প্রযুক্তিমনা শিক্ষার্থীদের আইকন চীনা প্রকৌশলী সুন ছুন
2021-10-14 20:48:51

ঢাকা, হাবিবুর রহমান অভি: বিশাল মহাকাশের বুকজুড়ে ছড়িয়ে থাকা গ্রহ-উপগ্রহ ও নক্ষত্ররাজি দেখা যাবে এক নিমেষেই। খুজেঁ দেখা যাবে তারকারাজি। এমনই এক টেলিস্কোপ স্থাপন করা হয়েছে চীনের কুইচৌ প্রদেশে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, যুগান্তকারী এই পদক্ষেপ মহাকাশ গবেষণায় যোগ করেছে ভিন্ন মাত্রা। অন্যদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই প্রকল্পে কাজ করছেন বেশ কয়েকজন নারী প্রকৌশলীও।

প্রযুক্তিমনা শিক্ষার্থীদের আইকন চীনা প্রকৌশলী সুন ছুন_fororder_b5

 

খোলা আকাশের এই দুর্দান্ত এই রূপ আগে দেখেছেন কখনো? লেন্সে চোখ মেলরেই ছোট ছোট তারাগুলো ধরা দেবে বিশাল আকারে।

পাহাড়ের উপরে স্থাপন করা এই রেডিও টেলিস্কোপে উঠে আসে মহাকাশের গোপন রহস্য।

প্রযুক্তিমনা শিক্ষার্থীদের আইকন চীনা প্রকৌশলী সুন ছুন_fororder_b7

এখানেই করা হচ্ছে মানবজাতির উৎস অনুসন্ধানের দারুণ সব গবেষণা। পুরো বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেওয়া এই প্রকল্পের একজন কর্মকর্তা সুন ছুন। স্কুলের প্রযু্ক্তির ক্লাস কখনোই মিস করেননি সুন। সেই থেকে তার স্বপ্ন ছিলো মহাকাশ গবেষণা নিয়ে পড়াশোনা করার।

প্রযুক্তিমনা শিক্ষার্থীদের আইকন চীনা প্রকৌশলী সুন ছুন_fororder_b6

বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে সুযোগ পেয়ে যান রেডিও টেলিস্কোপ প্রকল্পে কাজ করার। তেত্রিশ বছর বয়সী এই তরুণী এখন একজন পুরোদস্তুর প্রকৌশলী।

প্রযুক্তিমনা শিক্ষার্থীদের আইকন চীনা প্রকৌশলী সুন ছুন_fororder_b9

৫০০ মিটার অ্যাপারচারসমৃদ্ধ গোলাকার রেডিও টেলিস্কোপের নাম দেয়া হয়েছে ‘ফাস্ট’। প্রায় ৩০টি ফুটবল মাঠের সমান আয়তনের এই টেলিস্কোপ নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১২ সালে নেয়া চীনের অন্যতম বড় প্রকল্পগুলোর একটি। আর শুরু থেকেই ‘ফাস্ট র নির্মাণকাজ অংশ নেন সুন। তিনি জানান, গ্যালাক্সি বা ছায়াপথ থেকে রেডিও সংকেত সংগ্রহ করা হয় ফাস্ট হলো এর মাধ্যমে। এর মূল লক্ষ্যই মহাকাশের দূরবর্তী বস্তু থেকে তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা।

দিনের শুরুতে প্রকল্প অফিসে উঠতে পার হতে হয় পাহাড়ি পথ। প্রকল্প কর্মকর্তারা প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার সিঁড়ি বেয়ে যোগদান করেন কর্মক্ষেত্রে। অফিস চলে সপ্তাহে ৭ দিনই।

প্রযুক্তিবিদদের ২৪ ঘণ্টা কাজ করতে হয় পালাক্রমে। প্রতি শুক্রবার সুবিশাল অডিটরিয়ামে বসে প্রযুক্তিবিদদের সম্মেলন। নিজেদের নানা পরামর্শসহ এখানে তুলে ধরা হয় সব পদক্ষেপের চুলচেরা বিশ্লেষণ।

বছরখানের আগে শুরু হওয়া এই প্রকল্প এরই মধ্যে আবিষ্কার করেছে ৩৭১টি মহাকাশীয় বস্তু। সনাক্ত করেছে নানা অচেনা তরঙ্গ।

প্রযুক্তিমনা শিক্ষার্থীদের আইকন চীনা প্রকৌশলী সুন ছুন_fororder_b10

তবে এতো ব্যাপক কর্মযজ্ঞের মধ্যেও এই প্রকৌশলী সমান গুরুত্ব দেন পরিবারকে। কাজ শেষে বাসায় ফিরে সময় কাটান পরিবারের সঙ্গে। কখনো কখনো প্রকৃতির সৌন্দর্যে হারিয়ে যান এই প্রকৌশলী দম্পতি।

নিজেকে ফিট রাখতে ব্যাডমিন্টন, বাস্কেটবল, ভলিবলসহ নানা রকম স্পোর্টসে মেতে থাকেন তারা।

সাপ্তাহিক ছুটি কাটিয়ে সতেজ মনোবল নিয়ে আবারও কাজে যোগ দেন সুন। শুরু হয় দিনের কর্মব্যস্ততা। প্রকল্পের ছোট ছোট ব্যাপারও নজর এড়ায় না তার; গুরুত্ব দেন সহকর্মীদের পরামর্শ। কাজের ফাঁকেই প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে সেরে নেন দরকারি আলাপ।

 

বিশ্বের মহাকাশ গবেষণায় সাড়া ফেলে দেওয়া এই প্রকল্প ব্যাপক অবদান রেখেছে স্থানীয় পর্যটন শিল্পে। কিছু দিন আগেও দরিদ্র-তালিকায় থাকা ফিং থাং জেলার চেহারা আমূল বদলে গেছে চীনের এই প্রকল্পের কল্যাণে।

 

বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা আড়াই লাখেরও বেশি পর্যটকের আনাগোনা হয় এখানে। ফলে জ্যোতির্বিদ্যা ও পর্যটন উন্নয়নের সঙ্গে আয় বেড়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।

সুনের নানা মাত্রিক কর্মচাঞ্চল্যের খ্যাতি এরই মধ্যে ছাড়িয়ে পড়েছে নানা দিকে। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া প্রযুক্তিমনা শিক্ষার্থীদের কাছে তুমুল জনপ্রিয় তিনি। ৩৩ বছর বয়সী এই তরুণ নারী প্রকৌশলী নতুনদের কাছে তাই এক প্রেরণার নাম।