গত ১২ অক্টোবর চীনের ইউননান প্রদেশের খুনমিং শহরে জাতিসংঘের ‘জীববৈচিত্র্য কনভেনশনের’ ১৫তম শীর্ষসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং-সহ বিশ্ব নেতারা অংশ নেন। সম্মেলনে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গঠিত নতুন একটি তহবিলে ২৩ কোটি ডলার অনুদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চীন।
বিস্তারিত থাকছে আজকের সংবাদ পর্যালোচনায়।
সম্প্রতি বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ ইউনিয়ন (আইইউসিএন) প্রকাশিত উপাত্ত অনুযায়ী, পৃথিবীর ২৮ শতাংশ জীব প্রজাতি বর্তমানে হুমকির মুখে রয়েছে। প্রজাতির সংখ্যা হ্রাসের গতি এবং তাদের সংখ্যা ও ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী বিপন্ন প্রজাতির তালিকা তৈরি হয়। তালিকায় প্রজাতির বিলুপ্তি, বনের বিলুপ্তি, সমালোচনামূলক বিপন্ন, বিপন্ন এবং ঝুঁকিপূর্ণ—এইভাবে তাদের শ্রেণীভুক্ত করা হয়।
আইইউসিএনের মূল্যায়ন অনুযায়ী বিশ্বে মোট ১৩৮,৩৭৪টি প্রজাতির মধ্যে ৯০২টি বিলুপ্ত হয়েছে, ৮০টি বনভূমি অঞ্চলে বিলুপ্তি হয়েছে এবং ৩৮,৫৪৩টি ঝুঁকির মুখে রয়েছে।
উদ্ভিদ, প্রাণী ও বাস্তুতন্ত্রের সুরক্ষায় দুই পর্বের শীর্ষসম্মেলনে দক্ষিণ চীনের শহর খুনমিংয়ে প্রায় ১৯৫টি দেশের প্রতিনিধিরা একত্রিত হয়েছিলেন। এই শীর্ষসম্মেলন ২০৩০ ও ২০৫০ সালের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
কপ১৫ দেশগুলোর সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং নতুন জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ তহবিল গঠন ও জীববৈচিত্র রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেন। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে আন্তর্জাতিকভাবে আরও ভূমিকা পালনের কথা বলেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট।
ভিডিও লিংকের মাধ্যমে দেওয়া বক্তৃতায় জনাব সি চিন পিং বলেছেন, উন্নয়নশীল দেশে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সমর্থন দিতে চীন ২৩৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূলধন দেবে এবং খুনমিং জীববৈচিত্র্য তহবিল প্রতিষ্ঠা করবে।
প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সবাইকে হাতে হাত রেখে মানবজাতির উচ্চ গুণগত মানের নতুন উন্নয়নের যাত্রা শুরু করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, আমরা চ্যালেঞ্জ ও আশায় ভরপুর এমন একটি যুগে রয়েছি। পরিশ্রম করলেই প্রত্যাশিত ভবিষ্যত আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। তিনি মানুষ ও প্রকৃতির সম্পর্কের সমন্বয় ঘটানোর পরামর্শ দেন। সবুজ রূপান্তরকে চালিকাশক্তি হিসেবে বিশ্বের টেকসই উন্নয়ন বেগবান করার কথা বলেন। জনগণের কল্যাণকে কেন্দ্র করে সামাজিক ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচার বেগবান করা এবং আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে ন্যায়সঙ্গত ও যৌক্তিক আন্তর্জাতিক পরিচালনা-ব্যবস্থা রক্ষা করার নির্দেশনা দেন প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং।
এ সম্মেলনে ৩টি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জিত হয়েছে বলে মনে করে চীন। সম্মেলন বিশ্বের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রেরণা যুগিয়েছে। এতে ‘খুনমিং ঘোষণা’ প্রকাশিত হয়েছে। যা বিশ্বের পরিবেশ পরিচালনায় নতুন শক্তি যোগাবে। পাশাপাশি সম্মেলন থেকে চীনের জীববৈচিত্র্য রক্ষার নতুন ব্যবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে, গত শুক্রবার চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের তথ্যকার্যালয় ‘চীনা জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ শ্বেতপত্র’ প্রকাশ করেছে।
এতে বলা হয়, চীন বহুপক্ষবাদে অবিচল থেকে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা করে আসছে। আলোচনার মাধ্যমে বিশ্বের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে চীনের প্রজ্ঞা দেখা গেছে এবং আন্তর্জাতিক সমাজের সঙ্গে মানবজাতি ও প্রকৃতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি গঠন করছে।
শ্বেতপত্রে বলা হয়, চীন ইতিবাচকভাবে জীববৈচিত্র্য চুক্তি এবং তার প্রটোকল বাস্তবায়ন করছে। বড় দেশের দায়িত্ব পালন করে বিশ্বের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে চীন।
জীববৈচিত্র্য চুক্তির স্বাক্ষরকারী হিসেবে চীন সময় মতো জাতীয় পর্যায়ে নানা প্রদিবেদন উত্থাপন করে আসছে। ২০১৯ সাল থেকে চীন এ চুক্তির বৃহত্তম অর্থদাতা দেশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন বিশ্ব পরিবেশ তহবিলে অর্থ সরবরাহ বাড়িয়েছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে এর বৃহত্তম দাতা দেশ এখন চীন।
এর আগে এই কনভেনশনের সচিবালয়ের নির্বাহী সচিব ইলিজাবেথ মারুমা ম্রেমা জীববৈচিত্র্য রক্ষায় চীনের সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, চীন ‘জীববৈচিত্র্য কনভেনশন’-এ যোগ দেওয়া প্রথম পর্যায়ের দেশ। চীনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা কাজে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হয়েছে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, চীনে বিভিন্ন প্রাকৃতিক সংরক্ষণ এলাকার সংখ্যা ১১.৮ হাজার এর মোট আয়তন ১৭ কোটি হেক্টরেরও বেশি। যা চীনের ভূখণ্ডের ১৮ শতাংশ এবং ‘বিশ্বের লক্ষ্যের’ চেয়েও বেশি।