শিল্প পার্কে কীভাবে বাস্তবায়িত হবে ডাবল কার্বন লক্ষ্য?
2021-11-01 16:07:29

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সুদূরপ্রসারী কিছু লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে চীন। তাদের মধ্যে ডাবল কার্বন লক্ষ্য অন্যতম। এটি আসলে ২০৩০ সালের পর থেকে কার্বন নির্গমন হ্রাস শুরু করা এবং ২০৬০ সালের মধ্যে একটি কার্বন নিরপেক্ষে দেশে পরিণত হওয়ার দুটো প্রধান লক্ষ্যকে বোঝায়। এই দুটো লক্ষ্য বাস্তবায়নে অনেক বাস্তব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে চীন। শিল্প পার্কও বাদ পড়েনি এসব ব্যবস্থার আওতা থেকে।   

 

শিল্প পার্ক শিল্প উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং অনুঘটক। পার্কের প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত  বড় ধরনের শক্তি ব্যবহারকারী বা অনেক বেশি শক্তি তারা ব্যবহার করে থাকে। ডাবল কার্বন লক্ষ্যবস্তু শিল্প পার্কের নিম্ন-কার্বন উন্নয়নের জন্য নতুন চাহিদা তৈরি করেছে। চলতি বছরের জুলাই মাসে জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশন প্রকাশিত ‘চতুর্দশ পাঁচশালা পরিকল্পনা আবর্তনশীল অর্থনীতি উন্নয়ন পরিকল্পনা’য় পার্কে প্রতিষ্ঠানগুলোর দূষণমুক্ত উত্পাদন ও রূপান্তর সংগঠিত করার কথা উল্লেখ করা হয়।

 

চাইনিজ একাডেমি অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের  শিক্ষাবিদ হো খ্যবিন ২০২১ সালের চীনের প্রাকৃতিক পরিবেশ শিল্প শীর্ষ ফোরামে বলেন, শিল্প পার্কের ডাবল কার্বন লক্ষ্য হচ্ছে শহর, অঞ্চল ও এলাকার কার্বন হ্রাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় শিল্প পার্কের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাই আরো ইতিবাচকভাবে ‘ডাবল কার্বন’ কর্তব্য পালন করা উচিত।

 

‘ডাবল কার্বন’ লক্ষ্য বাস্তবায়নে শিল্প পার্কের নিম্ন-কার্বন উন্নয়ন কীভাবে বাস্তবায়িত হবে? পার্কে শক্তির ব্যবহারে রূপান্তর কীভাবে সহায়তা দেয়?  এবং প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে লাভবান হবে? আজকের ‘ব্যবসা-বাণিজ্য’ অনুষ্ঠানে আমি আপনাদের সামেন এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে চেষ্টা করব।

 

দূষণমুক্ত উত্পাদন রূপান্তর পদ্ধতি ব্যাপক বৈচিত্র্যময়। বিনিয়োগকারী হিসেবে জেচিয়াং কুয়াংলোং জ্বালানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কোম্পানি তাদের বিনিয়োগ গ্রহণকারী কোম্পানির ছাদে ৮শ’ কিলোওয়াটের সৌর বিদ্যুত জেনারেশন ডিভাইস স্থাপন করার পাশাপাশি এক সেট ১শ’ কিলোওয়াট/২৭৬ কিলোওয়াট ঘন্টার শক্তি স্টোরেজ সিস্টেম স্থাপন করেছে। এটি সেই প্রদেশের প্রথম সৌর শক্তি সঞ্চয় প্রকল্প।

 

