হোসনে মোবারক সৌরভ: উচ্ছ্বল তারুণ্য ও টগবগে যৌবনের সোনালী সময় বিলিয়েছেন দেশের সেবায়। গড়েছেন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। তবে জীবনের পড়ন্ত বেলায় তারাই এখন শারীরিকভাবে দুর্বল, অসহায়। বয়স্ক নাগরিকদের দ্রুত যে কোন সেবা পৌছে দিতে দারুণ সব উদ্যোগ নিয়েছে চীন। দেশজুড়ে গড়ে তোলা হচ্ছে তিন স্তরের ওল্ড কেয়ার সার্ভিস নেটওয়ার্ক, যেখানে ১৫ মিনিটেই মিলবে প্রয়োজনীয় সব সেবা।
পেশাদার কোন শিল্পীদের নাচের পরিবেশনা নয় এটি। বরং পাড়ার ক্লাবে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছে এই এলাকারই নারীরা। পুরুষরা বাজাচ্ছেন নানা ধরনের বাদ্যযন্ত্র।
চীনের কুয়াংচৌতে অবস্থিত ‘ইয়ে হং সেন্টারের এ অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া সবার বয়স ৬০ এর উপরে।
চীন সরকারের নেয়া এক বিশেষ উদ্যোগ ‘ওল্ড কেয়ার নেটওয়ার্ক’ এর একটি কার্যক্রম এই সাংস্কৃতিক আয়োজন। বয়স্কদের সময় কাটানো থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় নানা সেবাও পাওয়া যায় এখানে।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৫ সালের মধ্যে চীনে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়বে উল্লেখযোগ্য হারে। এই বিপুল সংখ্যক মানুষের বয়সজনতি নানা সমস্যা মোকাবিলা করতেই চীন সরকারের এমন উদ্যোগ।
ওল্ড কেয়ার নেটওয়ার্কের আওতায় প্রতিটি শহরে থাকবে সেবা কেন্দ্র। প্রতিটি জেলায় থাকবে কমপক্ষে দুটি গ্রামীণ আঞ্চলিক পরিষেবা কেন্দ্র। ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিফর্ম কমিশন –এনডিআরসি বলছে, ২০২৫ সালের মধ্যে চীনের কাউন্টি ও ছোট শহর এবং গ্রাম পর্যায়ে পৌঁছে যাবে তিন স্তরের ওল্ড কেয়ার সার্ভিস নেটওয়ার্ক।
এসব কেন্দ্রে থাকছে নিজস্ব ক্লিনিকাল ব্যবস্থা। পাশাপাশি সবার জন্য একসঙ্গে খাবার গ্রহণের সুযোগ। বিশেষ করে সকালের নাশতা থেকে রাতের খাবার, সবই করা যায় একসঙ্গে। কেউ কেউ আবার সারাদিন শেষে সন্ধ্যা হলেই ফিরে যান নিজের বাড়ি।
পূর্ব চীনের শহর শিং তাও-এর হোম কেয়ার সিস্টেমে বয়স্কদের জন্য আছে নিজের বাড়ি থেকেই সেবার নেয়ার সুযোগ। চিকিৎসা সেবা, সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ, মেডিকেল চেকাপ ও খাবারসহ পান প্রায় ডজন খানেক সেবা পাওয়া যায় বাড়িতে বসেই। তবে এ জন্য প্রত্যেককে মাসে গুণতে হয় আড়াই হাজার ইউয়ান। যদিও বাইরের তুলনায় এ খরচ দুই-তৃতীয়াংশ কম।
৭৭ বছর বয়সী চীনা নাগরিক তু শুয়ে ইয়ুন বলেন, তার ইচ্ছা অনুযায়ীই হয় সব কিছু।
"যদি আমি কিছু খেতে চাই, আমি তাদের কে জানালে তারা আমার বাসায় খাবার নিয়ে আসে। এটি কেবল অর্থ সাশ্রয় করে না বরং সবকিছুকেই সহজ করে তোলে’’
২০১২ সালে, ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস প্রবীণদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায় এ সংক্রান্ত আইন সংশোধন করে। এতে বলা হয়, হোম-কেয়ার সিস্টেমের পাশাপাশি প্রতিটি রাজ্য সরকারকে তৈরি করতে হবে সামাজিক সহায়তা প্রতিষ্ঠান।
চায়না এল্ডার হেলথ কেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক লিউ ইউয়েন লাই জানান, জরুরি মুহুর্তে চিকিৎসা সেবার জন্য আছে রেফারেল সিস্টেমও।
“সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ সেবার ধারাবাহিকতা ধরে রাখা। কারো জরুরি স্বাস্থ্য সেবা কিংবা অন্য কোন সেবা লাগলে আমরা সরাসরি বাসায় চলে যাই। কারো ডে- কেয়ারের প্রয়োজন হলে, তার জন্যও আমাদের পেশাদার সদস্য আছে।“
চীন সরকার বলছে, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে, শহর, উপশহর ও গ্রামীণ জনপদে চালু করা হবে এই হোম কেয়ার সার্ভিস।