বন্ধুরা, গত বছর চীন সম্পূর্ণভাবে হতদারিদ্র্যমুক্ত হয়। আমাদের দারিদ্র্যবিমোচন পরিকল্পনার বাস্তবায়নকাজও সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু নতুন একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। এটি হলো গ্রামগুলোর পুনরুজ্জীবন পরিকল্পনা। চীনের গ্রামগুলো কিভাবে উন্নত হচ্ছে? আজকের অনুষ্ঠানের শুরুতে আমি আপনাদেরকে একটি গ্রামের বিভিন্ন শিল্প উন্নয়নের মাধ্যমে পুনরুজ্জীবিত হওয়ার গল্প শোনাবো।
২৪ বছর বয়সী লিউ লিউ হলেন একজন ইন্টারনেট সেলিব্রেটি। তিনি ইন্টারনেটে নিজের জন্মস্থানের সুন্দর দৃশ্য দেখিয়ে থাকেন। তাঁর জন্মস্থান হলো চিয়াংসু প্রদেশের সুচৌ শহরের হানজিয়ান এলাকার ফাংস্যিয়াং থানার ইয়ানহু গ্রাম। গ্রামে বিভিন্ন শিল্প রয়েছে।
সম্প্রতি লিউ লিউর দুই ঘন্টার লাইভ অনুষ্ঠান দেখে সহস্রাধিক মানুষ এবং তিনি লাইভে ১৮৫০ ইউয়ানের কৃষিপণ্য বিক্রয় করেন। গত বছর লিউ লিউ ইয়াংচৌ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়া পর জন্মস্থানে ফিরে আসেন। তিনি গ্রামটির কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে একটি ই-কমার্স গ্রুপ গড়ে তোলেন। তাঁরা বিভিন্ন ঋতুতে বিশেষ পণ্য বিক্রয় করেন। বার্ষিক বিক্রয়ের পরিমাণ ৮ লক্ষাধিক ইউয়ান।
লিউ লিউ’র পারিবারিক হোটেল আছে। কিন্তু আগে মাছ ধরে পুরো পরিবারের জীবিকা নির্বাহ হতো। পরিবারের ৬ জন সদস্য একটি ছোট জাহাজে থাকতেন। তখন জীবন অনেক কঠিন ছিল; জীবনে ছিল দারিদ্র্য।
ইয়ানহু গ্রাম একটি মৎস্যজীবী গ্রাম ছিল। আগে গ্রামটির অধিকাংশ বাসিন্দা এ ধরণের কঠিন জীবন যাপন করতেন। ২০০৭ সালে স্থানীয় সরকারের সমর্থনে গ্রামটির বাসিন্দারা নদীর তীরে গড়ে ওঠা নতুন বাড়িঘরে স্থানান্তরিত হতে শুরু করে। ২০১৭ সালেই নতুন শিল্প উন্নয়নের মাধ্যমে মৎস্য শিল্প বন্ধ করে দেয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের কর্মসংস্থানের সমস্যা সমাধান করার জন্য ইয়াংচৌ শহর গ্রামীন পর্যটন শিল্প উন্নয়ন করে। ইয়াংহু গ্রামের প্রাকৃতিক দৃশ্য খুবই সুন্দর। সেজন্য গ্রামটি বিভিন্ন স্থানের পর্যটকদের আকর্ষণ করে থাকে।
লিউ লিউ’র পিতা লিউ দ্য ইউ ৪০ বছর বয়স থেকে নিজের ব্যবসায় শুরু করেন। তিনি একটি পারিবারিক হোটেল নির্মাণ করেন। আস্তে আস্তে ব্যবসায় অনেক উন্নত হয়েছে। ২০১৯ সালে তাঁদের মুনাফা ছিল ১ লাখ ইউয়ান।
গত বছরে কোভিড-১৯ মহামারী ছড়িয়ে পড়ার কারণে ইউয়ানহু গ্রামের পর্যটন শিল্পের ক্ষতি হয়। কিন্তু লিউ লিউ’র মতো তরুণ-তরুণীরা ই-কমার্সের সঙ্গে যুক্ত হতে শুরু করেন।
ইয়াংচৌ পেশাদার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সহায়তায় গ্রামটি নিজের অনলাইন দোকান খুলেছে এবং বিশেষ ই-কমার্স গ্রুপ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
প্রথমে লিউ লিউ ও তাঁর মহকর্মীদের সময় কঠিন ছিল। কারণ তাঁদের ইন্টারনেটে পণ্য বিক্রয় করার অভিজ্ঞতা ছিল না। তাঁরা গ্রামের সৌন্দর্য ও এখানে উত্পাদিত বিভিন্ন পণ্য নিয়ে লাইভে আসতে শুরু করেন। এভাবে তাদের অনেক ফ্যান তৈরি হয়ে যায়। একসময় তাদের পণ্য জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
লিউ লিউ ইন্টারনেটে স্থানীয় সাংস্কৃতিক শিল্পের সঙ্গেও দর্শকদের পরিচয় করিয়ে দেন এবং সেসব শিল্প অনলাইনে বিক্রিও করেন। অনেক স্থানীয় বাসিন্দা ই-কমার্সের মাধ্যমে নিজেদের পণ্য বিক্রয় করার আশা প্রকাশ করেন।
বর্তমানে চীনে ভাইরাসের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ছিংমিং দিবসের সময় গ্রামটির প্রায় সব পারিবারিক হোটেল ইন্টারনেটে অর্ডার গ্রহণ করে। এ সম্পর্কে লিউ লিউ বলেন,
“এ বছর আমাদের পারিবারিক হোটেলে প্রায় ৫০ হাজার অতিথি আসবেন বলে আশা করি। অনুমান অনুযায়ী, গোটা বছরে আমাদের গ্রামের পর্যটন আয় হবে ১.৬ কোটি ইউয়ান।”
লিউ দ্য বাও বলেন, চলতি বছর গ্রামে চা-হাউস ও বুক-হাউস নির্মিত হবে এবং অনলাইন ও অফলাইনে টিম বিল্ডিং, গবেষণা ও পার্টি আয়োজনের কাজ করবে। গ্রামে বিভিন্ন শিল্প উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামের পুনরুজ্জীবন বাস্তবায়িত হচ্ছে।