গল্পটি নব্বইয়ের দশকের,
ছেন কুই লিনের জীবনে দুর্দশার মেঘ যেন কাটছেই না। ইস্পাত কারখানার চাকরিটা চলে যাওয়ার পর স্ত্রী সিও চুইও তাকে ছেড়ে চলে যান। অর্থের লোভে বিয়ে করেন ধনী এক ব্যবসায়ীকে।
তাদের একমাত্র কন্যা সিও ইউয়ানের অভিভাবকত্ব চান দুজনই। অভিভাবকত্ব পাওয়ার মূলশর্ত হলো মেয়ের ইচ্ছে পুরন। আর মেয়ের ইচ্ছে একটি পিয়ানো ।
মেয়েকে কাছে পাওয়ার যুদ্ধ শুরু হলো বাবা ছেন কুই লিনের। নিজেও ছিলেন একজন পিয়ানো শিল্পী। মেয়েকেও বানাতে চান একজন শ্রেষ্ঠ পিয়ানো-বাদক।
নিজের স্বপ্নপূরণ ও মেয়েকে কাছে পাওয়ার জন্য শতচাপ সহ্য করে একটি পিয়ানো কেনার জন্য টাকা সংগ্রহের চেষ্টা শুরু করলেন বাবা । কিন্তু ব্যর্থ হন তিনি।
বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে এবার নিলেন বিপজ্জানক ঝুঁকি। ইস্পাত কারখানার স্কুলের পিয়ানোটি চুরি করতে হবে।
পিয়ানোটি চুরি করে স্কুলের খেলার মাঠে দিয়ে নিয়ে আসার পথেই ধরা পড়ে যায় পুরো দল। যেতে হয় কারাগারে।
জেল থেকে মুক্ত হয়ে এবার অদম্য বাবা শুরু করলেন কাঠ দিয়ে পিয়ানো বানানোর কাজ। কার্ডবোর্ড দিয়ে বানানো এই পিয়ানোর শুধু একটাই সমস্যা। খেলনা পিয়ানোটি বাজে না। বাবা এটার নাম দিয়েছেন বোবা পিয়ানো। কিন্তু মেয়ের তো লাগবে আসল পিয়ানো।
একদিন সুযোগ এলো সত্যিকারের পিয়ানো বানানোর। পিয়ানো সম্পর্কিত একটি রাশিয়ান বইতে পাওয়া নির্দেশনায় বন্ধুদের সাথে নিয়ে নেমে পড়লেন পিয়ানো তৈরির কাজে।
অনভিজ্ঞ একটি দল, আট হাজারেরও বেশি ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ । যা মিলিয়ে তৈরি করতে হবে কাঠামো। যা নির্মাণ প্রায় অসম্ভব ।
কিন্তু একজন বাবার মেয়ের আবদার রক্ষার এই যুদ্ধ যেন থামার নয়। স্পেনীয় সংগীতের তালে তালে চলতে থাকে ইস্পাতের তৈরি পিয়ানোর কাজ ।
অবশেষে মায়ের সঙ্গে কারখানায় আসেন মেয়ে। মেয়ের সামনে পিয়ানো নিয়ে আসে বাবা? কৌতুহলী মেয়ের আগ্রহ , এই পিয়ানোতে কি সত্যিই সুর বাজবে।
নতুন পিয়ানোতে তোলা সুরমূচ্ছ্বনায় মুখরিত হয়ে গেল পুরো কারখানা। চারদিকে বাজতে লাগলো বাবার তৈরি পিয়ানোর সুর।
পিয়ানোকে কেন্দ্র করে, বাবা মেয়ের অপূর্ব ভালোবাসার সংমিশ্রণের সিনেমা দি পিয়ানো ইন অ্যা ফ্যাক্টরি।
নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকে ঘটা সত্যি ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্মিত সিনেমাটি ২০১১ সালে মুক্তির পরে তুমুল জনপ্রিয়তা পায় ।
নিজের সৃষ্টির তৃপ্তি, ভালোবাসার মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর অদম্য প্রচেষ্টার গল্প নিয়ে নির্মিত সিনেমাটি বহুদিন মনে রাখবেন দর্শকরা।