স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে ৩১ অক্টোবর শুরু হয়েছে জাতিসংঘের বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৬। সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান, পরিবেশকর্মী ও সাংবাদিকসহ ২৫ হাজার প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্কট মোকাবেলায় এবারের সম্মেলনটিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এবারের সম্মেলনে ২০১৫ সালে করা প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বাস্তবায়নে আরও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। কার্বন নিঃসরণ কমানো এবং কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সরে আসার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলেও আশা করা হচ্ছে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত চলা এ সম্মেলনে।
এবারের বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন বাংলাদেশের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বনেতাদের সঙ্গে এ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৩১ অক্টোবর সকালে তিনি গ্লাসগোর উদ্দেশে ঢাকা থেকে যাত্রা করেন। একই দিন স্থানীয় সময় দুপুরে তার গ্লাসগো পৌঁছার কথা। ১ নভেম্বর সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা। এদিনই তিনি সম্মেলনে ভাষণ দেবেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী কমনওয়েলথ প্যাভিলিয়নে সিভিএফ- ‘কমনওয়েলথ হাই লেভেল প্যানেল ডিসকাশন অন ক্লাইমেট প্রসপারিটি পার্টনারশিপ’ শীর্ষক একটি সাইট ইভেন্টে যোগ দেবেন। ২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী ‘ওমেন অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের সভায় যোগ দেবেন।
এ সব আয়োজনে প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর হয়ে জোরালো বক্তব্য উপস্থাপন করবেন বলে ঢাকায় ৩০ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলনে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা তার ভাষণে প্রধানত জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবেলায় উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুত ১০০ বিলিয়ন ডলারের বার্ষিক তহবিলের বিষয়টি তুলে ধরবেন। পরিবেশমন্ত্রী শাহাবাউদ্দিন জানান, প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশসহ ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর সমস্যার কথা তুলে ধরবেন সম্মেলনে।
এদিকে, বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপ্টেশনের প্রধান নির্বাহী প্যাট্রিক ভারকুইজেনের সঙ্গে যৌথভাবে নিউজউইক সাময়িকীতে একট নিবন্ধ লিখেছেন। ওই নিবন্ধে তারা জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্কট মোকাবেলায় বিশ্বকে আরও বড় পরিসরে লক্ষ্য নির্ধারণের আহ্বান জানান। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর জন্য তারা জরুরি তহবিল যোগানের কথাও বলেন।
নিবন্ধে হাসিনা-প্যাট্রিক বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মালদ্বীপ ও মার্শাল আইল্যান্ড সমুদ্রে তলিয়ে যাবে। ১৬ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশে উপকূলীয় এলাকায় লবনাক্ততা বেড়ে বড় এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর তাপদাহ-খরায় মধ্যপ্রাচ্যের অনেক এলাকা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে।
জলবায়ু সঙ্কট মোকাবেলায় তারা দুই দফা দাবি তুলে ধরেন-
এক. কার্বন নিঃসরণ বৃদ্ধি প্রাক শিল্পযুগের চেয়ে ১ দশমিক ৫ শতাংশে সীমিত রাখতে হবে।
দুই. উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুত বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলার তহবিল নিশ্চিত করতে হবে।
প্রসঙ্গত: ২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে এ দুটি বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা রক্ষিত হয়নি। নিবন্ধে হাসিনা-প্যাট্রিক লিখেছেন- এ তহবিল যোগান দেওয়া হলে শুধু বেশি ঝুঁকিতে থাকা ৪৮ দেশ নয়, ঝুঁকিতে থাকা সব দেশই উপকৃত হবে।
কোভিড মহামারিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে ভাবে দ্রুত সাড়া দিয়েছিল, একইভাবে মানবজাতির অস্তিত্ব সঙ্কটের হুমকি তৈরি করা জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদ মোকাবেলায় একইরকম উদ্যোগী ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে আসতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানান হাসিনা-প্যাট্রিক।
বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে মূল অধিবেশন ও পার্শ্ব অনুষ্ঠানগুলোতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অংশগ্রহণ ও নিউজইউকে তার যৌথপ্রবন্ধ- এ ইস্যুটিতে বাংলাদেশের জোরালো অবস্থান তুলে ধরবে আশা করা যায়।
গ্লাসগোতে জলবায়ু সম্মেলনের পাশাপাশি প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন শেখ হাসিনা। স্কটল্যান্ডের পার্লামেন্টে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। পরে লন্ডন হয়ে ৯ নভেম্বর প্যারিস সফরে যাবেন শেখ হাসিনা।
প্যারিসে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখো এবং প্রধনমন্ত্রী জিন কাস্টেক্সের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। এ সময় ফ্রান্স ও বাংলাদেশের মধ্যে কয়েকটি সমঝোতাস্মারক স্বাক্ষরের কথা রয়েছে।
এছাড়া প্যারিসে ইউনেস্কো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ফর দ্য ক্রিয়েটিভ ইকোনোমি’ পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
সবকিছু মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৫ দিনব্যাপী ইউরোপ সফর ফলপ্রসু হবে এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে এমনটা আশা করা যায়।
মাহমুদ হাশিম
ঢাকা স্টেশন, চীন আন্তর্জাতিক বেতার।