অক্টোবর ১৫: চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং গতকাল (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় ভিডিও সংযোগের মাধ্যমে দ্বিতীয় জাতিসংঘ বৈশ্বিক টেকসই পরিবহন সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ‘বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ, যুগের সঙ্গে সংযুক্ত করে টেকসই উন্নয়নের পথে আগানো” শীর্ষক মূল ভাষণ দিয়েছেন।
ভাষণে সি চিন পিং বলেন, পরিবহন যোগাযোগ অর্থনীতি ও সভ্যতার সেতু বন্ধন। প্রাচীন সিল্ক রোডে উটের রিং বাজানো থেকে সামুদ্রিক যুগ, তারপর আধুনিক নেটওয়ার্কের চারদিকে ছড়িয়ে পড়া পর্যন্ত পরিবহনের জন্য অর্থনৈতিক সংযুক্তি, সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান জোরদার হয়েছে, যার ফলে বিশ্ব ঘনিষ্ঠ এক গ্রামে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে শত বছরের পরিবর্তন ও মহামারি পরিস্থিতি বিশ্বের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও গণজীবিকা উন্নয়নে কঠোর চ্যালেঞ্জ বয়ে এনেছে। আমাদের উচিত বিশ্ব উন্নয়নের প্রবণতা অনুসরণ করে বৈশ্বিক পরিবহন সহযোগিতা বেগবান, কাঠামোগত যোগাযোগের নকশা, বাণিজ্যিক বিনিয়োগ সুগম এবং সভ্যতার যোগাযোগের নতুন অধ্যায় উন্মোচন করা।
এ প্রসঙ্গে সি চিন পিং পাঁচটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। প্রথমত: উন্মুক্তভাবে সমন্বিত তত্পরতা চালানো এবং পারস্পরিক যোগাযোগ জোরদার করা। তিনি বলেন,‘উন্মুক্ত বৈশ্বিক অর্থনীতি গঠন ত্বরান্বিত করতে হবে। অবৈষম্যপূর্ণ, একচেটিয়া নিয়ম ও ব্যবস্থা বাদ দিতে হবে, যাতে অর্থনীতির বিশ্বায়নের প্রক্রিয়া আরও উন্মুক্ত, সহনশীল এবং কল্যাণকর ও ভারসাম্যপূর্ণতার দিকে এগিয়ে যায়। পাশাপাশি, কাঠামোগত ‘দৃশ্যমান যোগাযোগ’ এবং নীতিগত ‘অনলাইন যোগাযোগ’ জোরদার করতে হবে, যাতে ভূমি, সমুদ্র, আকাশ ও অনলাইনে যোগাযোগ ও সংযুক্তি জোরদার হয়।’
দ্বিতীয়ত: অভিন্ন উন্নয়নে অবচিল থাকতে এবং সমতাসম্পন্ন কল্যাণ বেগবান করতে হবে। বিভিন্ন দেশের অভিন্ন উন্নয়ন হলো প্রকৃত উন্নয়ন। সবার অভিন্ন সমৃদ্ধি হলো প্রকৃত সমৃদ্ধি। উন্নয়নের ভারসাম্যহীনতার সমস্যা সমাধান মানব জাতির অভিন্ন উন্নয়নে আরও বিশাল ভবিষ্যতকে সুগম করবে। এ প্রসঙ্গে সি চিন পিং বলেন,‘পরিবহন যোগাযোগের অগ্রাধিকারের ভূমিকা সম্প্রসারণ করতে হবে। যাতে দরিদ্র অঞ্চলে অর্থনীতি ও গণজীবিকা পথের কারণে উন্নত হতে পারে। পাশাপাশি উত্তর-দক্ষিণ ও দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা জোরদার করতে হবে, যাতে স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের আন্তদেশীয় পরিবহন কাঠামো আরও সমর্থন পায় এবং তাদের অভিন্ন সমৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক হয়।’
তৃতীয়তঃ সৃজনশীলতাকে চালিকাশক্তি হিসেবে গণ্য করায় অবিচল থাকতে হবে এবং উন্নয়নের চালিকাশক্তি জোরদার করতে হবে। স্মার্ট যোগাযোগ ও লজিস্টিক জোরদার করা উচিত। পাশাপাশি, বিগ ডেটা, নেটওয়ার্ক ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ নানা খাতের সংমিশ্রণ বেগবান করতে হবে।
চতুর্থতঃ পরিবেশকে অগ্রাধিকার দেয়ায় অবিচল থাকতে হবে এবং নিম্ন কার্বন নির্গমন বাস্তবায়ন করতে হবে। সবুজ ও নিম্ন কার্বনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের সার্বিক সবুজায়নে রূপান্তর বেগবান করতে হবে। কারণ এটি টেকসই উন্নয়নের দীর্ঘমেয়াদী উপায়।
পঞ্চমতঃ বহুপক্ষবাদে অবিচল থাকতে হবে এবং বৈশ্বিক প্রশাসনকে সুষ্ঠু করতে হবে। যৌথ আলোচনা, যৌথ প্রতিষ্ঠান ও সমন্বিত অর্জনের প্রশাসনের দৃষ্টিতে বিশ্বব্যাপী সম্পদ প্রয়োগ করে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।
সি চিন পিং বলেন, চীন অব্যাহতভাবে বহুপক্ষবাদের পতাকা এগিয়ে নিয়ে যাবে। বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ, যুগের সঙ্গে সংযুক্ত করে নিজের উন্নয়ন সাধনের পাশাপাশি বিশ্ব উন্নয়নে আরও বড় ভূমিকা রাখতে ইচ্ছুক চীন।
তিনি বলেন,‘চীনের উন্মুক্ত দ্বার আরও সম্প্রসারিত হবে এবং কোনো দিনই তা বন্ধ হবে না। চীন অব্যাহতভাবে উচ্চমানের ‘এক অঞ্চল এক পথ’ যৌথ নির্মাণকাজ সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের কাঠামোগত ব্যবস্থার মধ্যে যোগাযোগ, সবুজ সিল্ক রোড ও ডিজিটাল সিল্ক রোড নির্মাণ দ্রুততর করবে চীন।’ (রুবি/এনাম/আকাশ)