বিশ্বের বৃহত্তম আন্তর্জাতিক বইমেলা অফলাইন প্রদর্শনী পুনরায় শুরু হয়, এর স্কেল দুই-তৃতীয়াংশ কমিয়েছে
2021-11-02 16:47:38

স্থানীয় সময় ২০ অক্টোবর ৭৩তম জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা আনুষ্ঠানিকভাবে অনলাইন ও অফলাইনে পাঠকদের সাথে দেখা করে। ২০২০ সালে, মহামারীর কারণে এই বিশ্বের বৃহত্তম প্রকাশনা শিল্পের প্রদর্শনী সম্পূর্ণরূপে ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হয়। এই বছরের অফলাইন প্রদর্শনী পুনরায় চালু হলেও, মহামারীর বিধিনিষেধের কারণে এর স্কেল প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কমেছে।

বিশ্ব সাহিত্য ও প্রকাশনা জগতের একটি প্রধান ইভেন্ট হিসেবে, ৭৩তম ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা ৮০টি দেশ ও অঞ্চলের মোট দুই হাজার প্রকাশক ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে আকর্ষণ করেছে। এসব প্রদর্শনী ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এই সময়ে ৩০০জনেরও বেশি লেখক তাদের রচনা উপস্থাপন করেছেন বা আলোচনায় অংশ নিয়েছেন।

 

ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলার ভাইস-চেয়ারম্যান ক্লাউডিয়া কায়সার সাংবাদিকদের এক সাক্ষাত্কারে বলেন, বর্তমান বিশ্ব এখনও কোভিড-১৯ মহামারী সংকটের ছায়া থেকে পুরোপুরি মুক্তি পায়নি। তাই এখনও অনেক প্রদর্শক এবং ভোক্তা ব্যক্তিগতভাবে বইমেলায় আসতে পারে না। তবে, আমি বিশ্বাস করি যে ২০২২ সালে চীনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশীদাররা দৃঢ়ভাবে ফিরে আসবে। ক্লাউডিয়ার চীনে ১০ বছরের মতো ছিলেন। তিনি বলেন, “এ বছরের বইমেলার থিম হলো ‘পুনরায় সংযোগ’, অর্থাত্ মানুষ আবার বইমেলায় যেতে পারে। একই সময়ে, এটি হলো ফ্রাঙ্কফুর্টে শুরু হওয়া প্রথম বড় ইভেন্ট। আমরা অবশ্যই চীনা প্রদর্শকসহ ৮০টি দেশ ও অঞ্চলের দুই হাজার প্রদর্শককে স্বাগত জানাই। এই ইভেন্ট পুনরায় শুরু হওয়ায় আমরা অনেক খুশী। যদিও চীন থেকে অনেক প্রদর্শক এ বছর সরাসরি আসেননি; আমরা আশা করি যে পরের বছর তারা আসতে পারবে। চীনের সাথে আমাদের বিনিময় অনেক ঘনিষ্ঠ, তাই পরবর্তী বইমেলা আরও চীনা প্রদর্শকদের উপকৃত করতে পারে, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আগামী বছর ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় চীনা দর্শকদের স্বাগত জানাই, কারণ ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা বিশ্বের বৃহত্তম বইমেলা, এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বইমেলা। আমরা আশা করি, চীনা প্রকাশনা সংস্থাগুলির সাথে আরও বিনিময় ও সহযোগিতা করবো।”

 

এই বছরের ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় বাস্তব বুথ স্থাপনকারী চীনা প্রদর্শকদের মধ্যে রয়েছে চীনা বিদেশি ভাষা ব্যুরোর চীনা বই বাণিজ্য কোম্পানি লিমিটেড, চীনা বই আমদানি ও রপ্তানি গ্রুপ ইত্যাদি। প্রাসঙ্গিক বুথে অনেক চীনা প্রকাশনা ইউনিটের প্রদর্শিত বইগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ রচনা, থিম সিরিজ, মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান এবং ভাষা শিক্ষা বিভিন্ন বহুভাষিক বই রয়েছে।

 

আন্তর্জাতিক বিখ্যাত প্রকাশক রিচার্ড চাকিন টানা ৪৮বার বার্ষিক ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি আন্তর্জাতিক প্রকাশক কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করছেন এবং ‘চীনা বই বিশেষ অবদান পুরস্কার’ পেয়েছেন। তিনি প্রতি বছর ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলার জন্য চীনা বুথে যান।

তিনি বলেন, “বইমেলা অফলাইনে শুরু করা দারুণ একটা ব্যাপার! এজন্য আমরা সংশ্লিষ্ট আয়োজক ও পৃষ্ঠপোষকদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমি বিশ্বাস করি যে ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা অবশ্যই সাফল্যের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে এবং চলতি বছরে অফলাইনে আয়োজন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত। বিশেষ করে যখন আমি চীনের বুথের সামনে দাঁড়াই, তখন আমি আন্তর্জাতিক প্রকাশনার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার ওপর জোর দিতে চাই---যা মানুষকে চীনকে বুঝতে সহায়তা করতে পারে এবং চীনকে বিশ্বকে বুঝতে সহায়তা করতে পারে।”

 

মহামারীর আগে, মোট তিন লাখেরও বেশি মানুষ ২০১৯ ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় গিয়েছে। এই বছর, বইমেলা বিভিন্ন মহামারী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি, প্রতিদিন মাত্র ২৫হাজার দর্শককে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়, এবং প্রত্যেককে ভেন্যুর ভিতরে মাস্ক পরতে হবে। তা সত্ত্বেও, আংশিক শারীরিক প্রদর্শনীর পদ্ধতির মাধ্যমে সারা বিশ্বের লেখক ও সাহিত্যপ্রেমীদের আবার স্বাগত জানাতে পারে, তা একটি চমত্কার বিষয়। বেলারুশ থেকে একজন লেখক বলেছেন,

“অফলাইনে অনুষ্ঠিত এবার বইমেলাকে স্বাভাবিক জীবনের দিকে একটি বড় পদক্ষেপ বলা যেতে পারে। সবাই ইতিবাচক মেজাজে আছে, যা আমার ভালো লাগে। আমি মনে করি, মানুষ সবকিছু ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ার আশা দেখছে।”