আজকের টপিক: জাতিসংঘে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের বৈধ আসন ফিরে পাওয়ার সুবর্ণ জয়ন্তী প্রসঙ্গে
2021-10-28 16:19:23

অক্টোবর ২৮: ১৯৭১ সালের ২৫ অক্টোবর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের  ২৬তম অধিবেশনে ২৭৫৮ নম্বর প্রস্তাব গৃহীত হয়। আর এর মাধ্যমে জাতিসংঘে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন তার বৈধ আসন ফিরে পায়।

জাতিসংঘে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের বৈধ আসন ফিরে পাওয়ার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষ্যে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি-মুন চায়না মিডিয়া গ্রুপ (সিএমজি)-কে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে বলেন, জাতিসংঘে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের বৈধ আসন ফিরে পাওয়া হচ্ছে জাতিসংঘের উন্নয়নের ইতিহাসে একটি মহান মাইলফলক। ‘আজকের টপিক’ আসরে আমরা এ নিয়ে আলোচনা করবো।

বান কি-মুন বলেন, জাতিসংঘে নিজের বৈধ আসন ফিরে পাওয়ার পর থেকে চীন সবসময় জাতিসংঘকেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক মঞ্চে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এর ফলে জাতিসংঘও সত্যিকার অর্থে একটি বৈশ্বিক সংস্থায় পরিণত হয়।

১৯৭০ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কাজ শুরু করেন বান কি-মুন। আর ১৯৭১ সালের অক্টোবরে জাতিসংঘে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন তার বৈধ আসন ফিরে পায়। তখন একজন জুনিয়র কর্মকর্তা হিসেবে তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী। ১৯৮০ সালে বান কি-মুন দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতিসংঘবিষয়ক গ্রুপের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ঠিক সেসময় থেকেই তিনি ঘনিষ্ঠভাবে জাতিসংঘে চীনের ভূমিকা পর্যবেক্ষণ করে আসছেন।

২০০৬ সালের অক্টোবরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬১তম অধিবেশনে বিশ্ব সংস্থাটির অষ্টম মহাসচিব নির্বাচিত হন বান কি-মুন। পূর্ব এশিয়া থেকে তিনি হলেন প্রথম ও এশিয়া থেকে দ্বিতীয় জাতিসংঘ মহাসচিব। তিনি বলেন,

“চীন শুধু জাতিসংঘের অন্যতম সদস্যরাষ্ট্রই নয়, এটি একটি বিশেষ সদস্যরাষ্ট্র যে বিশ্বশান্তি ও উন্নয়ন এবং অন্যান্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে থাকে। আমি দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতিসংঘ বিভাগে কাজ শুরু করার পর থেকে, জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে আমার মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত, চীনের কর্মতত্পরতা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি। জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে আমার নির্বাচিত হওয়ার পেছনেও ছিল চীনের সমর্থন।”

বিগত ৫০ বছর চীন সক্রিয়ভাবে একটি প্রধান দেশের দায়িত্ব পালন করেছে, সত্যিকারের বহুপাক্ষিকতা চর্চা করেছে, নিজের আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতাগুলি দায়বদ্ধতার সাথে পালন করেছে এবং বিশ্বশান্তি বজায় রাখতে ও অভিন্ন উন্নয়নকে ত্বরান্তিত করতে জাতিসংঘের মহৎকার্যক্রমকে নিরবচ্ছিন্নভাবে সমর্থন করেছে। জাতিসংঘের প্রাক্তন মহাসচিব হিসেবে, বান কি-মুন জাতিসংঘে চীনের সকল অবদান পর্যবেক্ষণ করেছেন; তিনি চীনের কাছে কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন,

“চীন জাতিসংঘের সকল বৈশ্বিক কাজে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে৷ চীন শান্তি বজায় রাখার জন্য বিশ্ব-মানের সম্মেলনেও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে। এক্ষেত্রে ইরান-পরমাণুচুক্তির কথা উল্লেখ করা যায়। জাতিসংঘের সহস্রাব্দের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে চীন একটি ভালো দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। উদাহরণস্বরূপ, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার প্রথম লক্ষ্য হলো চরম দারিদ্র্য দূর করা। চীনের অবদানের কারণেই এই লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব। উন্নয়নশীল দেশগুলোকে চীন অনেক অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করেছে৷ চীন বরাবরই বিশ্বশান্তির পক্ষের শক্তি হিসেবে কাজ করেছে, বৈশ্বিক উন্নয়নে অবদান রেখেছে, এবং আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা রক্ষায় রেখেছে দায়িত্বশীল ভূমিকা। চীন জাতিসংঘের দায়িত্বশীল সদস্য হিসাবে নিজের দায়িত্ব পালন করে এসেছে নিষ্ঠার সঙ্গে।"

জাতিসংঘে নিজের বৈধ আসন ফিরে পাওয়ার পর থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন অনেক সাফল্য অর্জন করেছে। বিশেষ করে, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, চীন ক্রমাগত উচ্চ-মানের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন অর্জন করেছে। বান কি-মুন শুধু চীনের অর্জন নিয়েই উচ্ছ্বসিত ছিলেন না, বরং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে ব্যাপক অগ্রগতির পর উন্নয়নশীল দেশগুলোকে তাদের উন্নয়ন সক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করার জন্য চীনের প্রচেষ্টার প্রশংসাও করেন। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)