অক্টোবর ২৯: বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় যোগদানের পর থেকে চীন নিজের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে আসছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বিভিন্ন সদস্যদেশ ও খোদ সংস্থার মহাপরিচালক এ মন্তব্য করেছেন। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় চীনের বাণিজ্যনীতিসংক্রান্ত অষ্টম পর্যালোচনাসংক্রান্ত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে চীনের উপ-বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং শৌ ওয়েন সম্প্রতি এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় যোগদানের সময় ‘চীনের ডাব্লিউটিও অ্যাকসেসন চুক্তি’ এবং ‘ওয়ার্কিং গ্রুপে চীনের যোগদানের প্রতিবেদনে’ সংস্থায় চীনের দায়িত্ব ও সেসব দায়িত্ব পালনের জন্য সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঠিক করে দেওয়া হয়। চীন নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই নিজের সকল দায়-দায়িত্ব পালন করেছে।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় যোগ দেওয়ার পর সংস্থার নিয়মবিধির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য চীন নিজের সংশ্লিষ্ট আইন ও নিয়মও সংশোধন করেছে। এ প্রসঙ্গে ওয়াং শৌ ওয়েন বলেন,
“চীনের কেন্দ্রীয় সরকার সংশ্লিষ্ট ২ সহস্রাধিক নিয়মকানুন সংশোধন করেছে এবং স্থানীয় সরকার পর্যায়ে সংশোধিত নিয়মকানুনের সংখ্যা এক লাখ ৯০ হাজারের বেশি। আমরা আমাদের সংশ্লিষ্ট আইনব্যবস্থাকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ডাব্লিউটিও’র আইনের সঙ্গে মানানসই করে নিয়েছি।”
বাজার উন্মুক্তকরণের ব্যাপারে চীনের প্রতিশ্রুতি ছিল পণ্যের ওপর শুল্ক ৯.৮ শতাংশে নামিয়ে আনা। বর্তমানে চীনে আমদানিপণ্যের ওপর গড় শুল্ক মাত্র ৭.৪ শতাংশ, যা সকল উন্নয়নশীল সদস্যদেশের তুলনায় কম। পরিষেবা খাতের উন্মুক্তকরণের প্রশ্নেও চীন তার প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছে। তিনি বলেন,
“আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই লক্ষ্যমাত্রা সম্পূর্ণভাবে পূরণ করেছি। এখন চীনের আমদানি শুল্ক মাত্র ৭.৪ শতাংশ, যা সকল উন্নয়নশীল সদস্যদেশের চেয়ে কম এবং উন্নত সদস্যদেশগুলোর কাছাকাছি। পরিষেবা খাতের সংশ্লিষ্ট শর্ত অনুযায়ী, ২০০৭ সালে ৯ রকমের ১০০টি বিভাগ উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে প্রায় ১২০টি বিভাগ উন্মুক্ত করা হয়েছে।”
মেধাস্বত্ব খাতেও চীন শুধু সংশ্লিষ্ট আইন ও নিয়মকানুন সংশোধন করেছে তা নয়, আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রেও চীন কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। চীন এ ব্যাপারে স্বচ্ছতার পরিচয় দিয়েছে। চীন সময়মতো বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কাছে দেশের আইন সংশোধন ও প্রণয়নসংক্রান্ত এক হাজারেরও বেশি নোটিশ পেশ করেছে। তিনি বলেন,
“নোটিশ পেশ করার সময় কোনো কম্পানি বা শিল্পের জন্য সরকারি ভাতাসংক্রান্ত তথ্য জানিয়ে দেওয়া খুব মুশকিল। অনেক সদস্যদেশ, বিশেষ করে উন্নয়নশীল সদস্যরা মনে করে, এটা খুব কঠিন। চীন সরকার এ ক্ষেত্রেও সময়মতো ডাব্লিউটিও’র কাছে সংশ্লিষ্ট তথ্য উপস্থাপনে কার্পণ্য করেনি। চলতি বছরের জুলাই মাসে আমরা ২০১৯-২০২০ সালের ভাতানীতি সম্পর্কে ডাব্লিউটিও-কে জানিয়েছি। এ ক্ষেত্রে আমরা অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের জন্য একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি।”
তা ছাড়া, ডাব্লিউটিও-র চীনসংক্রান্ত বিভিন্ন বিচারও বেইজিং মেনে নিয়েছে। তিনি বলেন,
“কোনো কোনো বিচার চীনের বিপক্ষে গেছে। তারপরও চীন সব মেনে নিয়েছে এবং সে অনুসারে কাজ করেছে। চীন ডাব্লিউটিও’র কোনো বিচারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেনি। চীন সত্যিকার অর্থেই নিজের দায়িত্ব ও প্রতিশ্রুতি পালন করেছে।”
তিনি আরও বলেন, ডাব্লিউটিও’র কোনো কোনো সদস্যদেশ ডাব্লিউটিও’র নির্ধারিত নিয়মকানুনের বাইরে গিয়ে চীনের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। এসব চাপের মুখেও চীন ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে ও ডাব্লিউটিও-র নিয়ম মেনে চলেছে।
মোদ্দাকথা, চীন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় যোগদানের পর থেকে সুন্দরভাবে ও সময়মতো নিজের দায়িত্ব পালন করে আসছে। এটা শুধু চীনের দাবি নয়, বরং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্যদেশগুলোর সাক্ষ্য। (ইয়াং/আলিম/ছাই)