বিদ্যুত্ বিতরণ কেন্দ্রকে জনপ্রিয় করে তোলার কারণে বর্তমানে চীনের কিছু অঞ্চলের বিদ্যুত্ নেটওয়ার্ক বহন করা বাকী বিদ্যুত্ অনলাইনের বোঝা ঊর্ধ্বসীমায় পৌঁছেছে। ফলে আংশিক সৌর বিদ্যুতের বিভিন্ন নতুন জ্বালানী প্রকল্প সংযুক্ত করা মুশকিল হচ্ছে। কিন্তু সমর্থনকারী শক্তি সঞ্চয়, অফ-পিক শোষণকারী এবং অফ-পিক সংযুক্ত করার মাধ্যমে বিদ্যুত্ নেটওয়ার্ক চালু’র চাপ হ্রাস করার পাশাপাশি আরো ভাল করে নতুন জ্বালানী প্রকল্প উন্নয়ন করা যাবে।

 

সৌর শক্তি সঞ্চয় শুধু পার্কের প্রতিষ্ঠানগুলোর দূষণমুক্ত উত্পাদন রূপান্তর পদ্ধতিগুলোর অন্যতম। ‘ডাবল কার্বন’ লক্ষ্যবস্তু প্রকাশিত হবার পর বিভিন্ন শিল্প পার্ক নিজেদের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী, ইতিবাচকভাবে নিম্ন-কার্বনের উত্পাদন চালাচ্ছে।

 

‘ডাবল কার্বন’ লক্ষ্যবস্তু উত্থাপন এবং বিদ্যুতের বাজারজাতকরণের সংস্কার বেগবান করার সঙ্গে সঙ্গে দূষণমুক্ত উত্পাদন রূপান্তর এবং শক্তির দক্ষতার মান উন্নয়ন করা প্রতিষ্ঠানগুলোর সামনে একটি প্রয়োজনীয় প্রশ্নে পরিণত হয়েছে।

 

জ্বালানী বিদ্যুতের দাম প্রতিষ্ঠানের উত্পাদন ব্যয়ে প্রভাব ফেলে। বর্তমানে বিদ্যুতের দাম ব্যবস্থায় প্রতিষ্ঠানগুলোর শক্তির দক্ষতা ব্যবহারের মূল্যের ওপর আরো বেশি নির্ভরশীল। পাশপাশি সবুজ উন্নয়নের চাহিদা পূরণ করতে প্রতিষ্ঠানগুলোর শক্তি দক্ষতার মান উন্নয়ন নিয়ে ভাবতে হয়।

 

অর্থনৈতিক লাভ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেয়ার পিছনে প্রধান চালিকা শক্তির কাজ করে। জাই সুনহুয়া বলেন, প্রতিষ্ঠানের দিক থেকে বন্টন করা সৌর বিদ্যুত্ উত্পাদনে ভর্তুকি কমানোর সঙ্গে সঙ্গে সৌর বিদ্যুত্ স্টেশনের আয় ব্যাপকভাবে কমেছে। যোগ্যতাসম্পন্ন বন্টন বিদ্যুত্ স্টেশন মালিকদের ইউনিট সঞ্চিত শক্তির কার্যকারিতা বাড়িয়ে বিদ্যুত্ স্টেশনের পরিষেবা ও অপারেশন মূল্য কমাতে পারবে।

 

পার্কে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বাস্তবায়ন করতে প্রথমে জ্বালানির বুদ্ধিমত্তা বাস্তবায়িত হয়। পার্কের প্রতিষ্ঠানগুলোর দূষণমুক্ত উত্পাদন রূপান্তর কার্যকর করার তাত্পর্য শুধু বিদ্যুত্ সাশ্রয় নয়। ডিজিটাইজড জ্বালানী প্রশাসনের মাধ্যমে জ্বালানী উত্পাদন ও পণ্যভোগ প্রক্রিয়া ভিজ্যুয়ালাইজেশন ও পরিমাপযোগ্য এবং পরিসংখ্যান বিশ্লেষণের মাধ্যমে পণ্যের মান উন্নত ও শিল্পের রূপান্তর ও উন্নয়ন করা যাবে।

 

