বিজ্ঞান কল্পকাহিনী দেশ ও জাতির সীমানা অতিক্রম করেছে। এটি এমন একটি সাহিত্য যা বিভিন্ন দেশ ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পটভূমিতে পাঠকদের মধ্যে একই ধরনের আবেদন সৃষ্টি করতে সক্ষম। আজকাল প্রচুর চীনা কল্পবিজ্ঞানের শিল্পকর্ম ইংরেজি, জাপানি এবং অন্যান্য ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে এবং বিদেশে প্রচার করা হয়েছে। চীনের কল্পবিজ্ঞান সম্পর্কে বিশ্বের জানাশোনা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। সম্প্রতি চীনের বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক ও কল্পকাহিনী ভিত্তিক লেখক লিউ ছি সিন সিনহুয়া বার্তা সংস্থায় দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে একথা বলেছেন।
২০১৫ সালে ‘The three body problem’ নামে লিউ ছি সিনের কল্পবিজ্ঞান উপন্যাস বিশ্বের বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর পুরস্কার ‘হুগো অ্যাওয়ার্ড’ জয় করে। তারপর তার এই শিল্পকর্ম ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান ও স্প্যানিশসহ দশটিরও বেশি ভাষায় অনুদিত হয়েছে এবং সারা বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যা চীনা কল্পবিজ্ঞানকে সারা বিশ্বের কাছে পরিচিত করেছে। ৬ বছরের মধ্যে আরও অনেক শ্রেষ্ঠ ডোমেস্টিক কল্পবিজ্ঞানের শিল্পকর্ম প্রকাশিত হয়েছে। ফলে প্রকাশনা, চলচ্চিত্র ও টিভি নাটক এবং খেলাসহ এর সঙ্গে জড়িত নানা শিল্পে উন্নয়নের বসন্তকাল দেখা দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে লিউ ছি সিনের দৃষ্টিভঙ্গি বরাবরই ইতিবাচক এবং সতর্কমূলক। তিনি বলেন, কল্পবিজ্ঞানের সাহিত্য বা চলচ্চিত্র ও টিভি নাটক, যাই হোক না কেন, বর্তমানে সবচে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কল্পবিজ্ঞানের বিষয়ে রচনা জোরদার করা। চীনের কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের উচিত তার সামগ্রিক সৃজনশীলতার মান বৃদ্ধি করা এবং বিশ্বকে আরও চমৎকার শিল্পকর্ম দেখানো উচিত।
লিউ ছি সিন বলেন, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং যুগের উন্নয়নের সাথে কল্পবিজ্ঞানের ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। আপনাকে অবশ্যই বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ভিত্তিক উপন্যাসে গোটা মানবজাতির সাধারণ উদ্বেগের বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত্, শুধু নিজের জাতি ও দেশের উদ্বেগের বিষয় নয়। তিনি বলেন, আগের শিল্পকর্মের চেয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাই-ফাই শিল্পকর্ম ভার্চুয়াল বাস্তবতা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ জনগণের জীবনকে পরিবর্তন করা প্রযুক্তি এবং মানুষ ও সমাজের সঙ্গে প্রযুক্তির সম্পর্ক অন্বেষণের ওপর মনোযোগ দেওয়া হয়।
ডোমেস্টিক সাই-ফাই চলচ্চিত্র ও টিভি নাটক উন্নয়ন প্রসঙ্গে লিউ ছি সিন বলেন, আরও বেশি প্রভাবশালী কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের মেধাস্বত্ত্ব তৈরি ছাড়াও, সৃজনশীলতারও দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত্। তিনি বলেন, সায়েন্স ফিকশন ফিল্ম এবং টেলিভিশন একটি সৃজনশীল প্রজেক্ট। সৃজনশীলতার একটি অংশ আসে মুভির স্পেশাল ইফেক্ট প্রোডাকশন থেকে এবং অন্য অংশ আসে মুভিতে বলা গল্প থেকে।
তিনি মনে করেন, এখন দেশীয় সায়েন্স ফিকশন ফিল্ম এবং টেলিভিশনের স্পেশাল ইফেক্টের উপর জোর দেয় এবং স্ক্রিপ্টকে অবহেলা করে। এটা ঠিক না। একটি সত্যিকারের ভালো গল্প স্পেশাল ইফেক্ট ছাড়াই সফল হতে পারে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
ভালো পাণ্ডুলিপির জন্য ভালো চিত্রনাট্যকার অবিচ্ছেদ্য। তাই দেশীয় পেশাদারদের প্রশিক্ষণও অনেক জরুরি। সাই-ফাই লেখকদের চেয়ে সাই-ফাই চিত্রনাট্যকার বেশি বিরল।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লিউ ছি সিন এবং চীনা ভাষার সাই-ফাই মহল শিশুদের দিকে মনোযোগ দিয়েছে। তিনি বলেন, শিশুদের কৌতূহল এবং কল্পনা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের আধ্যাত্মিক বিষয় ও আকর্ষণের উত্স।
লিউ ছি সিন বলেন, যুগের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে শৈশবে পড়া কল্পবিজ্ঞান যেন বাস্তব হয়ে ওঠে। রূপকথার গল্প এবং অন্যান্য ফ্যান্টাসি সাহিত্যের সঙ্গে তুলনা করে বলা যায়, কল্পবিজ্ঞান সাহিত্য তরুণ পাঠকদের ভবিষ্যতের উপর সুগভীর প্রভাব ফেলে। তিনি আশা করেন, আরো বেশি লেখক শিশুদের জন্য উন্নতমানের কল্পবিজ্ঞান সাহিত্য রচনায় ঝাঁপিয়ে পড়বেন, ফলে আরও বেশি শিশু কল্পবিজ্ঞানের প্রতি আকৃষ্ট হবে এবং চীনের কল্পবিজ্ঞানের ভবিষ্যত উন্নয়নের ভিত্তি তৈরি হবে।