অক্টোবর ১১: চীনের তৃতীয় কেন্দ্রীয় কমিটির সিনচিয়াং-বিষয়ক কর্মসভার পর থেকে সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ স্থিতিশীলভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। সামাজিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি, ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি সিনচিয়াং ভ্রমণে যাওয়া দেশিবিদেশি পর্যটকদের সংখ্যা বছরের পর বছর ধরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্প্রতি চায়না মিডিয়া গ্রুপের (সিএমজি) এক সংবাদিক দক্ষিণ সিনচিয়াং সফরের সময় লক্ষ্য করেছন, স্থানীয় সরকার পর্যটন শিল্প উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সংস্কৃতি ও পর্যটনকে সংযুক্ত করে স্থানীয় অবৈষয়িক উত্তরাধিকার সম্প্রসারণ করেছে।
‘বো সি থেং’ লেকের দর্শনীয় স্থানের এক মঞ্চে দেখা যায়, মঙ্গোলীয় জাতির ঐতিহ্যবাহী পোষাকে লোকজ শিল্পীরা স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র মা থো ছিন বাজিয়ে উদ্যমী নৃত্যের সাহায্যে দূর থেকে আসা পর্যটকদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে।’
বো হু জেলার এ দর্শনীয় স্থানে রয়েছে ৫০টি বৈশিষ্ট্যময় মঙ্গোলীয় পরিবারের বাসস্থান। সংগীত ও নৃত্য পরিবেশনা ছাড়া এখানে প্রদর্শিত হয় মঙ্গোলীয় জাতির সেলাই ও হস্তশিল্প। পর্যটকরা কাছ থেকে পশুপালকদের জীবনের পাশাপাশি নানান ধরণের মঙ্গোলীয় অবৈষয়িক উত্তরাধিকারের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পারেন সেখানে।
‘আমি ছেং তু থেকে এসেছি। এখানে এক সপ্তাহ ছিলাম। স্থানীয় সংস্কৃতি উপভোগ করলাম। এখানে সত্যি ভালো লাগলো।’
‘আমি খ্য লা মা ই থেকে এসেছি। প্রথমবারের মতো বো সি থেং লেক ভ্রমণে এসেছি। এখানে বহুজাতির সাংস্কৃতিক প্রদর্শনী দেখেছি। খুব অভিভূত হয়েছি। আগামীতে সুযোগ পেলে আমি আবার আসবো। সুন্দর সিনচিয়াংকে লাইক দিতে চাই।”
দর্শনীয় স্থানে অবৈষয়িক উত্তরাধিকার প্রদর্শন করা হচ্ছে স্থানীয় সরকারের সংস্কৃতি ও পর্যটনের সংযুক্তির মাধ্যমে পর্যটন বেগবান এবং উত্তরাধিকার সংরক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা। বো হু জেলার সংস্কৃতি, ক্রীড়া, রেডিও, টেলিভিশন ও পর্যটন বিভাগের মহাপরিচালক চান লি চুন বলেন, সংস্কৃতি ও পর্যটন সংযুক্ত হলে উভয়ই জয়ী হবে। তিনি বলেন,‘পর্যটকরা আসলে সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যের পাশাপাশি সংস্কৃতি উপভোগ করতে সক্ষম হয়েছেন। অবৈষয়িক উত্তরাধিকার রক্ষকরা পর্যটকদের সেবার পাশাপাশি আয় করতে পারছেন। যার ফলে তারা উত্তরাধিকার ধারণে আরো উত্সাহিত হবে। প্রবীণ উত্তরাধিকার রক্ষকরা তরুণদের শেখানোর পদ্ধতিতে এ সংস্কৃতি ধারণ করা হচ্ছে। পর্যটকরা বো হু এসে দেখেন এখানকার সমৃদ্ধ ভ্রমণের জায়গাগুলো। তাদের এখানে থাকার সময় বেড়ে যায়। যার ফলে তাদের ব্যয় বেড়ে যায়। স্থানীয় জনগণ বেশি আয় করতে পারেন।’
শুধু দর্শনীয় স্থানে অবৈষয়িক উত্তরাধিকার প্রদর্শন নয়, বো হু জেলা স্থানীয় অবৈষয়িক উত্তরাধিকার অনুসন্ধান ও সংরক্ষণের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। তারা উত্তরাধিকার রক্ষক এবং লোকজ শিল্পীদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেন।
‘চিয়াং ক্য এর’ এমন এক ধরণের পরিবেশনা, যাতে কেবল মুখ ও কান থেকে মঙ্গোলীয় জাতির বীরত্বের ঐতিহাসিক কবিতা পরিবেশনা করা হয়। মঙ্গোলীয় প্রবীণ ছিয়াও লাই তরুণ বয়সে শিক্ষক খুঁজে এ পরিবেশনা শিখেন। বর্তমানে জাতীয় পর্যায়ের স্বীকৃতি পাওয়া ছিয়াও লাই নিজেই ‘চিয়াং ক্য এর’ পরিবেশনার শিক্ষক হয়েছেন। তিনি বলেন, প্রশিক্ষণ কোর্স চালুর কারণে আরও বেশি মঙ্গোলীয় জাতির তরুণ-তরুণী ‘চিয়াং ক্য এর’ পছন্দ করছেন।
তিনি বলেন,‘বছরে একবার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণের দু’এক মাস পর পর প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয়। তাতে দেখা হয়, কে ভালো শিখছেন। আমি খুব আনন্দিত। সবাই এ পরিবেশনা পছন্দ করলে আমরা খুব খুশি। আমাদের শিক্ষার্থীরা মনোযোগ দিয়ে শিখছেন, তাতেও আমরা খুব খুশি। আমাদের সংস্কৃতি ধারণ করবে তারা, তা দেখে আমরা অনেক আনন্দিত।’
(রুবি/এনাম/শিশির)