সর্বদাই চীনের শিল্প বিভাগের শক্তি খরচ মোট শক্তি খরচের প্রায় ৭০ শতাংশ। শিল্প বিভাগও কার্বন নির্গমনের প্রধান উত্স। ‘ডাবল কার্বন’ লক্ষ্যবস্তু বাস্তবায়ন করতে শিল্প বিভাগের কার্বন নির্গমন হ্রাস কার্যকর করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সবুজ উত্পাদন এবং পুনর্নিমাণ শিল্প বিভাগের আবর্তনশীল অর্থনীতি বাস্তবায়ন বেগবানের দুটো প্রধান দিক। শিল্প বিভাগের আবর্তনশীল অর্থনীতি কার্যকরভাবে কার্বন নির্গমন হ্রাস করবে, যা‘ডাবল কার্বন’ বাস্তবায়নে সহায়ক হবে।

 

এমন পরিস্থিতিতে ‘চতুর্দশ পাঁচসালা পরিকল্পনা’ চলাকালে পার্কের প্রতিষ্ঠানগুলোর দূষণমুক্ত উত্পাদন রূপান্তর ও সবুজ নিম্ন-কার্বন সংযুক্ত করতে হবে। বিদ্যুত্ থেকে শক্তির দক্ষতা উন্নত করতে একদিকে বিদ্যুতের শক্তি ও পরিমাণ বাঁচাতে হবে, বিদ্যুত্ ব্যবহারে অপচয় রোধ করতে হবে, বিদ্যুত্ খরচ হ্রাস এবং জ্বালানী সাশ্রয় ও লোকসান ও নির্গমন কমাতে হবে। অন্য দিকে, চাহিদার টেকসই জ্বালানী শক্তির শোষণ ব্যবহার ত্বরান্বিত করে বহু পক্ষের সমান কল্যাণের চাহিদার প্রতিক্রিয়া এবং টেকসই জ্বালানী বিদ্যুতের সমন্বিত রূপ তুলে ধরা যাবে। পাশপাশি সবুজ জ্বালানী, সবুজ মুদ্রা ও সবুজ প্রমাণপত্রের সৃজনশীলকে উত্সাহ দেয়া হবে।

 

এর ভিত্তিতে পার্ককে সামগ্রিক জ্বালানী পরিষেবার দিকে উন্নয়ন করে নতুন সামগ্রিক জ্বালানী ব্যবস্থা নির্মাণে উত্সাহ দিতে হবে। সামগ্রিক জ্বালানী পরিষেবা আসলে শেষ গ্রাহকের বহুবিধ জ্বালানী উত্পাদন ও পণ্যভোগ পূরণ করা নতুন জ্বালানী পরিষেবা পদ্ধতি। একদিকে জ্বালানী প্রতিষ্ঠান, নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ও তথ্য পরিষেবা প্রতিষ্ঠান আন্তঃসীমান্ত যোগাযোগ চালিয়ে, বুদ্ধি জ্বালানী পরিষেবা প্ল্যাটফর্ম তৈরী করে, এবং উত্সাহ দেয়। বাজারায়ন ব্যবস্থা কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন অংশগ্রহণকারী প্রশাসনে ইতিবাচক ভূমিকা পালনকে আকর্ষণ করে। অন্যদিকে, সামগ্রিক জ্বালানী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে বিদ্যুত্, গ্যাস ও তাপ শক্তিসহ বহু জ্বালানী শাখা ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে প্রযুক্তিগত বাধা ভেঙ্গে দিয়ে, বিভিন্ন ধরণের জ্বালানীর পারস্পরিক পরিপূরকতা এবং বহু ব্যবস্থার সমন্বয় ও সুবিন্যস্ততা ত্বরান্বিত করতে হবে, যাতে জ্বালানী নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ভিত্তিতে শক্তির দক্ষতার উন্নত এবং নতুন জ্বালানীর শোষণ ত্বরান্বিত করা যাবে।

 

(প্রেমা/এনাম)