সবুজ আর্থিক নীতির কাঠামো ক্রমশ পূর্ণাঙ্গ করে তোলা ও সুবিন্যাস্ত করা হবে: চীনা গণব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা
2021-10-21 14:32:19

অক্টোবর ২১: চীন কার্বন নির্গমনের সর্বোচ্চ পরিমাণ এবং কার্বন নিরপেক্ষতার লক্ষ্য বাস্তবায়নে একটি বিস্তৃত এবং গভীর আর্থ-সামাজিক পদ্ধতিগত পরিবর্তন বাস্তবায়ন করছে। চীন ২০৩০ সালে কার্বন নির্গমনের সর্বোচ্চ পরিমাণ এবং ২০৬০ সালের আগে কার্বন নিরপেক্ষতার লক্ষ্য উত্থাপন করেছে। তাই সবুজ পুনরুদ্ধার এবং উন্নয়ন অর্জনের জন্য সবুজ ও নিম্ন-কার্বন রূপান্তর জোরদার করবে চীন।

গতকাল (বুধবার) বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত ‘ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্রিট ফোরাম-২০২১’-এ চীনা গণ-ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘দ্বৈত কার্বন’ লক্ষ্য অর্জন এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সবুজ অর্থনীতির কাঠামো উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে।  

বুধবার ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্রিট ফোরাম-২০২১য়ের এক শাখা ফোরামে চীনা গণব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ছেন ইয়ু লু বলেন, চীন সবুজ এবং নিম্ন-কার্বন উন্নয়নে অর্থের ভূমিকাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয় এবং সবুজ অর্থায়ন বিকাশের প্রথম দেশগুলোর একটি। তিনি বলেন, বিগত ৫ বছরে চীন সক্রিয়ভাবে সবুজ অর্থনীতির কাঠামো গঠন করেছে এবং সবুজ ও নিম্ন-কার্বনের উন্নয়নে সমর্থন দিয়েছে।

তিনি বলেন, সবুজ উন্নয়ন হলো মহামারী পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের উল্লেখযোগ্য বিষয়। চীন হলো সবুজ পুনরুদ্ধারের সক্রিয় অনুশীলনকারী। ২০২০ সালে ইতিবাচক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করা বিশ্বের একমাত্র প্রধান অর্থনৈতিক সত্তা। চীনের প্রতি ইউনিট জিডিপি’র জ্বালানি খরচ অব্যাহতভাবে হ্রাস পেয়েছে। ২০১৯ সালের চেয়ে পরিচ্ছন্ন শক্তি ব্যবহারের পরিমাণ এক শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, মহামারী প্রতিরোধের সময় চীন সবুজ উন্নয়নের মূল নিয়ম মেনে চলেছে। এতে গ্রিন ফাইন্যান্স একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং চীনের অর্থনীতির উচ্চমানের পুনরুদ্ধারে অবদান রেখেছে। তিনি বলেন, চীন ক্রমাগতভাবে সবুজ অর্থনৈতিক কাঠামোর উন্নয়ন ও সুবিন্যাস করছে।

তিনি বলেন,

 ‘চীনের গ্রিন ফাইন্যান্সের প্রাথমিক বিকাশের মূল উদ্দেশ্য হল- পরিবেশ দূষণের সমস্যা সমাধান করা এবং দূষণ প্রতিরোধ ও শক্তি সংরক্ষণ প্রকল্পের জন্য তহবিল সংগ্রহ করা। ধীরে ধীরে পরিবেশগত সমস্যা দূরীকরণের সাথে সাথে জলবায়ু পরিবর্তন পরবর্তী সময়ে একটি প্রধান ইস্যুতে পরিণত হয়। এটি সমাধান করা প্রয়োজন। তাই আমরা ‘গ্রিন বন্ডের সমর্থিত প্রকল্পের তালিকা’ সংশোধন করেছি, প্রাসঙ্গিক মান উন্নত করেছি এবং ‘আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিবেশগত তথ্য প্রকাশের নির্দেশিকা’ প্রকাশ করেছি। তা ছাড়া, চীনা গণব্যাংক অব্যাহতভাবে উন্নয়নের নতুন ধারণা দিয়ে জৈবিক আবাসস্থলের সুবিন্যাস, মালভূমির হ্রদের পরিবেশগত পুনরুদ্ধার এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষার দায়বদ্ধতা পালনে আর্থিক সাহায্যের মান বাড়াবে। যাতে পরিবেশগত বাধা সুসংহত করা এবং মানুষ ও প্রকৃতির সহাবস্থানের ক্ষেত্রে আর্থিক অবদান রাখা যায়।’

বিশ্ব ব্যাংকের চীনা ব্যুরোর প্রধান মার্টিন রেইজার বলেন, চীনের অভিযান বৈশ্বিক জলবায়ু খাতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। অনুমান করা হচ্ছে যে, ২০৬০ সালে চীনের কার্বন নিরপেক্ষতার লক্ষ্য বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতির ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা ০.২ থেকে ০.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে। রাইজার বলেন, চীনের অর্থনীতির ‘নিট জিরো’ নির্গমন রূপান্তরের জন্য প্রচুর পুঁজির প্রয়োজন হবে এবং রূপান্তরের জন্য পুঁজির উৎস বাড়ানোও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন,

‘অনুমান করা হচ্ছে যে, ২০১৪ সাল থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত জলবায়ু ও পরিবেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে প্রতি বছর ২.৩ থেকে ৭.২ ট্রিলিয়ন ইউয়ান প্রয়োজন। পাবলিক বিভাগ এর মাত্র ১০ শতাংশ প্রদান করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই বেসরকারি বিভাগ থেকে পুঁজি সংগ্রহ করা গুরুত্বপূর্ণ। চীনের পর্যাপ্ত গার্হস্থ্য সঞ্চয় রয়েছে, তাই সবুজ রূপান্তরকে নেতৃত্ব দেওয়া ও কল্যাণ অর্জন সম্ভব।’

রেইজার আশা করেন, চীন গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন এবং অন্যান্য পরিবেশগত সূচকের স্বচ্ছতা এবং তথ্য প্রকাশের মাধ্যমে জলবায়ু ও পরিবেশগত বিষয়ে আর্থিক ঝুঁকি মোকাবিলা করতে পারবে। পাশাপাশি, নিম্ন কার্বন অর্থনীতির রূপান্তরে আরও বেশি পুঁজির যোগান দিতে পর্যাপ্ত সবুজ আর্থিক পণ্য প্রচলন করবে।

(লিলি/তৌহিদ/শুয়েই)