পরিষেবা বাণিজ্যকে আরো চাঙ্গা করবে ডিজিটাল প্রযুক্তি
2021-10-08 14:24:03

কোভিড-১৯ মহামারীর প্রভাবে ২০২০ সালে বিশ্বের আন্তঃসীমান্ত বিনিয়োগ ৪০ শতাংশেরও বেশি কমেছে। পরিষেবা বাণিজ্যও গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কীভাবে পরিষেবা বাণিজ্য তথা বিশ্ব অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ইঞ্জিনটিকে পুনরুজ্জীবিত করা যায় এবং এর ভবিষ্যত উন্নয়ন প্রবণতা কেমন হবে? তা নিয়ে আজ আমি আলোচনা করব।

 

কঠিন সময়ে প্রত্যয় আরো বাড়াতে হয়। তাই মহামারী যত কঠোর হবে, সহযোগিতা তত জোরদার করতে হবে। পরিষেবা শিল্পের উন্মুক্তকরণ ও পরিষেবা বাণিজ্যের উন্নয়ন হচ্ছে বিভিন্ন দেশের মধ্যকার অর্থনৈতিক বিশ্বায়নে এবং আন্তর্জাতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও সহযোগিতায় অংশ নেয়ার গুরুত্বপূর্ণ এক পথ।

 

রাষ্ট্রীয় পরিষদের উন্নয়ন গবেষণা কেন্দ্রের সিপিসির অধীনস্থ সংস্থার সম্পাদক মা চিয়ান থাং পরিষেবা বাণিজ্য উন্মুক্তকরণ ও উন্নয়নের নতুন প্রবণতা-বিষয়ক এক শীর্ষ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।

 

পরিষেবা বাণিজ্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং আন্তর্জাতিক আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ খাত। নতুন উন্নয়ন কাঠামো গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এই খাত। মহামারী মোকাবিলা এবং পরিষেবা শিল্পের উন্নয়ন পুনরুজ্জীবিত করতে দৃঢ় প্রত্যয় খুবই জরুরি।

 

‘চীনা পরিষেবা’ বিশ্বের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ? সম্মেলনে এর উত্তর দিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আলোচনার প্রতিনিধি ও উপমন্ত্রী ইয়ু চিয়ান হুয়াং।

 

পরিসংখ্যান দিয়ে তিনি দেখিয়েছেন, ২০২০ সালের চীনের পরিষেবা আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৬৬.১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং তা গত সাতবছর ধরে  ধারাবাহিকভাবে বিশ্বের দ্বিতীয় স্থান ধরে রেখেছে। আগের ১০ বছরে চীন বিশ্ব থেকে মোট ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি পরিষেবা আমদানি করেছে এবং বিশ্ব পরিষেবা আমদানি বৃদ্ধিতে ২৪ শতাংশ অবদান রেখেছে। অনুমান করা হচ্ছে, এই খাত প্রতিবছর সারা বিশ্বে প্রায় ১ কোটি ৯০ লাখ কর্মসংস্থান সরবরাহ করে।

 

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সাবেক উপ-মহা পরিচালক ই শিয়াও জুন বলেন, বিশ্ব পরিষেবা রপ্তানির মোট পরিমাণে চীনের পরিষেবা বাণিজ্যিক রপ্তানি ২০০৫ সালের ৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২০ সালে ৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। একই সময় বিশ্ব পরিষেবা আমদানির মোট পরিমাণে চীনের হিস্যা ২০০৫ সালের ৩.৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২০ সালে ৮ শতাংশে পৌঁছেছে।

 

মা  চিয়ান থাং বলেন, ‘আমাদের পরিষেবা বাণিজ্য উন্নয়নের বিরাট সুপ্তশক্তিকে খতিয়ে দেখা উচিত।’  তিনি বলেন, গত প্রায় ১০ বছরে বিশ্ব পরিষেবা বাণিজ্যের গড়পড়তা বৃদ্ধির গতি পণ্যের বাণিজ্যিক বৃদ্ধির দ্বিগুণ হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে তার অবস্থান স্থিতিশীলভাবে উন্নত হয়েছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডাব্লিউটিও) পূর্বাভাস অনুযায়ী, ভবিষ্যতে পরিষেবা বাণিজ্য আরো বাড়বে। এটি বর্তমানের ২২ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০৪০ সালে ৩৩ শতাংশেরও বেশি হবে।

 

মহামারীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং পরিষেবা শিল্পের উন্নয়ন পুনরুজ্জীবিত করতে নতুন পথ খুঁজতে হবে। ইয়ু চিয়ান হুয়া বলেন, মহামারী শুরু পর থেকে আরো বেশি পরিষেবা অফলাইন থেকে অনলাইনে স্থানান্তরিত হয়েছে। পরিষেবা বাণিজ্য ডিজিটাইজেশন স্পষ্টভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে এবং তার প্রক্রিয়া অব্যাহতভাবে দ্রুততর হচ্ছে। পরিষেবা বাণিজ্যে কৃত্রিম  বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ এবং নেটওয়ার্কের সংযুক্তি উন্নত হচ্ছে। নতুন পরিষেবা বাণিজ্যিক নিয়মে পরিষেবা শিল্পের উন্মুক্তকরণ ও পরিসংখ্যানের মুক্ত প্রবাহের ওপর আরো মনোযোগ দিতে হবে। এছাড়া, আন্তঃসীমান্ত পরিষেবা ও ডিজিটাল বাণিজ্যের উন্নয়ন স্পেস এবং নেতিবাচক তালিকাকে সামনে রেখে উচ্চমানের পরিষেবা বাণিজ্যিক অবাধকরণের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। পরিষেবা বাণিজ্যের উচ্চ মানদণ্ড ও শক্তিশালী বাধ্যবাধকতা আরো স্পষ্ট করতে হবে।

 

মা চিয়ান থাং প্রস্তাব করেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে পুরোপুরিভাবে পরিষেবা বাণিজ্য উন্নয়নের ‌উপর গুরুত্ব দিতে হবে, যথাযথভাবে মহামারী প্রতিরোধের পূর্বশর্ত হিসেবে পরিষেবা বাণিজ্য উন্মুক্ত ও তার উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে হবে।

এছাড়া, যথা সময়ে নতুন দফা তথ্য প্রযুক্তি সংস্কার ও শিল্প রূপান্তরের নতুন সুযোগ কাজে লাগিয়ে  বিশ্বের ডিজিটাইজেশন রূপান্তর বেগবান, ডিজিটাল বাণিজ্য উন্নয়নের পরিবেশ সুবিন্যস্ত, এবং একসাথে ডিজিটাল বাণিজ্যের সৃজনশীল উন্নয়ন, উন্মুক্তকরণ ও সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে।

 

 

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক সাম্প্রতিক  অনুমান মতে, অক্টোবর মাসে এমনকি গোটা চতুর্থ প্রান্তিকে চীনের পণ্যভোগ স্থিতিশীল ও পুনরুদ্ধারের প্রবণতা বজায় থাকবে। সারা বছর সামাজিক পণ্যভোগের মোট খুচরা-বিক্রয়ের পরিমাণ ৪৪ ট্রিলিয়ন ইউয়ানে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই সংখ্যা ২০২০ ও ২০১৯ সালের চেয়ে যথাক্রমে ১২.৫ ও ৮ শতাংশ বেশি।

 

সম্প্রতি পণ্যভোগের বৃদ্ধি প্রশমিত বাজারের নজর আকর্ষণ করেছে। আগস্ট মাসে সামাজিক পণ্যভোগের খুচরা-বিক্রয়ের মোট পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২.৫ শতাংশ বেশি হয়েছে, কিন্তু জুলাই মাসের চেয়ে ৬ শতাংশ কমেছে। বৃদ্ধির গতি স্পষ্টভাবে ধীর হয়েছে। এর প্রধান কারণ ছিল নতুন দফা মহামারী ও বন্যার অল্প ও আংশিক প্রভাব। কিন্তু পণ্যভোগের প্রবণতার তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি।

 

পণ্যভোগের উন্নয়ন দ্রুততর করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ঐতিহ্যবাহী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ডিজিটাইজেশন ও সেসবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ বাড়াতে সমর্থন দেবে। ফলে স্মার্ট স্টোর ও কন্টাক্টলেস ডেলিভারিসহ বিভিন্ন নতুন বাণিজ্যিক কার্যক্রম ও আরো নতুন কিছু উত্সাহব্যঞ্জক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে মন্ত্রণালয়। এছাড়া, ঐতিহ্যবাহী ব্যবসায়িক স্থান ও অব্যবহৃত কারখানাগুলোর নতুন ধরণের পণ্যভোগ বহনকারীতে রূপান্তরে সমর্থন দেবে। পাশাপাশি, লাইভ ই-বাণিজ্য ও সামাজিক যোগাযোগ ই-বাণিজ্যের ধারাবাহিক ও সুস্থ্য উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা হবে।

 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঞ্চালন উন্নয়ন বিভাগের উপ-প্রধান ইন হোং জানান, মন্ত্রণালয় অধিকতরভাবে পুরনো ব্র্যান্ড উন্নয়নের নীতি ও ব্যবস্থা পূর্ণাঙ্গ করবে। পুরনো ব্র্যান্ডের সৃজনশীল প্রাণশক্তিকে উদ্দীপ্ত করবে।  জাতীয় ব্র্যান্ডের সুপ্তশক্তি কাজে লাগাতে এবং বিভিন্ন স্থানে ‘পুরনো ব্র্যান্ডকে বাসায় নিয়ে যাওয়া’ ও ‘পুরনো ব্র্যান্ডের কমিউনিটিতে প্রবেশ’সহ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করবে।

 

(প্রেমা/এনাম)