সিরিয়ার ফটোগ্রাফার মালাস
2021-10-27 17:50:43

সিরিয়ার ফটোগ্রাফার মালাস_fororder_马拉斯

শরত্কালের এক দুপুরে সিরীয় আলোকচিত্রকর ওমর মালাস আগের মতোই ভবনের ছাদে গিয়ে ক্যামেরা দিয়ে দামেস্কের ক্যাসিওন পাহাড়ের নিচে একটি আবাসিক এলাকার ছবি তুলছিলেন।

৩৮ বছর বয়সী মালাস ফ্রান্সে চলচ্চিত্র তৈরি করা শিখেছেন। সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের আগে তাঁর কাজ ছিলো সিরিয়ার ঐতিহাসিক পুরাকীর্তি নিয়ে তথ্যচিত্র নির্মাণ করা। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তিনি সিরিয়ায় অবস্থান করেন এবং রাজধানী দামেস্কের একটি আবাসিক ভবনের উপর তলা ভাড়া নেন। তিনি প্রায়ই ছাদ থেকে শহরের দিকে তাকিয়ে থাকতেন এবং ক্যামেরা দিয়ে যুদ্ধের সময় সাধারণ নাগরিকদের জীবনযাত্রা রেকর্ড করতেন।
 
মালাস নিজেকে কাকের সঙ্গে তুলনা করতেন। তিনি মনে করেন, দামেস্কের এই সাধারণ পাখির সঙ্গে তার অনেক মিল রয়েছে। আমরা উপর থেকে পর্যবেক্ষণ করি। কাক খাবার বাছাই করে এবং আমি ছবি বাছাই করি। সিনহুয়া বার্তা সংস্থার সাংবাদিককে এভাবেই বলেন মালাস।
 
কয়েক বছর আগেও মালাস তার ছাদে বসে কাকের মতো দামেস্ক শহরের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা পর্যবেক্ষণ করতেন এবং অসংখ্য ছবি তুলতেন। তিনি এসব ছবি বইয়ের আকারে সংকলন করবেন এবং এটি ‘কাকের চোখ’ নামে প্রকাশ করবেন।

কাক সম্পর্কে এই অ্যালবামে মালাস যুদ্ধের ছায়ায় বাস করা দামেস্কবাসীর জীবন তুলে ধরেছেন। যেমন, শীতের সকালে ত্রাণ সরবরাহ নেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়ানো পুরুষ, রাস্তার বেঞ্চে রাত কাটানো গৃহহীন মানুষ, ফল ও সবজির স্টলের পাশে অপেক্ষা করা বৃদ্ধ ও শিশু, দেয়ালের পাশে ভিক্ষুক, গ্রামের পশুপালক, রাস্তার পাশে চুপচাপ বসে থাকা মা ও ছেলে...।

এসব শিল্পকর্মে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাধারণ সিরীয় জনগণের বাসস্থানের ক্রম অবনতির অবস্থা প্রতিফলিত হয়েছে। ঘন ঘন যুদ্ধ, নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর সংক্রমণ এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে স্থানীয় জনগণের জীবন ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠেছে। পণ্যের অভাব এবং তেল ও গ্যাসের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। অনেক তরুণ-তরুণী বিদেশে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে।

জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সিরিয়ার মানুষের আয়ু ২০১০ সালের ৭০ বছর থেকে ২০১৪ সালের ৫৫.৪তে নেমে যায়। সিরিয়ার জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশ আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করছে। যুদ্ধের আগে যা তিন শতাংশেরও কম ছিল। 

মালাস মনে করেন, তার ক্যামেরায় ধারণ করা সিরিয়ার সাধারণ মানুষ যুদ্ধের জন্য দায়ী ছিল না। কিন্তু তারা যুদ্ধের মধ্যে আটকা পড়েছিল। তাদের প্রতি আরও মনোযোগ দেওয়া উচিত ছিল, কিন্তু তারা ভুলে যাওয়া মানুষ হয়ে ওঠে।

