অক্টোবর ২৫: আজ (সোমবার) জাতিসংঘে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের বৈধ আসন ফিরে পাওয়ার ৫০তম বার্ষিকী। এ উপলক্ষ্যে বেইজিংয়ে একটি বিশেষ সভার আয়োজন করা হয়েছে। সভায় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ভাষণ দেবেন।
জাতিসংঘে নিজের বৈধ আসন ফিরে পাওয়ার পর থেকে, গত ৫০ বছরে চীন সবসময় বহুপক্ষবাদ অনুসরণ করে আসছে এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যুতে জাতিসংঘের কেন্দ্রীয় ভূমিকা ও বিভিন্ন কার্যক্রমকে সমর্থন করে আসছে।
চীন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, বিশ্বের একমাত্র বৈধ ব্যবস্থা হলো জাতিসংঘকেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা; বিশ্বের একমাত্র শৃঙ্খলা হলো আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা; বিশ্বের একমাত্র নিয়মকানুন হলো জাতিসংঘের সনদ ও নিয়মের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মৌলিক নিয়ম।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বহু বার জোর দিয়ে বলেছেন, চীন সবসময় আসল বহুপক্ষবাদ অনুসরণ করে এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ে জাতিসংঘের কেন্দ্রীয় ভূমিকাকে সমর্থন করে ও করবে। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার ৭০তম বার্ষিকীতে আয়োজিত সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট সি বলেন,
“ইতিহাসের নতুন সূচনায় দাঁড়িয়ে জাতিসংঘের ভাবা উচিত একবিংশ শতাব্দীতে বিশ্বের শান্তি ও উন্নয়ন বাস্তবায়নের কথা। বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন দেশ পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। আমাদের অব্যাহতভাবে জাতিসংঘ সনদের চেতনা ও নিয়ম মেনে নিয়ে, সহযোগিতা ও উপকারিতামূলক নতুন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গঠন করে মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি গঠন করা উচিত।”
উক্ত সম্মেলনে জাতিসংঘের ধারাবাহিক উদ্যোগ ও ব্যবস্থার প্রতি আবারও সমর্থন ঘোষণা করেন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। তিনি চীন-জাতিসংঘ শান্তি ও উন্নয়ন তহবিল প্রতিষ্ঠা, দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা সহায়তা তহবিল প্রতিষ্ঠা এবং দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা ও উন্নয়ন ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার কথা বলেন। এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলোর চাহিদা পূরণের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করেছে চীন।
বলা বাহুল্য, এসব পদক্ষেপ ও উদ্যোগ ফলপ্রসূ হয়েছে। চীন-জাতিসংঘ শান্তি ও উন্নয়ন তহবিল ইতোমধ্যে বহুপক্ষবাদের সমর্থক-প্রকল্পে পরিণত হয়েছে। চীন এ তহবিলে মোট ১২ কোটি মার্কিন ডলার দিয়েছে এবং এর আওতায় ১১২টি সহযোগিতা-প্রকল্পকে সমর্থন দিয়েছে। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে চীন ঘোষণা করেছে যে, ২০২৫ সালে তহবিলের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আরও ৫ বছর তা স্থায়ী হবে।
বেইজিং ফরেন স্টাডিজ ইউনিভার্সিটির পেইওয়াই ইনস্টিটিউটের উপ-পরিচালক লিউ থিয়ে ওয়া মনে করেন, চীন-জাতিসংঘ শান্তি ও উন্নয়ন তহবিলের প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের প্রতি চীনের দৃঢ় সমর্থন প্রতিফলিত হয়। তিনি বলেন,
“চীন-জাতিসংঘ শান্তি ও উন্নয়ন তহবিল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে চীনের প্রতি জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সমাজের উচ্চ প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে এবং এটা আমাদের শান্তি ও উন্নয়নের পথে চলার দৃঢ় প্রতিজ্ঞার বহিঃপ্রকাশ।”
এদিকে, এ পর্যন্ত দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা সহায়তা তহবিল বিশ্ব খাদ্য কর্মসুচি এবং ইউএনডিপিসহ ডজন খানেক আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা করে আসছে। ইতোমধ্যে ৫০টিরও বেশি দেশে স্থানীয়দের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে এই তহবিল শতাধিক প্রকল্প চালু করেছে। এতে ২ কোটিরও বেশি মানুষ উপকৃত হচ্ছে। দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা ও উন্নয়ন ইনস্টিটিউট ৬০টি দেশের জন্য ২ শতাধিক স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি শিক্ষার্থীকে অধ্যায়নের সুযোগ দিয়েছে।
২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারী শুরু হওয়ার পর দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা সহায়তা তহবিলের কাঠামোতে চীন অনেক দেশে টিকা, মহামারী প্রতিরোধক পণ্যসামগ্রী এবং চিকিত্সা সাজসরঞ্জাম সরবরাহ করেছে। জাতীয় আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতা ব্যুরোর উপ-মহাপরিচালক জাং মাও ইয়ু বলেন,
“মহামারী শুরুর পর থেকে চীন বিভিন্ন পদ্ধতিতে মহামারী প্রতিরোধে সহযোগিতা চালিয়ে আসছে। এর মধ্যে দক্ষিণ-দক্ষিণ তহবিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এ তহবিলের মাধ্যমে উতোমধ্যে ২০টিরও বেশি সহযোগিতা প্রকল্প চালু হয়েছে। ফিলিপিন্স, ইরান, ইথিওপিয়া, কংগো, বার্বাডোজসহ ২৭টি এশীয় ও আফ্রিকান দেশের ২০ লাখেরও বেশি মানুষ এতে উপকৃত হয়েছে।”
বিশ্বের বৃহত্তম উন্নয়নশীল দেশ এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য চীন। চীন জাতিসংঘের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চাদা প্রদানকারী এবং জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে সবচেয়ে বেশি চাদা দানকারী দেশে পরিণত হয়েছে।
তা ছাড়া, চীন সবসময় আসল বহুপক্ষবাদ অনুসরণের মাধ্যমে জাতিসংঘকে সমর্থন করে আসছে। চীন মনে করে, বিশ্বের ভবিষ্যৎ বিশ্বের বিভিন্ন আচরণের ওপর নির্ভর করে। সব আন্তর্জাতিক ইস্যুতে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। ব্রিটেনের ‘দা ৪৮’ গ্রুপের চেয়ারম্যান স্টেফেন পেরি মনে করেন, চীন জাতিসংঘকে বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শক্তির কেন্দ্র হিসেবে ভূমিকা পালনে সাহায্য করছে। তিনি বলেন,
“জাতিসংঘে চীন গঠনমূলক ভূমিকা রেখে আসছে। চীন জাতিসংঘকে বিশ্বের বিভিন্ন শক্তির মধ্যে সম্পর্কের কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে, যার মাধ্যমে সন্ত্রাস ও মহামারী মোকাবিলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ঐক্যবদ্ধভাবে সহযোগিতা করতে পারে।”
ইতিহাসের নতুন সূচনায় চীন অব্যাহতভাবে বিশ্ব শান্তির রক্ষাকারী, বিশ্ব উন্নয়নের অবদানকারী, আন্তর্জাতিক শৃঙ্লকার রক্ষাকারী, গণপণ্যের সরবরাহকারী হিসেবে জাতিসংঘকে আন্তর্জাতিক বিষয়ে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালনে সমর্থন করে যাবে। চীন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি গঠনের জন্য নিরলস প্রচেষ্টাও চালিয়ে যাবে। (ইয়াং/আলিম/ছাই)