অক্টোবর ১৪: জাতিসংঘ ‘জীববৈচিত্র্য সনদ’ স্বাক্ষরকারীদের সম্মেলনে (কোপ১৫) গতকাল (বুধবার) গৃহীত হয়েছে ‘খুনমিং ঘোষণা’। ঘোষণায় বিভিন্ন পক্ষের প্রতি পৃথিবীর প্রাণীদের অভিন্ন স্বার্থের কমিউনিটি গঠনের আহ্বান জানানো হয়।
এবারের সম্মেলনের গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য হিসেবে খুনমিং ঘোষণায় ‘২০২০ সালের পর বৈশ্বিক জীববৈচিত্র্য কাঠামো প্রণয়ন, পেশ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে বর্তমান জীববৈচিত্র্য বিলুপ্তি রোধ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধারের পথে ফিরে যাওয়ার দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়। সার্বিকভাবে মানুষ ও প্রকৃতির সম্প্রীতিময় সহাবস্থানের ‘২০৫০ সদিচ্ছা’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই এটি করা হয়।
চীনের পরিবেশবিষয়ক উপমন্ত্রী চাও ইং মিন বলেন, চীন সর্বপ্রথম ‘খুনমিং ঘোষণা’ উত্থাপন করেছে। গতকাল শেষ হওয়া জাতিসংঘ ‘জীববৈচিত্র্য সনদ’ স্বাক্ষরকারীদের সম্মেলনের উধ্বর্তন অধিবেশনে এ ঘোষণা পেশ করা হয়। তিনি বলেন,‘চীনের উন্মুক্ততা, স্বচ্ছতা ও সহনশীলতার মনোভাব এবং বিভিন্ন পক্ষের বুদ্ধিদীপ্ত প্রস্তাব ও পরামর্শ ঘোষণাটিকে সমৃদ্ধ করেছে। তাতে জীববৈচিত্র্য বিলুপ্তির প্রবণতা রোধে বিভিন্ন দেশের প্রতিজ্ঞা প্রতিফলিত হয়েছে।’
চাও ইং মিন জানান, খুনমিং ঘোষণায় চারটি বিষয় রয়েছে। প্রথমত সর্বোচ্চ পর্যায়ের পরিকল্পনা ও পরিপূরক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ২০২০ সালের পর বৈশ্বিক জীববৈচিত্র্য কাঠামো প্রণয়নকাজ সামনে এগিয়ে নিতে হবে। পাশাপাশি জীববৈচিত্র্যের মূল্য দেয়া এবং জাতীয় নীতিমালাকে আইন ও বিধানসহ নানা ক্ষেত্রে প্রাধান্য দিতে হবে।
দ্বিতীয়ত: পরিবেশের আইনী কাঠামোকে সুবিন্যস্ত করতে হবে। পরিবেশগত প্রজাতি ও জিনের দিক দিয়ে জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও ব্যবহার বেগবান করতে হবে।
তৃতীয়ত: জীববৈচিত্র্য বিলুপ্তির কারণ লক্ষ্য করে কার্যকর ও বাস্তব সমাধান বের এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
চতুর্থতঃ স্বার্থসংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর অংশ নেওয়া ও অবদান রাখাকে উত্সাহিত করতে হবে এবং বহুপক্ষীয় পরিবেশগত সনদ ও আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়ার সমন্বিত কার্যকারিতা সম্প্রসারিত করতে হবে।
চাও ইং মিন বলেন,‘খুনমিং ঘোষণায় বিভিন্ন দেশের প্রতি ঐতিহাসিক তত্পরতা চালানো এবং আরো বাস্তব ও শক্তিশালী নীতিগত ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়। এ ঘোষণায় বিভিন্ন দেশের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বাস্তব অবদান, কার্যকর তত্পরতা গ্রহণের প্রতিজ্ঞা ও সদিচ্ছা প্রতিফলিত হয়েছে, যা বিশ্বের পরিবেশগত প্রশাসনের জন্য নতুন চালিকাশক্তি যোগাবে এবং সার্বিকভাবে মানুষ ও প্রকৃতির সম্প্রীতিময় সহাবস্থানের ‘২০৫০ সদিচ্ছা’ বাস্তবায়নকে প্রমোট করবে।’
জাতিসংঘ জীববৈচিত্র্য সনদ কার্যালয়ের নির্বাহী সচিব এলিজাবেথ ম্রেমা খুনমিং ঘোষণাকে ইতিবাচক ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী বলে মূল্যায়ন করেছেন। তিনি বলেন, ৫৭টি স্বাক্ষরকারী দেশের যৌথ আলোচনায় অর্জিত হয়েছে এ ঘোষণা। তিনি বলেন,
‘’খুনমিং ঘোষণার উচ্চাকাঙ্ক্ষা রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও প্রতিশ্রুতি এবং পরবর্তী তত্পরতার মধ্যে প্রদর্শিত হচ্ছে। স্বাক্ষরকারী দেশগুলো যৌথভাবে এ ঘোষণা পেশ করেছে, তাতে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আর দেরি না-করার বিষয়ে সব পক্ষ সচেতন হয়েছে বলে প্রতিফলিত হয়েছে। অনেক দেশের প্রধান ও মন্ত্রীরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা উত্সাহব্যঞ্জক। সবাই একসাথে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় অংশ নিচ্ছে, তা আমাদের অব্যাহতভাবে এ কাজকে বেগবান করায় আশার আলো সবররাহ করছে।’ (রুবি/এনাম/শিশির)