‘আয়কর আইনে কর কর্মকর্তাদের দুর্নীতির তদারকিতে বিধান প্রয়োজন’
2021-11-04 20:43:49

আজহার লিমন, ঢাকা: ১৯২২ সালে বৃটিশ সরকারের করা আয়কর অধ্যাদেশটি  স্বৈরশাসক হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের আমলে সংশোধন করে জারি করা হয় দ্য ইনকাম ট্যাক্স অর্ডিন্সে ১৯৮৪ নামে। সে হিসেবে প্রায় ১০০ বছরের পুরানো এই ইংরেজি ভাষার অধ্যাদেশটিই সহজ করে পরিবর্তনসহ আয়কর আইন নামে একটি খসড়া তৈরি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড -এনবিআর। ২৫ নভেম্বর এই খসড়ার ওপর মতামত চেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তারা আশা করছে, ৬টি তফসিলে ২৮টি অংশে বর্ণিত এই আইন দুর করবে অস্পষ্টতা, জবাবদিহিতার মধ্যে আনবে করদাতাকে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহ্ মনজুরুল হকের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, এ আইনের মাধ্যমে করফাঁকি কতোটা কমানো যাবে?

‘আয়কর আইনে কর কর্মকর্তাদের দুর্নীতির তদারকিতে বিধান প্রয়োজন’_fororder_b6

ব্যারিস্টার শাহ্ মনজুরুল হক

এই আইনজীবী বলেন, “নতুন আইনে কর কর্মকর্তাদের অনেক পাওয়ার দেওয়া হয়েছে রিয়েলাইজেশন অব ট্যাক্স। এবং এই রিয়েলাইজেশন করতে গিয়ে প্রায় ১৩ থেকে ১৪টি প্রভিশন সংশোধন করে তাদেরকে ক্ষমতায়ন করা হয়েছে যে তারা ট্যাক্স আদায়ের জন্য এসব কার্যাবলী সম্পাদন করতে পারবেন। সংবিধানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কর্মকর্তাদের ক্ষমতা প্রদান করলে তাতে কোন সমস্যা নেই, কারণ কর আদায় না হলে সরকারের যে লক্ষ্য সেটা পূরণ করা সম্ভব হয় না।”

: কিন্তু এতে কর কর্মকর্তাদের দুর্নীতির সুযোগটা বাড়লো কি না?

“এটা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কিন্তু এর জন্য একটা ওয়াচডগ বডি করা দরকার, যে কর কর্মকর্তা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হবে কিংবা যারা দুর্নীতির মাধ্যমে দুর্নীতি পরায়ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে বিরাট পরিমাণ রাজস্ব প্রদান না করার সুযোগ তৈরি করে দেবে, অভিযোগ আসা মাত্রই যেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ থাকে, আইনে যেন তাও থাকে। আইনে বেশি কর আদায় করলে তার জন্য ১০ শতাংশের মত প্রণোদনর ব্যবস্থা আছে, তাহলে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।”

প্রায় ১৮ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশে আয়কর দেন ১ শতাংশের কম নাগরিক। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫৬ লাখ টিআইএন ধারীর মধ্যে রিটার্ন জমা দিয়েছে ২৪ লাখের কিছু বেশি সনদধারী। যারা রিটার্ন দাখিল করেছেন, তাদের সবাই আবার দেননি আয়কর। এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদের কাছে প্রশ্ন করেছিলাম, কর আহরণের ক্ষেত্রে কোন বিষয়টি সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে---আইন নাকি প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা?

‘আয়কর আইনে কর কর্মকর্তাদের দুর্নীতির তদারকিতে বিধান প্রয়োজন’_fororder_b7

 

ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন,“আইন বা অর্ডিনেন্স তো অলরেডি আছে। এখন সেটাকে সংস্কার করা হচ্ছে। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। শুধু নতুন বা সংশোধিত এই আইনের জন্য নয়, বর্তমানে যে অধ্যাদেশ রয়েছে তার বাস্তবায়নের জন্য লোক দরকার। প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানো দরকার।”

বাংলাদেশে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে অর্থবছরগুলোতে আয়করের চেয়ে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট সংগ্রহের পরিমাণ বেশি দেখা যায়। অপরদিকে ধনী বাড়ার প্রবণতাতেও বাংলাদেশ শীর্ষে। এসব উপাত্ত উল্লেখ করে বিশ্লেষকরা বলছেন, আইনী ফাঁকফোকর, অনৈতিক মনোভাব ও কর আদায়ে নিযুক্ত কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণে প্রতিবছর সরকার বিরাট অংকের রাজস্ব সংগ্রহ করতে পারছে না, এটা স্পষ্ট।