বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবে রোমানিয়ার চলচ্চিত্র ‘নো রেস্ট ফোর দ্য লেডি’
2021-10-14 15:54:39

বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবে রোমানিয়ার চলচ্চিত্র ‘নো রেস্ট ফোর দ্য লেডি’_fororder_1

২০ সেপ্টেম্বর রাতে একাদশ বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের গালিচায় দু’শতাধিক অতিথি, প্রায় ৩০টি চলচ্চিত্রের প্রধান নির্মাণকারী, অভিনেতা ও অভিনেত্রী আবির্ভূত হন।

আসলে প্রতিবারের বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবের লাল গালিচা হলো মিডিয়া ও চলচ্চিত্র ভক্তদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু। চলতি বছর থিয়েনথান পুরস্কারের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইউনিটে মোট ১৫টি চলচ্চিত্র অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবের বৈশিষ্ট্য হিসেবে চলতি বছর ‘বেইজিংয়ের প্রদর্শন ইউনিট’ প্রায় তিনশ’ দেশি-বিদেশি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ৩২টি প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শন করে। এ বছর বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সব অনলাইন ও অফলাইনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশীয় জনগণের সাংস্কৃতিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি এর বৈশ্বিক প্রভাবও বেড়েছে।

 

এখন সবাই মিলে ‘No Rest for the Old Lady’ নামে রোমানিয়ার একটি চলচ্চিত্রের ওপর নজর দেবো। এ চলচ্চিত্রটি দশম বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইউনিটে অন্তর্ভুক্ত হয়। এ চলচ্চিত্র বেইজিংয়ের বাওলি আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শনের পর এর পরিচালক অ্যান্দ্রেই গ্রুজনিজকি এবং প্রযোজক অ্যান্দ্রিয়া দুমিত্রেসকু ভিডিও লিংকের মাধ্যমে দর্শকদেরকে কৃতজ্ঞতা জানান এবং চীনা দর্শকদের সঙ্গে চলচ্চিত্র তৈরির অনুভূতি ভাগাভাগি করেন। দর্শকদের সঙ্গে চলচ্চিত্রের থিম ও খুঁটিনাটি বিষয়ে মজাদার কথা বলেন তারা।

 

প্রথমে এ চলচ্চিত্রের প্রধান বিষয়ের সঙ্গে পরিচিত হবো। এতে প্রায় বিচ্ছিন্ন একটি গ্রামে বাস করা দু’জন বৃদ্ধ এমির ও তিতি’র মৈত্রীর ওপর ফোকাস করা হয় এবং একই সাথে ভূত ও দেবতাদের রীতিনীতি নিয়ে আলোচনা করা হয়, যা এখনও রোমানিয়ার কিছু গ্রামীণ এলাকায় রয়েছে। চলচ্চিত্রের কাহিনী এমিরের স্ত্রী স্মারান্ডার মৃত্যুর ৪০ দিন পর একটি স্মারক সেবা থেকে শুরু হয়। ভালো বন্ধু তিতির মনে স্মারান্ডার মৃত্যুর জন্য গভীর অনুভূতি আছে। একদিকে এমির ভূত বিশ্বাস করেন না এবং অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠান পছন্দ করে না। অন্যদিকে তিতি মনে করেন, স্মারান্ডার আত্মা তার জন্য ঝামেলা সৃষ্টি করেছে। তিনি অনুভব করেন যে, তার শারীরিক অবস্থা ক্রমশ খারাপ হয়ে যাচ্ছে এবং বাকি দিনগুলি গণনা করা যায়। তিতিকে উত্সাহ দিতে এমির তাকে সাহায্য করা শুরু করেন।

 

এ চলচ্চিত্র হলো রোমানিয়ার পরিচালক অ্যান্দ্রেই গ্রুজনিজকি’র চতুর্থ লম্বা দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র। যা ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবে প্রথমবার মুক্তি পাওয়ার পর রোমানিয়ার চলচ্চিত্র উত্সবে তা প্রদর্শিত হয়। তারপর চলচ্চিত্রটি বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবের মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইউনিটে অন্তর্ভুক্ত হয়।

 

বেইজিং ফিল্ম একাডেমির শিক্ষক চাং সিও তি চলচ্চিত্র দেখার পর সাংবাদিকদের বলেন, এই চলচ্চিত্রটি একটি সাধারণ বর্ণনামূলক পদ্ধতি নয়, বরং অডিও-ভিজ্যুয়াল পদ্ধতিতে একটি নির্দিষ্ট গল্প বলা হয়। আগে দেখা ভূতের সিনেমা বা রহস্যময় চলচ্চিত্রের চেয়ে একটু ভিন্ন রকম। এ চলচ্চিত্রে খুব স্পষ্ট সাসপেন্সের বিষয় খুঁজে পাওয়া যায়নি।

বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবে রোমানিয়ার চলচ্চিত্র ‘নো রেস্ট ফোর দ্য লেডি’_fororder_562c11dfa9ec8a13dd3feb953722b286a0ecc04d

