নভেম্বর ১: চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং গতকাল (রোববার) সন্ধ্যায় বেইজিং থেকে এক ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে জি-২০-এর ১৬তম শীর্ষ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। এতে তিনি জলবায়ু পরিবর্তন, জ্বালানি ও টেকসই উন্নয়নসহ নানা বিষয়ে চীনের অবস্থান তুলে ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন।
সি চিন পিং বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও জ্বালানি সমস্যা বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে আন্তর্জাতিক সমাজের অভিন্ন স্বার্থের এবং বিশ্বের ভবিষ্যতের সাথেও জড়িত। ঐক্যবদ্ধভাবে এসব মোকাবিলার ইচ্ছা ক্রমশ বাড়ছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বাস্তব কর্মকান্ড। প্রথমত, সার্বিক ভারসাম্যপূর্ণ নীতি ও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পরিবেশ সুরক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সমন্বয় করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার সঙ্গসঙ্গে গণজীবিকা উন্নয়ন করতে হবে। এ বিষয়ে বিশ্বের প্রধান প্রধান অর্থনীতিসমূহের সহযোগিতা জোরদার করতে হবে। দ্বিতীয়ত, ‘ইউএন ফ্র্যামওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চ্যাঞ্জ’ ও ‘প্যারিস চুক্তি’র সর্বাত্বক বাস্তবায়ন করতে হবে। তৃতীয়ত, উন্নয়নশীল দেশসমূহকে সমর্থনের মান উন্নত করতে হবে। জি-২০ সদস্যদের প্রথমে উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োগকে প্রমোট করতে হবে, উন্নত দেশগুলোকে তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে হবে এবং উন্নয়নশীল দেশসমূহকে অর্থ সহায়তা দিতে হবে।
সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেন, “বিগত ১৫ বছরে কার্বন নির্গমন ২০২০ সালের জলবায়ু কার্যক্রম লক্ষ্যের চেয়ে অনেক দূর সামনে এগিয়ে গেছে চীন । জ্বালানি ও শিল্প কাঠামোর রূপান্তর ও উন্নয়নকে অব্যাহতভাবে প্রমোট করছে চীন। সবুজ ও নিম্ন কার্বন প্রযুক্তির গবেষণা ও প্রয়োগকে এগিয়ে নিচ্ছে বেইজিং। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও জ্বালানি রূপান্তর এগিয়ে নিতে ইতিবাচক অবদান অব্যাহত রাখবে চীন।”
সি চিন পিং জানান, করোনা মহামারীর ছড়িয়ে পড়া এখনো অব্যাহত রয়েছে। ফলে একাধিক সংকট তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক সমাজের অনেক বছরের উন্নয়নের ফলাফল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এবং উন্নয়নশীল দেশসমূহ অভূতপূর্ব আঘাত ও পরীক্ষার সম্মুখীন হচ্ছে। মহামারীতে দেখা গেছে, বিভিন্ন দেশের লক্ষ্য ও স্বার্থ পরস্পরের সঙ্গে জড়িত। বিভিন্ন দেশ হচ্ছে মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি। উন্নয়নশীল দেশের টেকসই উন্নয়নকে এগিয়ে নেয়ার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দেশের গণকল্যাণের জন্য উপকারী এবং গোটা মানবজাতি ও পৃথিবীর ভবিষ্যত ও লক্ষ্যের সাথেও জাড়িত।
সি চিন পিং বলেন, সম্প্রতি চীন বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগ উত্থাপন করেছে। চীন আন্তর্জাতিক সমাজকে জাতিসংঘ-২০৩০ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা আরো দ্রুত বাস্তবায়ন এবং আরো শক্তিশালি, সবুজ ও স্বাস্থ্যকর বৈশ্বিক উন্নয়ন বাস্তবায়ন প্রমোট করার আহ্বান জানিয়েছে। এ বিষয়ে জি-২০ সদস্যদের মতৈক্য এগিয়ে নিয়ে বাস্তব কর্মকাণ্ড জোরদার করতে হবে।
প্রথমত, উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিতে এবং জণগণকে কেন্দ্র করার ধারণা সমুন্নত রাখতে হবে।
দ্বিতীয়ত, বাস্তব সহযোগিতা এগিয়ে নিতে হবে। উন্নয়ন খাতে আরো বেশি উন্নয়নশীল দেশের চাহিদাকে গুরুত্ব দিতে দেবে। দারিদ্র্যবিমোচন, খাদ্য নিরাপত্তা, শিল্পায়ন ও আন্তঃসংযোগসহ গুরুত্বপূর্ণ খাতে সহযোগিতা জোরদার করতে হবে।
তৃতীয়ত, পারস্পরিক কল্যাণ বজায় রেখে অংশীদারিত্বের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জাতিসংঘের সমন্বয়ের ভূমিকাকে সমর্থন করতে হবে।বৈশ্বিক উন্নয়নে অংশীদারিত্বের সম্পর্ক জোরদার এবং বৈশ্বিক উন্নয়ন লক্ষ্যের কমিউনিটি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
শীর্ষ সম্মেলনে জি-২০ রোম ঘোষণা গৃহীত হয়।
সম্মেলনে তিং সুই সিয়াং, লিউ হ্য এবং ইয়াং চে ছিও উপস্থিত ছিলেন।
ওয়াং ই প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে ইতালিতে আয়োজিত শীর্ষ সম্মেলনে সরাসরি উপস্থিত ছিলেন।
(আকাশ/এনাম/রুবি)