অক্টোবর ২৮: মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টোনিও ব্লিনকেন গত মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেন, তাইওয়ানকে সক্রিয় ও অর্থপূর্ণভাবে জাতিসংঘব্যবস্থায় অংশগ্রহণ করতে দেওয়া উচিত। আর এর ঠিক আগের দিন, ২৫ অক্টোবর ছিল জাতিসংঘে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের বৈধ আসন ফিরে পাওয়ার সুবর্ণ জয়ন্তী। ঠিক এ সময়ে তাইওয়ান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এহেন মন্তব্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এর মাধ্যমে তিনি ‘এক-চীন নীতি’-কে যেমন চ্যালেঞ্জ করেছেন, তেমনি ১৪০ কোটি চীনা জনগণের ধৈর্যের পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। বস্তুত, এক্ষেত্রে তিনি সব ধরনের সীমা লঙ্ঘন করেছেন।
গত সেপ্টেম্বর মাসে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের ফোনালাপ অনুষ্ঠিত হয়। তখন মার্কিন নেতা স্পষ্টই বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘এক-চীন নীতি’ মেনে চলবে। অক্টোবর মাসে মার্কিন পক্ষ আবারও ‘এক-চীন নীতি’ অনুসরণের প্রতিশ্রুতি দেয়। এসব কথা বলা হয়েছে মাত্র কিছুদিন আগে। অথচ এখন মার্কিন পক্ষ তাইওয়ানের জাতিসংঘে উপস্থিতিকে সমর্থন করে বিবৃতি দিচ্ছে। এর মানে, মুখে এক রকম, আচরণে আরেক রকম আচরণ করছে যুক্তরাষ্ট্র, যা দুর্ভাগ্যজনক।
কোনো সার্বভৌম দেশই কেবল জাতিসংঘে যোগ দিতে পারে। এ কথা সবাই জানে। গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সরকার গোটা চীনের প্রতিনিধিত্ব করে। এই সরকার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত চীনের একমাত্র বৈধ সরকার। অন্যদিকে, তাইওয়ান চীনের একটি অংশ, যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। তাইওয়াকে কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থায় অংশগ্রহণ করতে হলে ‘এক-চীন নীতি’র ভিত্তিতে করতে হবে। এটাও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিষয়। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কর্মকর্তারা ‘আন্তর্জাতিক সংস্থায় তাইওয়ানের যোগদান তাত্পর্যপূর্ণ’ বা ‘জাতিসংঘে তাইওয়ানের যোগদান অর্থপূর্ণ’—এ ধরনের কথাবার্তা বলে আসছে, যা ‘এক-চীন নীতি’ এবং ‘চীন-যুক্তরাষ্ট্র তিনটি যৌথ ইস্তাহারের’ লঙ্ঘন। এ আচরণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা ও নিয়মের প্রতিও সুস্পষ্ট চ্যালেঞ্জস্বরূপ।
তাইওয়ান একটি রাজনৈতিক বিষয়, মূল্যবোধের বিষয় নয়। জাতিসংঘের সাধারণ সম্মেলনের ২৭৫৮ নম্বর প্রস্তাবে পরিষ্কারভাবে রাজনৈতিক, আইনগত ও যথাযথ প্রক্রিয়ার ভিত্তিতে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের বৈধ আসন নিশ্চিত করা হয়। মার্কিন পক্ষের ইতিহাস ও আইন উপেক্ষা করার অপপ্রয়াস জাতিসংঘ মূল্যবোধেরও লঙ্ঘন।
মার্কিন পক্ষ বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় তাইওয়ানের যোগদান না-করা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে: তাইওয়ান কি সত্যিকার অর্থেই এসব সংস্থায় যোগদান করতে পেরেছে? উত্তর হচ্ছে: অবশ্যই না। এখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। ২০০৯ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তাইওয়ান ‘চীনের তাইপেই’ নামে পর্যবেক্ষক হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাধারণ সম্মেলন অংশগ্রহণ করেছিলো। সেটি সম্ভব হয়েছিল ‘এক-চীন নীতি’ ও ‘৯২ ঐকমত্য’-এর ভিত্তিতে, আলোচনার মাধ্যমে। কিন্তু ২০১৬ সালে তাইওয়ানে ক্ষমতায় আসার পর থেকে মিনচিন পার্টি ‘৯২ ঐকমত্য’ অস্বীকার করে আসছে এবং ‘স্বাধীন তাইওয়ান’ ধারণা বাস্তবায়নের অপচেষ্টা করছে। আর এটাই হচ্ছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাইওয়ানের আন্তর্জাতিক সংস্থায় অংশগ্রহণ করতে না-পারার মূল কারণ।
তারপরও, তাইওয়ান অঞ্চল আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার কাছ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়ে থাকে এবং বিশ্বের বিভিন্ন শহরের সঙ্গে বিমান চলাচল বজায় রাখতে পারছে। ‘এক-চীন নীতি’র ভিত্তিতে তাইওয়ান অঞ্চলের স্বাস্থ্যবিষয়ক বিষেশজ্ঞ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সম্মেলনে অংশগ্রহণও করতে পারেন।
মার্কিন পক্ষের তাইওয়ান নিয়ে খেলার লক্ষ্য খুব স্পষ্ট, আর তা হলো: তাইওয়ানকে দিয়ে চীনকে দমন করা। কিন্তু এ ব্যাপারে চীনের অবস্থান সুদৃঢ় ও পরিষ্কার। তাইওয়ান হলো চীনের কেন্দ্রীয় স্বার্থ; ‘এক-চীন নীতি’ লঙ্ঘন করা যাবে না। মার্কিন পক্ষের উচিত, সীমা লঙ্ঘন না-করা এবং তাইওয়ান ইস্যুতে চীনা জনগণের ধৈর্যের পরীক্ষাগ্রহণ অবিলম্বে বন্ধ করা।
(ইয়াং/আলিম/ছাই)