ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ
2021-10-30 19:25:58

বাংলাদেশের ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য দেশের সরকারের গৃহীত মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে জাতিসঙ্ঘ যুক্ত হয়েছে। সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং জাতিসঙ্ঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর বাংলাদেশের প্রতিনিধি সমঝোতা স্মারকে বা এমওইউ স্বাক্ষর করেছেন। এই স্মারকের আলোকে আশ্রয় দেওয়া রোহিঙ্গাদের খাদ্য বস্ত্র বাসস্থান চিকিত্সা শিক্ষার মতো মৌলিক প্রয়োজন পূরণে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

 

দুই দশক আগে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের সমুদ্রে জেগে ওঠা দ্বীপটি হলো ভাসানচর। সেখানে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বসবাসের ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ সরকার। সেখানকার পরিবেশ দেখে প্রথমদিকেই বেশিরভাগ রোহিঙ্গা তাদের সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছিলেন। তবে, বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছিল, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে কারিগরি মূল্যায়ন ছাড়াই সরকারের রোহিঙ্গাদের এভাবে স্থানান্তর করা উচিত হয়নি।

ধীরে ধীরে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জীবনমান উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে। সম্প্রতি সাক্ষরিত এমওইউ অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের খাদ্য ও পুষ্টি, সুপেয় পানি, পয়ঃনিষ্কাশন, চিকিৎসা, দক্ষতা প্রশিক্ষণ, মিয়ানমারের ভাষায় পাঠক্রম ও অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা এবং জীবিকায়নের ব্যবস্থা করবে বাংলাদেশ সরকার। এর ফলে, রোহিঙ্গারা আরো উন্নত জীবনের সাময়িক নিশ্চয়তা লাভ করল। অন্যদিকে বাংলাদেশের জন্য তা এক ধরনের কূটনৈতিক সাফল্য বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে এটি পূর্ণতা পাবে ভাসানচর থেকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের মাধ্যমেই। আর এ বিষয়েও কাজ করছে বাংলাদেশ সরকার।

 

ভাসানচরে জাতিসঙ্ঘের সম্পৃক্ততার কারণে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গারা সেখানে সচ্ছল জীবনযাপন করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে মিয়ানমারে টেকসই প্রত্যাবর্তনের জন্য তারা আরও ভালোভাবে প্রস্তুতিও নিতে পারবে বলে ইউএনএইচসিআর বিবৃতি দিয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কক্সবাজারে অবস্থিত রোহিঙ্গাদের মতো ভাসানচরে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গারাও সমান মানবিক সহায়তা পাবে। চুক্তির ফলে আনন্দিত রোহিঙ্গারা ভাসানচর এবং কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে র‌্যালি, মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করে। ‘স্বাগত জাতিসঙ্ঘ’, ‘ধন্যবাদ বাংলাদেশ’সহ বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড, ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে র‌্যালি করে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ সরকার ও জাতিসঙ্ঘের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে স্লোগান দেয়।

 

উল্লেখ্য, রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের জন্য ২০১৭ সালেই দ্বীপটিতে এই আশ্রয়ণ প্রকল্প হাতে নেয় বাংলাদেশ সরকার। আর তখন থেকেই জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ আন্তর্জাতিক অর্থায়নে পরিচালিত উন্নয়ন সংস্থাগুলো এর বিরোধিতা করে আসছে।

এরপর ২০১৯ সালের ৪ ডিসেম্বর ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর শুরু হয়। এ পর্যন্ত ছয় দফায় প্রায় ১৯ হাজার রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করা হয়। ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করে এক লাখের বেশি মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরিকল্পিত ও প্রশস্ত আবাসন, স্কুল, মাঠ, মসজিদ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও সাইক্লোন শেল্টারসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে ভাসানচরে। মানবতার খাতিরে বাংলাদেশ যেখানে রোহিঙ্গাদের জন্য প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন ডলার খরচ করে শরণার্থী ব্যবস্থাপনার মডেল হিসেবে ভাসানচরের মতো দৃষ্টান্তমূলক প্রকল্প হাতে নিয়েছে, সেখানে কিছু মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংগঠনের বিরোধিতা সত্যিই হাস্যকর।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর গণহত্যা ও হিংস্র উচ্ছেদ অভিযান থেকে পালিয়ে আসা প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয় বাংলাদেশ। নতুন ও পুরনো মিলিয়ে বর্তমানে ১১ লাখ রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় অবস্থান করছে। রোহিঙ্গাদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা এবং তাদের রক্ষার্থে আপাতত এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বাংলাদেশ।