পর্যালোচনা: এশিয়ার বৃহৎ দুই দেশে টিকা প্রয়োগে অগ্রগতি একটি সুখবর
2021-10-22 10:48:14

সম্প্রতি করোনার টিকা প্রয়োগের সংখ্যায় একশ কোটি ডোজের মাইলফলক অর্জন করেছে ভারত। দেশ‌টি জনসংখ্যার ১৮ বছরের বেশি বয়সী প্রায় ৭৫ শতাংশকে প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে এবং প্রায় ৩০ শতাংশকে দুই ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। এদিকে গত সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহেই ২০০ কোটিরও বেশি ডোজ টিকা দেওয়া সম্পন্ন করে চীন। তা ছাড়া, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বিশ্বকে আরও ২০০ কোটি ডোজ করোনা টিকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। করোনাভাইরাসের টিকা উৎপাদন, টিকাগ্রহণ ও বিশ্বব্যাপী বিতরণে শীর্ষস্থানে রয়েছে চীন। বিস্তারিত শুনুন আজকের সংবাদ পর্যালোচনায়।

 

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের মহামারি ছড়িয়ে পড়লে ভাইরাস নিয়ে রাজনীতি, পারস্পরিক দোষারোপ ও ভ্যাকসিন সংগ্রহ করার এক অসুস্থ প্রবণতা দেখা দেয়। তবে ধীরে ধীরে সেই সংকট কাটিয়ে উঠছে বিশ্ব। চীন সবার আগে ভ্যাকসিন উদ্ভাবন ও ভ্যাকসিনকে বৈশ্বিক গণপণ্যে পরিণত করার ঘোষণা দেয়। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে ভ্যাকসিন গবেষণা ও উদ্ভাবনে জোর তৎপরতা চালায় চীন। ফলশ্রুতিতে দেখা যায়, বিশ্বের নানা দেশ চীনের এই উদ্যোগে সাড়া দেয় এ সম্মিলিতভাবে বিশ্বের গণপণ্যকে স্বীকৃতি দেওয়া, ভ্যাকসিনের অবৈধ মজুদ বন্ধ করা এবং সারা বিশ্বে ন্যায্যভাবে টিকা বণ্টনের বিষয়ে চীনের সঙ্গে কণ্ঠ মিলায়। এ অবস্থায় জাতিসংঘের উদ্যোগে বিশ্বের অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন বণ্টনে কোভ্যাক্স উদ্যোগ গ্রহণ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এই উদ্যোগে বিশ্বের উন্নত দেশগুলো তাদের উদ্ভাবিত ভ্যাকসিন প্রদান করে এবং তা সারা বিশ্বে ন্যায্যভাবে বণ্টনের দায়িত্ব পালন করে কোভ্যাক্স।

পাশাপাশি, যেসব দেশের ভ্যাকসিন উৎপাদনে সক্ষমতা রয়েছে, তারাও নিজ দেশের মানুষের জন্য ব্যাপকভাবে ভ্যাকসিন উৎপাদন ও টিকাদানে জোর তৎপরতা শুরু করে। এ যাত্রায় ব্যাপকভাবে এগিয়ে আছে চীন।

চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদ জানায় গত সেপ্টেম্বরের শেষ দিকেই চীনে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার পরিমাণ ২২০ কোটি ডোজ ছাড়িয়ে যায়। দেশের ১১০ কোটিরও বেশি মানুষকে এসব টিকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সম্পূর্ণ বা দুই ডোজ টিকা নিয়েছে ১০২ কোটিরও বেশি মানুষ। টিকা গ্রহণকারীর সংখ্যা হিসেবের দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ। এ সংখ্যা অনুযায়ী চীনে করোনাভাইরাসের টিকার ডোজ ও টিকা নেওয়া মানুষের সংখ্যা বিশ্বের শীর্ষস্থানে রয়েছে।

এদিকে, গত বৃহস্পতিবার করোনার টিকা প্রয়োগের একশ কোটি ডোজ টিকা দিতে সক্ষম হয় ভারত। দেশ‌টি জনসংখ্যার ১৮ বছরের বেশি বয়সী প্রায় ৭৫ শতাংশকে প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে এবং প্রায় ৩০ শতাংশকে দুই ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি ভারতে করোনার টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়।

নিঃসন্দেহে এশিয়ার বৃহত্তম দুটি জনবহুল দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের আওতায় আনা গোটা বিশ্বের জন্য দারুণ সুখবর। কারণ, প্রমাণিত হয়েছে যে- অনুন্নত বা উন্নত যে কোনও দেশের মানুষই হোক না কেন, তাদেরকে যথাযথভাবে টিকা দিতে না পারলে বিশ্বে এ মহামারিকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না।

এদিকে, বাংলাদেশে এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রার অন্তত ৫০ ভাগ মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে দেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। সেই সঙ্গে বাংলাদেশেই প্রথমবারের মত চীনের সিনোফার্মের টিকা যৌথ উৎপাদনের লক্ষ্যে একটি ত্রি-পক্ষীয় সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন দুটি প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল বায়োটেক গ্রুপ অব কোম্পানিজ ও চায়না সিনোফার্ম ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশন এবং ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের সঙ্গে এই চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ সরকার।

পাশাপাশি, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কোভিড-১৯ টিকা সহায়তা দানে ব্যাপকভাবে এগিয়ে রয়েছে চীন। সম্প্রতি বিশ্বকে চীনের প্রেসিডেন্ট ২০০ কোটি ডোজ করোনা টিকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতির কথা ঘোষণা করেন। এই বছরেই এসব টিকা দেওয়া হবে। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক টিকা বিতরণ উদ্যোগ কোভ্যাক্স-এ ১০০ মিলিয়ন ডলার অর্থ সহায়তা দান করবে বেইজিং। এই বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে ৭০০ মিলিয়ন ডোজ টিকা সরবরাহ করেছে চীন। এ পর্যন্ত চীন বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাকে এসব টিকা দিয়েছে। বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ টিকা সরবরাহ করেছে চীন। যা বাংলাদেশ-সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের প্রাণ রক্ষায় অনন্য অবদান রেখেছে।