দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, ‘কঠিন হয়ে পড়ছে জীবন’
2021-10-21 20:17:16

আজহার লিমন, ঢাকা: বাংলাদেশের বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। এক বছর আগে প্রতিকেজি চাল যেখানে কেনা যেত মোটামুটি ৩৭ টাকায়, সে চাল এখন কিনতে হচ্ছে গড়ে ৪৮ টাকায়। এভাবে এক বছরের ব্যবধানে খোলা আটার দাম বেড়েছে ২০ শতাংশ, সয়াবিনে ৪৩ শতাংশ, চিনিতে ১৯ শতাংশ, মসুর ডালে বেড়েছে ৩০ শতাংশ।

দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, ‘কঠিন হয়ে পড়ছে জীবন’_fororder_1021-21

হঠাৎ করেই লাফিয়ে উঠেছে ব্রয়লার মুরগি ও পেঁয়াজের দাম। রাজধানীর একটি কাঁচাবাজারে এ নিয়ে আমার কথা হচ্ছিলো একজন ক্রেতার সঙ্গে।

ঐ ক্রেতা বলেন, সংসার চালাতে যা লাগে সব জিনিসের দাম বাড়ছে। করোনার আগে যে দাম ছিলো তার থেকে অনেক বাড়তি।”

খুচরা দোকানীরা বলছেন, দাম বাড়ার কারণ তারা নন। তাদের দাবি, করোনা মহামারির এই সময়ে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে তাদের বেঁচাকেনা কমেছে। কারণ, ভোগ কমেছে ক্রেতার।

একজন মুদি দোকানদার জানান, “কোন জিনিসের দাম বেড়ে গেলে ক্রেতা আর ঐ জিনিস কিনতে চায় না। ফলে লাভ ও কমে যায়। এছাড়া দাম বাড়লে কোন পণ্যের লাভের শতাংশও কমিয়ে ধরতে হয়।”

এটা ঠিক যেসব পণ্য আমদানি করা হয়, সেসবের দাম বাড়ার পেছনে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার মতও কিছু কারণ আছে। যদিও অর্থনীতি বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ব্যবাসায়ীদের সিন্ডিকেট দাম বাড়ার বড় একটি কারণ। তবে কারণ যাই হোক, একদিকে করোনা অভিঘাত আরেকদিকে দ্রব্যমূল্যের এই চড়ামূল্যে সংসার পরিচালনায় হিমশিম খাচ্ছেন দেশের নিম্মবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা।

কিন্তু এর জন্য সরকার কী করছে? অর্থনীতিবিদ বিশ্লেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শরমিন্দ নিলোর্মী মনে করেন, বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে হবে সাময়িক ও দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থা।

দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, ‘কঠিন হয়ে পড়ছে জীবন’_fororder_1021-22

ছবি: অধ্যাপক শরমিন্দ নিলোর্মী, অর্থনীতিবিদ।

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, “সরকার শুল্ক হার কিছু কমিয়েছে। এমন সব পদক্ষেপ কিন্তু সরকার নিচ্ছে। কিন্তু দ্রব্যমূল্য তো সাধারণ মানুষের হাতে নাগালে তো নেই। সেই কারণে আমি সাবসিডির কথা বলেছি। কর একটা ইন্সট্রুমেন্ট, প্রণোদনা বা সাবসিডি আরেকটা উপকরণ। অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য। যে আগামী ছয় মাস আমি ভর্তুকী দেব। ঐ জায়গায় বা মধ্যবর্তীকালীন সময়ের জন্য আমার মনে হয় সরকারের একটু কাজ করা দরকার।”

বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার জরিপে উঠে এসেছে, করোনার মহামারির কারণে দেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতি দ্বিগুণ বেড়েছে। এমন অবস্থায় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের এই উর্ধ্বগতি দেশের সামগ্রিক আর্থাসামাজিক পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে তার শঙ্কা করেছেন বাজার বিশ্লেষকরা।