প্রবৃদ্ধি বেগবান করা।  পাশাপাশি, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় চিকিত্সা কর্মী, ফ্রন্ট-লাইন কর্মী, এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিজ্ঞানীদের নিরলস প্রচেষ্টার জন্য ধন্যবাদ জানানো হয়।

২০২১ সালে টিকার ব্যাপক গ্রহণ এবং ধারাবাহিক নীতিগত সমর্থনের কারণে বিশ্ব অর্থনীতির স্থিতিশীল পুনরুদ্ধার শুরু হয়। মহামারী মোকাবিলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হিসেবে টিকা গুরুত্ব পায়। বিশেষ করে, মাঝারি ও নিম্ন আয়ের দেশে টিকার চাহিদা ক্রমেই বাড়তে থাকে।

 

রোম ঘোষণায় কোভিড-১৯ এর প্রভাবে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর প্রভাব নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। জি-২০ দেশসমূহ জাতিসংঘ ২০৩০-এজেন্ডা তথা টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়নে কর্ম পরিকল্পনা কার্যকর জোরদার করবে বলে ঘোষণায় উল্লেখ করা হয়। পাশাপাশি, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় ‘জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তনের কাঠামো কনভেনশন’ এবং ‘প্যারিস চুক্তি’ কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করার উপর জোর গুরুত্ব দিয়েছে জি-২০ নেতারা। তবে, এসব জোটের দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানোর ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রতিশ্রুতি দিতে ব্যর্থ হয়েছে। শীর্ষ সম্মেলনে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দরিদ্র দেশগুলোকে সহায়তা দিতে জি-২০ ভুক্ত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।

উল্লেখ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বিশ্বের ১৯টি শিল্পোন্নত দেশকে নিয়ে জি২০ গ্রুপ গঠিত হয়েছে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী পরিবেশ দূষণের শতকরা ৮০ ভাগের জন্য জি২০ গ্রুপ দায়ী।