আজকের টপিক: আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় চীনের ভূমিকা
2021-11-03 14:23:55

২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭০তম অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার সময় যৌথ, বহুমুখী, সহযোগিতামূলক ও টেকসই নিরাপত্তার নতুন ধারণা পেশ করেন। এরপর বিগত ৬ বছর ধরে চীন সক্রিয়ভাবে এই নতুন নিরাপত্তা-ধারণা অনুসরণ করে, এক নিরাপদ বিশ্ব গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অবদান রেখে চলেছে।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে, চীন সক্রিয়ভাবে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সমস্যার শান্তিপূর্ণ ও রাজনৈতিক সমাধানের প্রচেষ্টা চালিয়ে থাকে। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিসৃষ্ট সমস্যা, কোরীয় উপদ্বীপের পারমাণবিক ইস্যুর মতো প্রধান আঞ্চলিক সমস্যার সমাধানেও চীন শান্তিপূর্ণ পদ্ধতির পক্ষের শক্তি হিসেবে কাজ করে এসেছে। ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংঘর্ষ এবং আফগানিস্তান সমস্যা সমাধানেও চীন শান্তিপূর্ণ আলোচনার পথ বেছে নিয়ে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে চীনের ভূমিকা বরাবরই গঠনমূলক ও নিরপেক্ষ।

কোরীয় উপদ্বীপের পারমাণবিক সমস্যার কথা ধরা যাক। চীন বরাবরই কোরীয় উপদ্বীপকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত করার পক্ষে। তবে, এ জন্য অস্ত্রের ভাষায় নয়, বরং আলোচনার ভাষায় বিশ্বাসী চীন। চীন বরাবরই বিশ্বাস করে যে, কোরীয় উপদ্বীপ সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ আলাপ-আলোচনা। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরহিস একবার কোরীয় উপদ্বীপ ও উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচিসৃষ্ট সমস্যা সমাধানে চীনের গঠনমূলক ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে, চীনকে বাদ দিয়ে কোরীয় উপদ্বীপে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। এ সম্পর্কে তিনি আরও বলেন,

“আমি মনে করি, কোরীয় উপদ্বীপ ইস্যুতে চীন একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করছে এবং ভবিষ্যতে আরও বেশি ভূমিকা পালন করবে। উপদ্বীপের পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ আমাদের সাধারণ লক্ষ্য। অঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এটি অবশ্যই শান্তিপূর্ণভাবে অর্জন করতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় চীন মৌলিক ভূমিকা পালন করতে পারে। উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচিসৃষ্ট সমস্যা যদি দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর বা আফ্রিকায় দেখা দিত, তাহলে যুদ্ধ অনেক আগেই শুরু হয়ে যেত। কোরীয় উপদ্বীপে যুদ্ধ না-হওয়ার কারণ চীনের ইতিবাচক ভূমিকা।”

২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র তাড়াহুড়া করে আফগানিস্তান থেকে তার সৈন্য প্রত্যাহার করে। কিন্তু ২০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে যে সমস্যার সৃষ্টি করেছে, তা সমাধানের কোনো প্রচেষ্টা চালায়নি মার্কিন প্রশাসন। এ অবস্থায় চীন আফগান সমস্যা সমাধানে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালনে জাতিসংঘকে সমর্থন করে এবং আফগানিস্তানকে শান্তি ও স্থিতিশীলতার পথে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করার জন্য প্রতিশ্রুতি দেয়। চলতি বছরের আগস্টে, আফগান তালিবানের মুখপাত্র সোহেল শাহীন গঠনমূলক ভূমিকার জন্য চীনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং আশা করেন যে, চীন আফগানিস্তানকে শান্তিপূর্ণভাবে পুনর্গঠনে সহায়তা করে যাবে।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর চীন সরকারের কাছ থেকে আফগানিস্তানে জরুরি মানবিক সহায়তা কাবুল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। আফগানিস্তানের অন্তর্বর্তী সরকারের শরণার্থীবিষয়ক ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী খলিল হাক্কানি বিমানবন্দরে ত্রাণ গ্রহণ করেন। এসময় হাক্কানি বলেন, ‘চীন আমাদের প্রতিবেশী। আমরা এই সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞ। এবার চীন যথাসময়ে আমাদের সাহায্য করেছে। আমরা আশা করি চীন সহায়তা অব্যাহত রাখবে। এটি ভালো বন্ধুত্বের প্রতীক।’

চলতি বছর ইরান-পরমাণুচুক্তির ষষ্ঠ বার্ষিকী। এই চুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ চীন। চীন এই চুক্তি কার্যকর হোক—তা চায়। চুক্তিসংক্রান্ত নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবেরও দৃঢ় সমর্থক চীন। চীন ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিসৃষ্ট সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান চায়। চীন আরও চায়, পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধ চুক্তি কার্যকর হোক।

পৃথিবী আজ পরিবর্তনের এক নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। এ যুগে বিভিন্ন ধরনের নিরাপত্তা সমস্যা দেখা যাচ্ছে। চীন সব ধরনের নিরাপত্তা সমস্যা সমাধানে ইতিবাচক ভূমিকা রেখে চলেছে। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)