অক্টোবর ৮: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র মহাপরিচালক তেদ্রোস আদ্হানম গতকাল (বৃহস্পতিবার) জেনিভায় বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ টিকা দেওয়ার একটি পরিকল্পনা পেশ করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, চলতি বছরের মধ্যে বিশ্বের সকল দেশের অন্তত ৪০ শতাংশ করে মানুষকে কোভিড-১৯ টিকার আওতায় আনা হবে।
এক প্রেস ব্রিফিংয়ে আদ্হানম বলেন, এ পর্যন্ত গোটা বিশ্বে ৬৪০ কোটি ডোজ কোভিড-১৯ টিকা মানুষের শরীরে প্রয়োগ করা হয়েছে। অন্যভাবে বললে, বিশ্বের প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ মানুষ কোভিড-১৯ টিকা গ্রহণ করেছেন। তবে এই উত্সাহব্যঞ্জক পরিসংখ্যানের পিছনে লুকিয়ে আছে একটি ভয়াবহ চিত্র। আর সেটি হচ্ছে: উন্নয়নশীল দেশগুলোতে টিকার আওতায় এসেছে তুলনামূলকভাবে খুবই কমসংখ্যক মানুষ।
এমনি এক প্রেক্ষাপটে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘২০২২ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ টিকা দেওয়ার কৌশল’ শীর্ষক পরিকল্পনা প্রকাশ করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, চলতি বছরের মধ্যে বিশ্বের সকল দেশের প্রায় ৪০ শতাংশ করে মানুষকে কোভিড-১৯ টিকা দেওয়া হবে। আর আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে এই হার বেড়ে দাঁড়াবে ৭০ শতাংশে। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য কমপক্ষে ১১০০ কোটি ডোজ টিকার প্রয়োজন হবে। তবে এটি সরবরাহের বিষয় নয়, বরং এটি বিতরণের বিষয়।
এর আগেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ টিকা দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল। সেই পরিকল্পনা অনুসারে, গত সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিশ্বের সকল দেশের অন্তত ১০ শতাংশ করে মানুষকে টিকা দেওয়ার কথা ছিল। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, এই অক্টোবরে এসেও বিশ্বের ৫৬টি দেশ ও অঞ্চলে সে লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব হয়নি। এসব দেশ ও অঞ্চলের অধিকাংশ আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থিত। এ সম্পর্কে তেদ্রোস বলেন, ‘কোভিড-১৯ টিকার গবেষণা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমরা ব্যাপক সাফল্য পেয়েছি। কিন্তু যদি আমরা অবিলম্বে সকল দেশের সবাইকে বিজ্ঞানের এ সুবিধা ভোগ করতে না দিই, তাহলে আমরা সার্বিকভাবে ব্যর্থ হবো।’
টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে যেসব দেশ অনেক এগিয়ে আছে সেসব দেশকে ‘কোভিড-১৯ টিকা বাস্তবায়ন পরিকল্পনা’ ও ‘আফ্রিকান টিকা ক্রয় ট্রাস্ট তহবিল’-এর সঙ্গে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান হু’র মহাপরিচালক। তিনি এসব দেশকে হু’র সঙ্গে করা প্রতিশ্রুতি অবিলম্বে পূরণেরও আহ্বান জানান। টিকা উত্পাদক দেশগুলোকে টিকা ও টিকার কাঁচামালের অন্তঃদেশীয় প্রবাহের অনুমোদন দেওয়া এবং বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও লাইসেন্স শেয়ার করার আহ্বানও জানান তিনি। টিকা উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ‘কোভিড-১৯ টিকা বাস্তবায়ন পরিকল্পনা’ ও ‘আফ্রিকান টিকা ক্রয় ট্রাস্ট তহবিল’-এর সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরকে অগ্রাধিকার দিতে অনুরোধ জানান তিনি। তিনি বলেন, স্বচ্ছতা বাড়াতে ও পেশাদার প্রযুক্তি শেয়ার করতে হবে, যাতে গোটা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের কোভিড-১৯ টিকা উত্পাদন-ক্ষমতা বাড়ানো যায়।
এদিন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরহিস নিউইয়র্ক থেকে অনলাইনে সম্মেলনে ভাষণ দেন। তিনি বলেন, বর্তমানে প্রতিমাসে কোভিড-১৯ টিকা উত্পাদিত হচ্ছে প্রায় ১৫০ কোটি ডোজ। সেজন্য এ বছরের শেষ দিকে বিশ্বের সকল দেশের প্রায় ৪০ শতাংশ করে মানুষ টিকার আওতায় আসবে বলে আশা করা যায়। এক্ষেত্রে টিকার অনুপযুক্ত বিতরণ কেবল অনৈতিক নয়, বোকামিও বটে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য টিকার ন্যায়সঙ্গত বিতরণ অত্যাবশ্যক। একটি সমন্বিত ও ন্যায্য পদ্ধতি না-থাকলে, টিকা বিতরণের ক্ষেত্রে সমতা বজায় রাখা কঠিন হবে। আর সেক্ষেত্রে বিশ্বকে মহামারীমুক্ত করা প্রায় অসম্ভব। সবার কল্যাণের জন্য, সকল দেশের সকল মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হবে। (ছাই/আলিম/স্বর্ণা)