দেশে গত কিছু দিন ধরে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলা যায়। গত তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে দৈনিক শনাক্ত ৫ শতাংশের নিচে রয়েছে। কয়েকদিন ধরে মৃত্যুও রয়েছে এক অংকের ঘরে। সব শেষ ১৬ অক্টোবর ৭ মাসের মধ্যে দেশে সর্বনিম্ন শনাক্ত ও মৃত্যু হয়েছে। এদিন মারা যান ৬ জন। এর আগে গত ৫ মার্চ করোনায় মৃত্যু হয়েছিল সর্বনিম্ন ৭ জনের। এদিন শনাক্তের সংখ্যাও নেমে আসে ২ শতাংশের নিচে।
করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমণ কমে আসায় জনজীবনে স্বস্তি ফিরেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও একে স্বস্তিদায়ক বলে অভিহিত করেছে। এতটুকুতে সমস্যা নেই। কিন্তু বিপদের কথা হচ্ছে, করোনা বিদায় নিয়েছে- এমন একটা মনোভাব তৈরি হয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। আর এ কারণে মাস্ক পরা অনেক কমে গেছে। স্কুল, কলেজ, অফিস-আদালত খুলে দেওয়ায় জনজীবন একরকম স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। তাই সামাজিক দূরত্বও আর প্রায় মানছেন না কেউ। উধাও সকল ধরনের স্বাস্থ্যবিধি।
এখানেই বিপদের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছে করোনা বিদায় নিয়েছে- এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই। এই অজুহাতে স্বাস্থ্যবিধি মানায় অনীহা সামনে পরিস্থিতি আবার খারাপের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
আরও একটা বড় বিপদের বিষয় হচ্ছে, করোনা পরীক্ষা না করেই অনেকে এখন একে সিজনাল ঠাণ্ডাজ্বর বলে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করছেন। এতে কেউ কেউ মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন এমনকি মৃত্যুও হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন।
এটি ঠিক যে সম্প্রতি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক সারাহ গিলবার্ট বলেছেন, একটা সময় করোনা সাধারণ ঠাণ্ডা জ্বরে পরিণত হবে। এ বিষয়ে ডা. মুশতাক বলেন, তা হতে অনেক সময় লাগবে। তাই স্বাস্থ্যিবিধি মেনে টিকা নেওয়াতে জোর দিয়েছেন এই বিশেষজ্ঞ।
করোনা থেকে রক্ষার জন্য জন্য টিকাই প্রধান উপায় মানছেন সকলে। কিন্তু বাংলাদেশে টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা অগ্রগতি হলেও এখনো টিকার বাইরে রয়ে গেছেন বেশিরভাগ মানুষ। দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯০ লাখ ১০ হাজার। করোনা সুরক্ষায় অন্তত ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হবে। সে হিসেবে টিকা দিতে হবে ১৩ কোটি ৫১ লাখের বেশি মানুষকে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের ১৩ অক্টোবরের তথ্য অনুযায়ী এ পর্যন্ত দেশে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলিয়ে টিকা দেওয়া হয়েছে ৫ কোটি ৬১ লাখ। সে হিসেবে এখনো দেশের ৮ কোটি মানুষ এক ডোজ টিকার আওতায়ও আসেনি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলছেন, যে পরিমাণ টিকার মজুদ রয়েছে এবং সামনে পাওয়া যাবে তাতে আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত ৮ কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনা যাবে। আর মার্চ-এপ্রিলে সেটি তা ১২ কোটিতে দাঁড়াবে।
এর মধ্যে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার বিষয়টিও অনর্ভুক্ত রয়েছে। আশার কথা ১৪ অক্টোবর ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের টিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ দিন মানিকগঞ্জে ১২০ শিক্ষার্থীকে ফাইজারের প্রথম ডোজ দেওয়া হয়। ৩০ অক্টোবর থেকে সারাদেশে ২১টি কেন্দ্রের মাধ্যমে এ কার্যক্রম চলবে। প্রথম ধাপে এক কোটি শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের নির্ধারিত সময়ে বেশির ভাগ মানুষ টিকার আওতায় আসবেন আশা করা যায়। কিন্তু তার আগে তো স্বাস্থ্যবিধিতে এমন ঢিলেমি করা যায় না। এমনকি টিকা নেওয়ার পরও করোনা আক্রান্ত হবার নজীর রয়েছে। তাই টিকা নেওয়ার পরও স্বাস্থ্যবিধি মানতে পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
কিন্তু চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী। সবাই যে ভাবে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করছেন, এমনকি মাস্কটি পর্যন্ত পরছেন না-তাতে করোনা সংক্রমণ আবার মারাত্মক আকারে ফিরে এলে নিজেদের দায়িত্বহীন কৃতকর্ম ছাড়া অন্য কাউকে দোষ দেওয়া যাবে না।
মাহমুদ হাশিম
ঢাকা স্টেশন, চীন আন্তর্জাতিক বেতার।