জাতিসংঘের ‘জীববৈচিত্র্য কনভেনশন’ স্বাক্ষরকারীদের ১৫তম সম্মেলন অর্থাত্ কোপ১৫ গত ১১ অক্টোবর চীনের ইয়ুননান প্রদেশের খুনমিং শহরে উদ্বোধন হয়েছে। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং তাতে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দিয়েছেন।
ভাষণে প্রেসিডেন্ট সি আগামি পৃথিবী কি ধরণের হবে, তাকে কীভাবে গঠন করা হবে, এবং তাতে চীন কী ভূমিকা রাখবে- এসব বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি পৃথিবীর জীব প্রজাতির অভিন্ন স্বার্থের কমিউনিটি গঠনের জন্য নিজের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। তাতে বড় দেশ হিসেবে চীনের দায়িত্ব ও ভাবমুর্তি ফুটে ওঠেছে। সারা পৃথিবী তাঁর এই ভাষণকে স্বাগত জানিয়েছে।
জীববৈচিত্র্য মানব জাতির অস্তিত্ব ও উন্নয়নের ভিত্তি। তবে বর্তমান পৃথিবীতে প্রকৃতি দিন দিন সংকটে পড়ছে। জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন মতে, জীববৈচিত্র্য মারাত্বক গতিতে হ্রাস পাচ্ছে। তাই মানব জাতির জন্য যৌথভাবে জীব প্রজাতির অভিন্ন স্বার্থের কমিউনিটি গঠন করা জরুরি এক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘের প্রথম প্রাকৃতিক সভ্যতা-কেন্দ্রিক এই বৈশ্বিক সম্মেলনে চীন এ বিষয়ে তার প্রস্তাবনা পেশ করেছে। আর তা হচ্ছে মানুষ ও প্রকৃতির সম্প্রীতিময় সহাবস্থান, অর্থনীতি ও পরিবেশের সমন্বিত সহাবস্থান এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিন্ন উন্নয়নের পৃথিবী গড়ে তোলা।
এসব প্রস্তাব বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেন, প্রাকৃতিক সভ্যতার উন্নয়ন ও সংরক্ষণে মানুষ ও প্রকৃতির সমন্বয় করতে হবে। সবুজায়নকে চালিকাশক্তি হিসেবে বৈশ্বিক টেকসই উন্নয়নের সহায়ক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। গণকল্যাণকে কেন্দ্র করে সামাজিক সমতা ও ন্যায্যতাকে বেগবান করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে সমতাসম্পন্ন ও উপযোগী আন্তর্জাতিক প্রশাসন ব্যবস্থা রক্ষা করতে হবে।
প্রেসিডেন্ট সির প্রস্তাবগুলোতে সেসবের বাস্তবায়ন পদ্ধতিও উল্লেখ রয়েছে। এসব মানব জাতির ভবিষ্যত উন্নয়নে দূর-দৃষ্টির আলোকে তৈরি হয়েছে। চীন নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বৈশ্বিক পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য প্রস্তাবগুলো উত্থাপন করেছে, যা বিভিন্ন দেশের যৌথভাবে পৃথিবীর জীব প্রজাতির অভিন্ন স্বার্থের কমিউনিটি গঠনের পথ উন্মোচন করেছে।
সবাই লক্ষ্য করেছে, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সম্প্রতি ইয়ুননান প্রদেশের হাতির উত্তরাঞ্চলে স্থানান্তর এবং আবার বাসস্থানে ফিরে যাওয়ার ঘটনা উল্লেখ করেছেন। এটি চীনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের সাফল্যের অন্যতম একটি বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। চীনে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ জাতীয় কৌশল হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। গত কয়েক দশক ধরে চীনে বনাঞ্চলের আয়তন ৭ কোটি হেক্টর বেড়েছে, যা বিশ্বের শীর্ষ স্থানে রয়েছে।
চীন সৃজনশীলভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার রেডলাইন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এ ব্যবস্থা জাতিসংঘের ১৫টি উতকৃষ্ট কার্যক্রমের একটি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
তাছাড়া, অর্থনীতি ও প্রাকৃতিক পরিবেশের সমন্বয় পদ্ধতি বাতলে দিয়েছেন চীনের এই শীর্ষ নেতা। তিনি প্রাকৃতিক সুবিধাকে উন্নয়নের সুবিধায় পরিণত করা এবং সুবজ পাহাড় ও পরিস্কার পানি সম্পদ থেকে ব্যাপক কল্যাণ সৃষ্টি করার কথা তুলে ধরেন, যা কোভিড-১৯ মহামারির প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য খুব তাত্পর্যপূর্ণ।
বৃটেনের ‘ন্যাচার’ ম্যাগাজিন এক সম্পাদকীয়তে বলেছে, চীন অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রকৃতির ক্ষয়ক্ষতি কমানোকে ভারসাম্যপূর্ণ করার সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে, যা বিশ্বের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সহায়ক হয়েছে।
বিশ্বের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে চীন নানা তত্পরতা চালাচ্ছে। এবারের শীর্ষ সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং খুনমিং জীববৈচিত্র্য তহবিল গড়ে তোলার জন্য ১৫০ কোটি ইউয়ান দেয়ার ঘোষণা দেন। জাতীয় উদ্যানকে প্রাধান্য দিয়ে প্রাকৃতিক সংরক্ষণ অঞ্চল ব্যবস্থা গড়ে তুলবে চীন। গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র ও শিল্পে কার্বন নির্গমন সংক্রান্ত প্রস্তাব উত্থাপন এবং তা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বেইজিং।
চীনের এসব ব্যবস্থা প্রমাণ করে, সুন্দর দেশ গড়ে তুলার লক্ষ্য বাস্তবায়নে চীনের বাস্তব কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে, যা বিশ্বের টেকসই উন্নয়নের জন্য আরও বেশি চালিকাশক্তি যোগাবে। জাতিসংঘ জীববৈচিত্র্য সনদ কার্যালয়ের নির্বাহী সচিব এলিজাবেথ ম্রেমা চীনের প্রশংসা করে বলেন, “গত কয়েক দশক ধরে চলা চীনের কার্যক্রম আমাদের সংস্কারের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত”। চীন ‘জীববৈচিত্র্য কনভেনশন’-এ যোগ দেওয়া প্রথম পর্যায়ের দেশ। চীনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা কাজে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হয়েছে।
(রুবি/এনাম)