আজহার লিমন, ঢাকা: যে কোন দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি নাগরিকদের দেয়া আয়কর। অথচ ১৭ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশে কর সনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএন আছে ৪৫ লাখ নাগরিকের। এর মধ্যে আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন দাখিল করেন ২০ লাখ। যারা রিটার্ন জমা দেন তাদের সবাই আবার কর দেন না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হিসেবে, এখানে আয়কর দেন নাগরিকদের ১ শতাংশেরও কম।
আন্তর্জাতিক কর-জিডিপি অনুপাতেও পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ২০২০ সালের মধ্যে এই অনুপাত ১০ শতাংশ থেকে ১৪ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা নেওয়া হলেও বাস্তবে তা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে বাংলাদেশের জিডিপির ১০ শতাংশ পরিমাণে আহরণ করা যাচ্ছে কর। গেল দেড় দশকে বেড়েছে মাত্র ১ শতাংশ। এদিকে, নিয়মিত করদাতা কিংবা ব্যবসায়ী-ভোক্তা পর্যায়ে প্রতিনিয়ত বাড়ছে করের বোঝা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর সালেহ উদ্দিন আহমেদের প্রশ্ন করেছিলাম, এখানে সংকটটা কোথায়?
তিনি বলেন, “প্রথমত, আমাদের ইনকাম ট্যাক্সটা রিগ্রেসিভ। রিগ্রেসিভ এই অর্থে আয় বাড়লে ট্যাক্স বাড়ালে, ট্যাক্স বেশি দেবে, যাদের আয় কম তারা ট্যাক্স কম দেবে। সেই অনুপাতে আমাদের যাদের উচ্চ আয় তারা কিন্ত ট্যাক্স কম দিচ্ছেন দরিদ্র্যদের তুলনায়, সেটি এক নম্বর। দ্বিতীয়ত আমাদের ট্যাক্সটা ডিপেন্ডডেন্ট বেশি হলো পরোক্ষ করের ওপর বা ভ্যাটের ওপর। কিন্তু সাধারণত যখন একটি দেশ উন্নত হয় তারা কিন্ত প্রত্যক্ষ করের ওপর নির্ভর করে বেশি।”
ছবি: ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ
এই বিশেষজ্ঞ আরও মনে করেন, শহরের বাইরে করের আয়সীমার মধ্যে থাকা ব্যবসায়ীদের একটি বিরাট অংশ এখনও করের আওতায় আসেনি। এছাড়া আছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরও নানা অনিয়ম দুর্নীতি। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষক ড. মুস্তাফিজুর রহমান মনে করেন, এর বাইরে আইনী কাঠামো, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে দুর্বলতায় কর আহরনে দক্ষিণ এশিয়াতে নিচের সারিতে বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, “নীতি নির্ধারকদের পক্ষ থেকে একটা বড় দুর্বলতা আছে। আরেকটা বিষয় হলো যেসব বিষয়গুলো এর সঙ্গে জড়িত সেসব প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য লোকবল বা কলেবর বৃদ্ধির যে বিষয়গুলো আছে সে বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার ঠিকমত দেয়া হয় না। সে কারণে দেখা যায়, ট্যাক্স আহরনে যে প্রাক্কলনগুলো করা হয় সেটা অ্যাটেইন করতে যে ধরনের বিনিয়োগ দরকার তা না করায় লক্ষ্য পূরণ হয় না।”
ছবি: ড. মুস্তাফিজুর রহমান।
এই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন কর আহরণে স্বচ্ছতা ও সমতা প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় একই সঙ্গে যেমন করের প্রতি নাগরিক আস্থা বাড়ছে না তেমনি মাত্রা পাচ্ছে কর ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা।