আমদানি মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট সি’র গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ
2021-11-05 16:42:14

নভেম্বর ৫:গতকাল (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ভিডিও সংযোগের মাধ্যমে চতুর্থ চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এক গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দিয়েছেন। 

সি চিন পিং বলেন, চীন দৃঢ়ভাবে প্রকৃত বহুপক্ষবাদ রক্ষা করবে, বিশ্বের সাথে বাজারের সুযোগসুবিধা ভাগাভাগি করবে, উচ্চ মানের উন্মুক্তকরণ এগিয়ে নেবে এবং বিশ্বের অভিন্ন স্বার্থ রক্ষা করবে। 
 
সি চিন পিং বলেন, ‘চতুর্থ চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলায় অংশগ্রহণকারী অনেক অতিথি, এবং নতুন ও পুরাতন বন্ধুদের সাথে অনলাইনে একত্রিত হতে পেরে আমি অনেক খুশি। তৃতীয় চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলায় আমি উন্মুক্তকরণ আরো সম্প্রসারণে যে সব ঘোষণা দিয়েছিলাম, সে সব ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে’। 

সি চিন পিং বলেন, “করোনা মহামারীর প্রভাব মোকাবিলা করে চীন বিদেশি বাণিজ্যের উদ্ভাবনী উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে চলছে। চীন হলো গত বছরের একমাত্র পণ্য বাণিজ্য বৃদ্ধিকারী বৃহত অর্থনীতি। চীন বিশ্বের শিল্প চেইনের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এগিয়ে নেয়ায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। একতরফাবাদ ও সংরক্ষণবাদ বর্তমানে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠছে; অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের উচিত অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন উন্নয়নের বড় প্রবণতার সাথে অনুসরণ করা, একতরফাবাদ ও সংরক্ষণবাদের বিরোধিতা করা এবং মানবজাতির আরো সুন্দর ভবিষ্যত নিশ্চিতে কাজ করা।”
 
সি চিন পিং বলেন, উন্মুক্তকরণ হচ্ছে সমসাময়িক চীনের একটি বৈশিষ্ট্য। চলতি বছর হচ্ছে চীনের বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় অংশগ্রহণের ২০তম বার্ষিকী। গত ২০ বছরে চীন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় অংশগ্রহণের সময় যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তার সবই বাস্তবায়ন করেছে এবং উন্মুক্তকরণ সম্প্রসারণ করছে। এই বিশ বছর হলো চীনের সংস্কার আরো গভীরতর করা ও সার্বিক উন্মক্তকরণের বিশ বছর। এই বিশ বছর হলো চীনের সুযোগসুবিধা ধারণ করে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার বিশ বছর। এই বিশ বছর হলো চীনের ইতিবাচকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করে বিশ্বকে উপকৃত করার বিশ বছর। 

তিনি বলেন, “বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় অংশগ্রহণের পর গত বিশ বছরে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) শক্তিশালী নেতৃত্বে চীনের জনগণ অনেক পরিশ্রম করে সামনে এগিয়ে গেছে। ফলে চীনের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে। অগ্রগতির আরেকটি কারণ হচ্ছে চীন ইতিবাচকভাবে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করে পারস্পরিক কল্যাণ নিশ্চিত করেছে। ঐতিহাসিক এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী ও তার স্বাক্ষী এবং চীনের উন্মুক্তকরণ ও উন্নয়নে সমর্থনদানকারী দেশ ও বিদেশের সবাইকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।” 

সি চিন পিং আরো বলেন, একটি দেশ ও একটি জাতির পুনরুজ্জীবনের জন্য প্রয়োজন যুগের উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে যাওয়া। 
তিনি বলেন, “চীন তার উচ্চমানের উন্মুক্তকরণ আরো সম্প্রসারণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, এর কোনো পরিবর্তন হবে না। বিশ্বের সাথে উন্নয়নের সুযোগসুবিধা ভাগাভাগি করার সংকল্পেরও পরিবর্তন হবে না। অর্থনৈতিক বিশ্বায়নকে আরো উন্মুক্ত, সহনশীল, ভারসাম্যপূর্ণ এবং পারস্পরিক কল্যাণের দিকে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় থেকেও পিছু হটবে না চীন।”

সি চিন পিং দৃঢ়ভাবে প্রকৃত বহুপক্ষবাদ রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, “বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকে কেন্দ্র করে বহুপক্ষবাদের বাণিজ্য ব্যবস্থা হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ভিত্তি। বহুপক্ষবাদের বাণিজ্য ব্যবস্থা অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সংস্কার সঠিক পথে এগিয়ে নেয়াকে সমর্থন দেয় চীন। বহুপক্ষবাদের বাণিজ্য ব্যবস্থার সহনশীলতার দিকে উন্নয়নকে সমর্থন দেয় চীন । উন্নয়নশীল দেশের বৈধ স্বার্থ ও কল্যাণে সমর্থন দেয় চীন । ডিজিটাল অর্থনীতি, বাণিজ্য ও পরিবেশ, শিল্প ভর্তুকি, এবং রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের বিষয়ে আলোচনায় চীন ইতিবাচক এবং উন্মুক্ত মনোভাব নিয়ে অংশগ্রহণ করবে। বিশ্বের শিল্প চেইন ও সরবরাহ চেইনের স্থিতিশিলতা রক্ষা করবে চীন।”

চীন দৃঢ়ভাবে বিশ্বের সাথে বাজারের সুযোগসুবিধা ভাগাভাগি করবে এবং উচ্চ মানের উন্মুক্তকরণ এগিয়ে নেবে উল্লেখ করে সি চিন পিং বলেন, “বিদেশি পুঁজির চীনে প্রবেশের নেতিবাচক তালিকা আরো হ্রাস করবে বেইজিং। সুশৃঙ্খলাভাবে টেলিকমিউনিকেশন ও চিকিত্সাসহ সেবা শিল্পের উন্মুক্তকরণকে আরো সম্প্রসারণ করবে। প্রণোদিত বিদেশি বিনিয়োগ শিল্পের তালিকা সংশোধন করে আরো সম্প্রসারণ করবে চীন। আরো বেশি বিদেশি পুঁজিকে অগ্রসর উত্পাদন শিল্প, আধুনিক সেবা শিল্প, উচ্চ ও নতুন প্রযুক্তি, এবং জ্বালানি রক্ষা ও পরিবেশ সুরক্ষা খাতে স্থানান্তরিত হতে সহায়তা করবে। আরো বেশি বিদেশি পুঁজিকে চীনের মধ্য ও পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে স্থানান্তরিত হতে নির্দেশনা দেবে। সবুজ, নিম্ন কার্বন, ডিজিটাল অর্থনীতি ইত্যাদির আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় গভীরভাবে অংশগ্রহণ করবে চীন । পাশাপাশি, “সার্বিক এবং প্রগতিশীল আন্তঃপ্রশান্ত মহাসাগরীয় চুক্তি” এবং “ডিজিটাল অর্থনীতি অংশীদারিত্ব চুক্তিকে” ইতিবাচকভাবে এগিয়ে নেবে বেইজিং।” 

চীন দৃঢ়ভাবে বিশ্বের অভিন্ন স্বার্থ রক্ষা করবে উল্লেখ করে সি চিন পিং বলেন,“করোনা মহমারী এখনোও শেষ হয়নি, বিশ্বের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার অনেক সমস্যার সম্মুখীন। বিভিন্ন দেশের জনগণ এখন আরো বেশি ঘনিষ্ঠ ঐক্য চায়। বিভিন্ন দেশের সাথে একযোগে উন্মুক্ত বিশ্বের অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করতে ইচ্ছুক চীন। উন্মুক্ত বসন্ত বাতাসকে বিশ্বকে উষ্ণ করতে দিন।” 

চায়না মিডিয়া গ্রুপ(সিএমজি) থেকে আকাশ