প্রতিদিনের শুটিংয়ে তিনি মাঝেমাঝে কঠিন জীবনের মুখে পড়া মানুষের দৃঢ়তায় অনুপ্রাণিত হন। তিনি বলেন, শুটিংয়ে সময় আমি মানুষের মুখে ভয় ও বিস্ময় দেখেছি। তবে সঙ্গে সঙ্গে আমি মানুষের মুখে বিশ্বাসও দেখেছি। খুব শক্তিশালী এক ধরণের বিশ্বাস। তিনি স্মরণ করে বলেন, তারা আমাকে শিখিয়েছিলো যে, কীভাবে জীবনের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হয়।

জীবনের এই বিশ্বাসই মালাসের স্বদেশে থাকার সংকল্প জোরদারে সমর্থন দেয়। তার বন্ধু ও সহকর্মীরা একের পর এক সিরিয়া ছেড়ে চলে গেলেও, মালাস প্রায় জোর করে সেখানে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। যদিও তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে বসবাস করেছেন। তিনি বলেন, এখানে তার আত্মীয়-স্বজন এবং প্রেমিক আছে, জীবন যতই কঠিন হোক না কেন, তাতে অবিচল থাকতে হবে।

মালাস বলেন, তিনি আগামীতে একদিন ক্যামেরার মাধ্যমে আরো বেশি সিরীয় মানুষদের হাসিমুখ এবং তাদের সুখের গল্প রেকর্ড করতে চান। রাস্তায় লোকদের হাসির দৃশ্য ও সুখ রেকর্ড করতে চাই। 
‘কাকের চোখ’ নামের এই অ্যালবামে মালাস ধ্বংসাবশেষ এবং আগাছায় ভরা ছবির নিচে একটি প্রশ্ন রেখেছেন যে, দীর্ঘ রাত কীভাবে কাটবে?