দর্শকেরা জিজ্ঞাস করেন, দু’জন বৃদ্ধের মৈত্রী ছাড়া, চলচ্চিত্রে আর কি কি বলা হয়েছে? উত্তরে পরিচালক অ্যান্দ্রেই গ্রুজনিজকি বলেন, ‘...চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বৃদ্ধদের জীবনের ওপর দৃষ্টি রাখার কথা বলা হয়েছে। বিশেষ করে দূরবর্তী অঞ্চলের বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, আধুনিক সমাজ প্রায় যাদেরকে পরিত্যাগ করেছে এবং তারা একাকী ও নিঃসঙ্গ জীবন কাটাচ্ছেন। বসয় বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা কীভাবে মৃত্যুকে দেখবেন, তার ওপর দৃষ্টিপাত করা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে।’

পরিচালক আরও বলেন, ‘কিছু সামাজিক সমস্যা তুলে ধরা ছাড়াও, আমার রচনার অনুপ্রেরণা আশেপাশের বন্ধু থেকে এসেছে। আমার খুব ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু আছে। তিনি একজন কবি এবং তার মা’র বয়স ৯০ বছর। তবে তার দারুণ শক্তি আছে, তিনি সবসময়ই তার চারপাশের মানুষকে প্রেরণা দিতে পারেন এবং নিজের বয়সসীমা অতিক্রম করে যান।

 

তিনি আমাকে রচনার অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। তাই আমি এমির নামে এমন একটি চরিত্র তৈরি করেছি, যিনি সক্রিয় ও বয়সসীমা অতিক্রম করেছেন। অন্যদিকে আমি গ্রামের কিছু গতানুগতিক ঐতিহ্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছি। এখন পর্যন্ত রোমানিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে এসব রীতিনীতি সম্মানিত ও অব্যাহত রয়েছে। সেখানকার মানুষ এখনও বিশ্বাস করেন যে, মৃত্যুর পরে একটি আত্মা থাকে। ‘No Rest for the Old Lady’ নামে চলচ্চিত্রের দু’টি নায়ক সম্পূর্ণরূপে ভিন্ন ব্যক্তিত্বের দুইজন বয়স্ক মানুষ। এমির প্রাণবন্ত এবং ভূত-দেবতায় বিশ্বাস করেন না, সংগ্রাম করতে পছন্দ করেন এবং সাইডকারে চড়েন, তিতি আরামদায়ক, তিনি রীতিনীতি মেনে চলেন এবং হুইল চেয়ারে বসে থাকেন। যদিও তাদের বিশ্বদর্শন এত ভিন্ন, তাদের বন্ধুত্ব একই। এটি গ্রহণযোগ্য ও সহনশীলতার একটি চলচ্চিত্র।

বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবে রোমানিয়ার চলচ্চিত্র ‘নো রেস্ট ফোর দ্য লেডি’_fororder_3

পরিচালক অ্যান্দ্রেই গ্রুজনিজকি আগে সেদেশের জাতীয় কোষাগার-স্তরের ফিল্ম মাস্টার লুসিয়ান পিন্টিলের সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। সেই অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে অ্যান্দ্রেই গ্রুজনিজকি বলেন, পরিচালক পিন্টিলের সঙ্গে সহযোগিতা করা আমার জন্য দারুণ ব্যাপার। বলা যায়, লুসিয়ান পিন্টিলে আমার দ্বিতীয় স্কুল। আমি অনেক কিছু শিখেছি। যেমন- কীভাবে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সঙ্গে সমন্বয় ঘটানো যায় প্রভৃতি।

 

বিনিময়ের সময় কোনো কোনো দর্শক জিজ্ঞাস করেন যে, ভায়োলিন বাজানো একজন বুড়ো মানুষ ছবিতে তিনটি জায়গায় উপস্থিত হন। ছবিতে আমরা দেখেছি যে, তিনি যে সংগীত বাজান- তবে তা নিখুঁত নয়। এই ধরনের ত্রুটিপূর্ণ সংগীত কি প্রবীণদের অনুভূতি তুলে ধরতে পারে? উত্তরে পরিচালক বলেন, আসলে পাণ্ডুলিপিতে সেই বেহালাবাদকের কোনো নকশা ছিলো না। আমি তাকে শুটিং সাইটে দেখেছি। তাকে খুব পছন্দ করেছি। আমি তাকে চলচ্চিত্রে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি তার সংগীত ব্যবহারের মাধ্যমে সময় অতিবাহিত হওয়া এবং ঘটনার বিকাশকে চিহ্নিত করতে চেয়েছিলাম। হ্যাঁ, তার বাজানো সংগীত নিখুঁত নয়। কিন্তু আসলে কিছুই নিখুঁত নয়, জীবন নিখুঁত নয়, শিল্প নিখুঁত নয়। আমরা সংগীতের ব্যবহার দিয়ে মানুষের বয়স বেড়ে যাওয়ার কথা প্রকাশ করেছি, সেই সঙ্গে আমরা তারুণ্যের কথাও স্মৃতিচারণ করছি।

লিলি/তৌহিদ/শুয়ে