‘চীনা তরুণদের আইডল ইউয়ান চেং’
2021-10-07 19:29:27

হাবিবুর রহমান অভি, ঢাকা: পড়ালেখার পাঠ চুকিয়ে একটা চাকরি, বিয়ে, সংসার। আবার পেশাগত জীবনে দারুণ সফলতার সমন্বয়, সেতো কল্পনারও অতীত। কিন্তু জীবনে এমনই এক ভারসাম্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন চীনা তরুণ প্রকৌশলী ইউয়ে ইউয়ান চেং। এই তরুণই এখন চীনাদের চোখে আইডল।

 

‘চীনা তরুণদের আইডল ইউয়ান চেং’_fororder_cai1

 

খুব ভোরেই পুরো দিনের প্রস্তুতি। পরিবারের সঙ্গে সকালের খাবার গ্রহণ আর আলাপ সেরে নেয়ার অবসর, এরপরই শুরু হয় কর্মব্যস্ততা। ৩৮ বছর বয়সী প্রকৌশলী ইউয়ে ইউয়ান চেং এর দিন শুরুর গল্পটা এমনই।

‘চীনা তরুণদের আইডল ইউয়ান চেং’_fororder_cai11

চীনের কুয়াংতং প্রদেশের ২ গুরত্বপূর্ণ শহর শেনচেন ও চংশানের মাঝের দূরত্ব ২০ কিলোমিটার। সড়কপথে আড়াই ঘণ্টার এ দূরত্ব কমিয়ে সমূদ্রপথে মাত্র ২০ মিনিটে পৌছানোর চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করছেন তিনি। চীন সরকারের শীর্ষস্থানীয় চলমান প্রকল্পগুলোর অন্যতম এই শেনচেন-চুশান সেতু নির্মাণ প্রকল্প। আর আলোচিত এই প্রকল্পের মহা-ব্যবস্থাপক তিনি। তাই নেই অবসরের ফুরসত।

একজন সাধারণ প্রযুক্তিবিদ থেকে দক্ষ প্রকৌশলী হওয়ার গল্পটা এতো সহজ ছিলো না। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে প্রযুক্তি অঙ্গনে কাজ শুরু করেন ইউয়ে ইউয়ান চেং। চীনের এই নাগরিক দীর্ঘ ১৬ বছরের পথ পাড়ি দিয়ে একজন খ্যাতিমান প্রকৌশলী।

‘চীনা তরুণদের আইডল ইউয়ান চেং’_fororder_cai111

এটি বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত ক্রস-রিভার ক্লাস্টার প্রকল্প। দ্বীপ, সেতু ও  সুড়ঙ্গের বিশেষ ব্যবস্থা সংযুক্ত করা হয়েছে এই প্রকল্পে। এই সেতুতে ব্যবহার করা হচ্ছে বিশাল আকারের পাইপ যার একেকটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৬৫মিটার। চওড়ায় এটি ৪৬ মিটার। এর ওজন ৮০হাজার টন , যা প্রায় দুইটি ‘টাইটানিক’এর সমান।

শুধু উন্নয়নের দিকটিই নয়, নজর দেয়া হয়েছে বিনোদনেও। এই সেতু চালু হওয়ার পর সেখানে গড়ে তোলা হবে কৃত্রিম দ্বীপ। থাকবে রেস্টুরেন্ট ও কনভেনশন সেন্টার। প্রযুক্তির মিশেলে আয়োজন থাকবে পানির ফোয়ারা ও ঝলমলে আলোকসজ্জার।

এই মহাকর্মযজ্ঞের প্রতিদিনকার খোঁজখবর রাখা থেকে শুরু করে ছোট ছোট অগ্রগতি, কোন কিছুই তার নজর এড়ায়না। প্রতিনিয়ত আলোচনা করেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে।

‘চীনা তরুণদের আইডল ইউয়ান চেং’_fororder_cai1111

তবে এতো ব্যস্ততার পরও পরিবারকেও সমান গুরুত্ব দেন তিনি। বিকেলে একমাত্র ছেলে ও স্ত্রীকে সময় দেন। ঘুরে দেখেন শহরের সুন্দরতম সব জায়গা। ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে টেনেস খেলেন আর ঘোরাঘুরির ফাঁকে সেরে নেন শারিরীক ব্যায়ামও।

‘চীনা তরুণদের আইডল ইউয়ান চেং’_fororder_cai11111

প্রকল্পের জন্যই চেংয়ের পরিবার নিজেদের শহর ছেড়ে চুশান শহরে এসেছেন। তার স্ত্রী একজন শিক্ষিকা। সপ্তাহজুড়ে বাবা-মা দুজনই ভীষণ ব্যস্ত। তাই সাপ্তাহিক ছুটির দিনটা রাখা হয় পরিবারের জন্য।

সাপ্তাহিক ছুটি কাটিয়ে সতেজ মনোভাব নিয়ে আবারো কাজে যোগ দেন এই প্রকৌশলী। নির্ধারিত সময়ের আগে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে কখনো কখনো টানা কাজ করতে হয়, ৩০ থেকে ৯০ ঘণ্টা পর্যন্ত। 

‘চীনা তরুণদের আইডল ইউয়ান চেং’_fororder_cai111111

সমুদ্রে কাজ শেষ করার পর নিজের অভিজ্ঞতা লিখে রাখতে ভোলেন না চেং। সে লেখায় উঠে আসে নানারকম সফলতার গল্প। স্থান পায় অভিজ্ঞতার নানামাত্রিক বিশ্লেষণ।

 

চেংয়ের মতো কঠোর পরিশ্রমকে পুঁজি করে অবকাঠামো নির্মাণে কাজ করছেন চীনের হাজারো যুবক। বিশ্বের বুকে চীনকে আরও এগিয়ে রাখতে দক্ষ প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন তাদের চোখেমুখে। তাই চীনা তরুণদের কাছে এক আইকনের নাম ইউয়ে ইউয়ান চেং।