চীনের গ্রামাঞ্চলে শিক্ষার্থীদের পুষ্টিকর খাবার প্রদান পরিকল্পনা
2021-10-19 12:36:25

দশ বছর আগে চীনের গ্রামাঞ্চলে চালু হয়েছে বাধ্যতামূলক শিক্ষাগ্রহণকারীদের পুষ্টি উন্নয়ন পরিকল্পনা। সে থেকে ৪ কোটি ছাত্রছাত্রী এ পরিকল্পনা থেকে উপকৃত হয়েছে। পরিকল্পনার সাহায্যে শিক্ষার্থীরা পেট ভরে পুষ্টিকর খাবার খেতে পারছে। জনৈক তৃণমূল শিক্ষাকর্মী জানান, পুষ্টি উন্নয়ন পরিকল্পনা এক ধরনের পরিপূরক পরিকল্পনা। চীনের অনেক স্কুল নিজস্ব নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে, যাতে তাদের শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে খেতে পারে। কোন কোন স্কুল যেসব শিশুর বাবা-মা কাজে ব্যস্ত থাকেন, তাদের খাবার প্রদানের প্রকল্প হাতে নিয়েছে।

 

একটি গল্পের মাধ্যমে আমরা বিষয়টি তুলে ধরব। সং ত্য ছুন একজন টেকওয়ে রাইডার। তার বাড়ি ইউননান প্রদেশের চাও থুং শহরে।  এখন তিনি প্রাদেশিক রাজধানী খুনমিংয়ে কাজ করছেন। তিনি ছোটবেলায় স্কুলে পড়ার সময় প্রায় প্রতিদিন একই রকম খাবার খেতেন। সকালে ভুট্টা দিয়ে তৈরি ময়দা, ভাত এবং ভাত দিয়ে তৈরি ফ্রাইড রাইস। ফ্রাইড রাইস তিনি একটি ক্যানে রাখতেন। এটা ছিল তার একদিনের খাবার। তবে ২০১১ সালে এ অবস্থার পুরোপুরি পরিবর্তন হয়। কারণ সে বছর চীনে চালু হয় গ্রামাঞ্চলে বাধ্যতামূলক পুষ্টি উন্নয়ন পরিকল্পনা। তার ছেলে এখন স্কুলে পুষ্টিকর ও সুস্বাদু খাবার পেতে থাকেন।

সুং ত্য ছুনের ছেলে এখন প্রাথমিক স্কুলের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তার লাঞ্চ মেনুতে থাকে চিকেন লেগ, স্টেক, সিউইড স্যুপ, বাঁধাকপি স্যুপ ইত্যাদি। এখন তার ছেলের উচ্চতা বেড়ে গেছে ১.৪ মিটার। ক্লাসে তার ছেলে সবচেয়ে লম্বা কয়েকজনের মধ্য একজন।

গেল ১০ বছরে চীনের ২৯টি প্রদেশের ১৭৬২টি জেলার ৪ কোটি ৬ লাখের বেশি শিক্ষার্থী এ পরিকল্পনার আওতায় এসেছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর চীনের অর্থমন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রকাশিত এক দলিলে বলা হয়, ২০২১ সালের শরত্কাল থেকে গ্রামাঞ্চলে বাধ্যতামূলক শিক্ষাগ্রহণকারীদের দৈনিক খাবারে ভর্তুকি বেড়েছে ৫ ইউয়ান।

চীনা রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষণ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে পুষ্টি উন্নয়ন পরিকল্পনা চালু এলাকায় ছেলে ও মেয়েদের গড় উচ্চতা ২০১২ সালের তুলনায় যথাক্রমে ১.৫৪ সেন্টিমিটার ও ১.৬৯ সেন্টিমিটার, এবং গড় ওজন যথাক্রমে ১.০৬ ও ১.১৮ কেজি বেড়েছে। ছাত্রছাত্রীদের পুষ্টির অবস্থা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে।

সি থিয়ান পিং হলেন খুনমিং শহরের হুই ও ই জাতি স্বায়ত্তশাসিত জেলার একটি স্কুলের প্রধান। তিনি জানান, পুষ্টি উন্নয়নের পরিকল্পনা চালু হবার আগে তিনি শিক্ষার্থীদের বাড়িতে গিয়ে দেখতেন, তারা বাজার করেন না। বরং নিজেদের ক্ষেতের কিছু শাকসবজি খেয়ে থাকেন। তখন তারা মাংস খুব কম খেতেন। পুষ্টি উন্নয়নের পরিকল্পনা চালু হবার পর স্কুলে প্রতিদিন ৩ বেলা খাবারে একটি সুপ প্রদান করা হয়। প্রতিবেলা শিক্ষার্থীরা ২ ইউয়ান দিয়ে আচ্ছামতো খেতে পারে। নাস্তায় তারা দুধ ও দুধের তৈরি খাবার খায়। তা ছাড়া, তারা রুটি, চিকেন সসেজ, গরুর মাংসের সসেজ প্রতিদিন খায়। তাদের মেনু প্রতিদিন ভিন্ন হয়।

অন্য একটি স্কুলে খাবারের মেনু একটি বোর্ডে লেখা রয়েছে। স্কুলের প্রধান জানান, তারা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তারা কী কী খেতে চায়, সে বিষয়ে পরামর্শ নেন। স্কুলটি বিশেষ একটি কর্মদল গঠন করে ঋতুর সঙ্গে মিল রেখে পুষ্টিগুণ সম্পন্ন মেনু তৈরি করে।

পাশাপাশি, খাবারের মান এবং নিরাপত্তার ওপরও গুরুত্ব দেয় সরকার। থাই পিং স্কুলের ক্যান্টিনে সাংবাদিকরা লক্ষ্য করেন, রান্নঘরে বাইরের কেউ প্রবেশ করতে পারে না। দেওয়ালে লাগানো টিভির মাধ্যমে রান্নঘরের চিত্র দেখা যায়।

গুদামে সব খাবার রাখার নিয়ম আছে। তবে সেখানে রাখা সব খাবারে নাম,  উত্পাদনের সময়, ক্রয়ের সময়, ও মেয়াদ লেখা আছে। রান্নাঘরের সব কর্মীদের স্বাস্থ্য সনদ এবং পুষ্টি উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অবস্থা বোর্ডে লাগানো হয়, যাতে শিক্ষক, ও বাবামারা যে কোন সময় চেক করতে পারেন। তা ছাড়া, স্কুলে দুধ সংরক্ষণের জন্য বিশেষ একটি রুম রয়েছে। সেই রুমে পর্যবেক্ষণ এবং নির্বীজন ব্যবস্থা স্থাপিত হয়েছে। রান্নাঘরের পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত ভিডিও ৯০ দিন সংরক্ষণের পর ক্লাউডে আপলোড করা হয়। সরকারি বিভাগ, স্কুল ও শিক্ষার্থীদের পরিবার সব সময় তার তত্ত্বাবধান করতে পারে। (শিশির/এনাম/রুবি)