ছবি: ড. সাইমন জাকারিয়া ও সাধিকা সৃজনী তানিয়া
এক. লালন বস্তুবাদী সাধনায় বিশ্বাসী ছিলেন- বস্তুতে ঈশ্বরের উপাসনা করতেন। বস্তু মানে আমাদের দেহ। সেই লালনকে খুব কাল্পনিক একটা জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। লালন মানুষের সাধনা করেছেন, কোনো কাল্পনিক ঈশ্বরের বন্দনা করেননি। তিনি যে ঈশ্বরের বন্দনা করেছেন সে ঈশ্বর মানুষ-ঈশ্বর, অর্থাৎ মানুষ-গুরু। সেই মানুষকে ভজনা করলে স্রষ্টা আসীন হন মানুষের আসনে।
দুই. মানে না বুঝে লালনের গানের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়। রবীন্দ্রনাথের গান যেমন বাণী প্রধান, লালনের গানও বাণী প্রধান। এর অর্থের জায়গাটা বোঝার জন্য, সেই অর্থের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার জন্য অবশ্যই কম বাদ্যযন্ত্রে- লালনপন্থীদের বাদ্যযন্ত্রে গানগুলো গাওয়া সবচেয়ে ভালো। গুপীযন্ত্র বা একতারা এবং বায়া-এটাই কিন্তু বেসিক ইন্সট্রুমেন্ট লালনপন্থীদের।
তিন. লালনের যে গুরুত্ব আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আমি দেখেছি- সে গুরুত্ব কিন্তু আমরা দিতে পারিনি। লালন চর্চার যে গ্লোবাল রূপ আমরা দেখেছি তাতে একটি আন্তর্জাতিক লালন ইনস্টিটিউট হওয়াটা খুব জরুরি- যেখানে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের গবেষকরা এসে লালনপন্থীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারবেন, লালনের পুরনো পাণ্ডুলিপি সম্পর্কে জানতে পারবেন, সেগুলো প্রিজারভেশনের ব্যবস্থা করা যাবে। সে রকম কিছু করা গেলে আমার মনে হয় লালনচর্চার আরও প্রসার হবে।
চার. সাধুসঙ্গ লালন প্রবর্তিত আচার। আমরা খুবই দুঃখ পাই যখন দেখি লালনের স্মৃতিধন্য ছেঁউড়িয়ায় আর সাধুসঙ্গ হয় না! সেখানে এখন হয় লালন-মেলা। মেলা শব্দটি লালনের নামের সঙ্গে একেবারেই যায় না। আর মেলার ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্যরা সাধু নন, তারা লালনপন্থীও নয়। লালনপন্থীদের হাতে যদি কাজটা দেওয়া হতো তাহলে সেটা হয়তো অন্য একটা রূপ পেতো।
পয়লা কার্তিক লালন সাঁইয়ের তিরোধান দিবস উপলক্ষে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে লালনের জীবনদর্শন ও দেশবিদেশে লালনচর্চা নিয়ে বলেছেন লোকগবেষক ড. সাইমন জাকারিয়া। লালনের দুটি নতুন গান ও স্বল্পশ্রুত কিছু গান শুনিয়েছেন সাধিকা সৃজনী তানিয়া।
সাক্ষাৎকার গ্রহণ: মাহমুদ হাশিম।
অডিও সম্পাদনা: তানজিদ বসুনিয়া।