দিদ্বীয় অংশে করোনার মধ্যেও ভালো আয় করা ১০টি ছবির দিকে দৃষ্টি দেবো।

করোনার কারণে প্রায় দুই বছর ধরে সারা বিশ্বে সিনেমা ব্যবসায় বড় ধরনের ধস চলছে। ডিজনি, প্যারামাউন্ট, সনি পিকচার্সের মতো বড় বড় প্রযোজনা ও ডিস্ট্রিবিউশন প্রতিষ্ঠানগুলো সিনেমা মুক্তির ঘোষণা দিয়েও পিছিয়ে এসেছে। তবে এ বছর থেকে সিনেমা মুক্তির সংখ্যা বাড়তে থাকে। মন্দার মধ্যেও যে ১০টি সিনেমা আয়ে রেকর্ড করেছে, আজকের অনুষ্ঠানে তার ওপর দৃষ্টি দেবো।
চীনে নববর্ষ উপলক্ষে গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী মুক্তি পায় ‘হাই, মম’। ব্ল্যাক কমেডি ধারার এ সিনেমা পরিচালনা করেন অভিনেতা ও নির্মাতা জিয়া লিং। এখন পর্যন্ত ৮২ কোটি ডলার আয় করে চীনা সিনেমাটি শীর্ষ অবস্থান করছে।
বিশ্বব্যাপী আয়ে এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ইউনিভার্সাল পিকচার্সের ‘এফ ৯: দ্য ফাস্ট সাগা’। ভিন ডিজেল, মিশেল রদ্রিগেজসহ তারকাবহুল এ সিনেমা পরিচালনা করেন জাস্টিন লিন। ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’ ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রথম ছবি মুক্তির ২০ বছর পর এ সিনেমাটি মুক্তি পায়। ২৫ জুন মুক্তির পর গত ৪ মাসে সিনেমাটি ৭১ কোটি ডলার আয় করেছে।
টোকিওতে সংগঠিত ভয়ংকর একটি অপরাধের তদন্ত করতে ট্যাং রেন ও ছিন ফেং নামের দুই গোয়েন্দার ডাক পড়ে। শ্বাসরুদ্ধকর গোয়েন্দা ছবি ‘ডিটেকটিভ চায়না টাউন-৩’–এর পরতে পরতে লুকিয়ে আছে নানা রহস্য। ৬৮ কোটি ডলার আয় করে ৩ নম্বরে রয়েছে সিনেমাটি।
চীনা ছবি ‘দ্য ব্যাটল অ্যাট লেক চাংজিন’ ৬৩ কোটি ডলার আয় করে ৪ নম্বরে রয়েছে। ২১ সেপ্টেম্বর সিনেমাটি মুক্তি পায়। তিন নির্মাতা চেন কাইগে, সুই খ্য ও দান্তে লেম যৌথভাবে এটি পরিচালনা করেছেন। যুদ্ধের এ সিনেমায় এক্সট্রাই ব্যবহার হয়েছে ৭০ হাজার।
অ্যাডাম উইংগার্ড পরিচালিত ‘গডজিলা ভার্সেস কং’ সিনেমাটির টিজার মুক্তির পর থেকেই শুরু হয় উন্মাদনা। করোনার মধ্যে সিনেমাটির মুক্তি নিয়ে দোটানায় ছিল ওয়ার্নার ব্রস। গত ৩১ মার্চ মুক্তি পাওয়া সিনেমাটি ৪৬ কোটি ডলার আয় করে ৫ নম্বরে রয়েছে।
সুপার হিরোকেন্দ্রিক মারভেল কমিক ‘শাং-চি অ্যান্ড দ্য লিজেন্ড অব দ্য টেন রিংস’ ৪০ কোটি ডলার আয় করে সেরা আয়ের দিক থেকে ৬ নম্বরে অবস্থান করছে। সিনেমার বাজেট ছিল প্রায় ২০ কোটি ডলার। সিনেমাটি পরিচালনা করেন ডাস্টিন ড্যানিয়েল ক্রেটন।
‘ব্লাক উইডো’ সিনেমার বাজেট ছিল ২০ কোটি ডলার। ৮ জুলাই মুক্তির পরই সিনেমাটি আলোচনায় আসে। ওয়াল্ট ডিজনির স্টুডিও মোশন পিকচারের সিনেমাটির এখন পর্যন্ত আয় ৩৭ কোটি ডলার। মার্ভেল কমিকসের সিনেমাটি পরিচালনা করেন কেট শর্টল্যান্ড। 
সম্প্রতি আশা জাগিয়েছে জেমস বন্ড সিরিজের ২৫তম সিনেমা ‘নো টাইম টু ডাই’। মুক্তির তিন সপ্তাহ না পেরোতেই বিশ্বব্যাপী আয়ে এটি ৮ নম্বরে উঠে এসেছে। সপ্তাহের আয়েও রেকর্ড করেছে। প্রায় ১ লাখ ভোট পেয়ে সিনেমাটির আইএমডি রেটিং ৭.৬। সিনেমাটি প্রধান আকর্ষণ ডেনিয়েল ক্রেইগ।
আমেরিকান সায়েন্স ফিকশন এবং কমেডি ধারার সিনেমা ‘ফ্রি গাই’। বাজেটের চেয়ে তিনগুণ আয় করে সিনেমাটি এখন পর্যন্ত আয়ের দিকে ৯ নম্বরে আছে। বিশ্বব্যাপী আয় করেছে ৩২ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এটি পরিচালনা করছেন শন লেভি। ১৩ আগস্ট সিনেমাটি মুক্তি পায়। 
ড্রামা, হরর এবং সায়েন্স ফিকশনের মিশেল ‘আ কোয়ায়েট প্লেস পার্ট টু ’। গত বছরের ৮ মার্চ সিনেমাটির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয়। বিশ্বব্যাপী করোনা ছড়িয়ে পরায় সেই সময় ছবিটির মুক্তি বাতিল হয়। এ বছরের ২৮ মে আবার বিশ্বব্যাপী সিনেমাটি মুক্তি দেওয়া হয়। ৫ কোটি ৫০ লাখ ডলারের এ সিনেমাটি ২৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার আয় করেছে। প্যারামাউন্ট পিকচারের এ সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন জন ক্রাসিনস্কি। লিলি/তৌহিদ/শুয়ে