দুই দশকে সিজার বেড়েছে ১১ গুণ
2021-10-07 19:33:00

দুই দশকে সিজার বেড়েছে ১১ গুণ

আজহার লিমন, ঢাকা: সিজার করে ডেলিভারি বা অস্ত্রোপচার করে শিশু জন্মদানের অভিজ্ঞতা জানতে কথা হচ্ছিলো ঢাকার মোহাম্মদপুরের ইসরাত জাহানের সঙ্গে। তার সন্তানের বয়স এখন ২ বছর ১০ মাস। তবে প্রায় ৩ বছর আগের সে স্মৃতি এখনও স্পষ্ট তার কাছে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করার পর চিকিৎসকেরা জানায় তার সন্তানের হৃদস্পন্দন কমে আসছে এবং অস্ত্রোপচার করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শে সেদিন সিজারের মাধ্যমে তার সন্তানের জন্ম হয় তবে তার এখনও মনে হয় চিকিৎকেরা এ আরও একটু আন্তরিক হতে পারতো। অস্ত্রোপচার করার কারণে তার শারিরীক বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছে বলেও জানান এই মা।

দুই দশকে সিজার বেড়েছে ১১ গুণ_fororder_cai2

সিজার নিয়ে এমন অনুভূতি বা ক্ষোভ আছে বাংলাদেশের অনেক মায়ের। বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া শিশুর অন্তত ৩ ভাগের ১ ভাগের ডেলিভারি হয় অস্ত্রোপচার করে বা সিজার সেকশনে। কিন্তু কেন?  মোহাম্মদপুর মা ও শিশু হাসপাতাল নামে পরিচিত ফার্টিলিটি সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান সিদ্দিকী মনে করেন, সমস্যাটা একপাক্ষিক নয়।

ডা. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান সিদ্দিকী

দুই দশকে সিজার বেড়েছে ১১ গুণ_fororder_cai22

ডা. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান সিদ্দিকী মনে করেন, “সিজারিয়ান সেকশনের বিষয়টা অনেকগুলো ফ্যাক্টরের ওপর নির্ভর করে। একটা পক্ষকে দুষলেই হবে না। যেমন রোগী বা প্রসূতি যিনি নিয়ে আসেন, তার শ্বাশুড়ি বা তার স্বামী অথবা লেবার ব্যাথা সহ্য করতে না পেরে স্বয়ং তার মা সিজার করে দাও, সিজার করে দাও এ ধরনের একটি পরিস্থিতি তৈরি করে চিকিসকদের ওপর।”

তিনি যোগ করেন, “এ ঘটনা সরকারি বা বেসরকারি উভয় ব্যবস্থাপনাতেই হতে পারে। আর এটি যদি বেসরকারি সেট আপে হয় তাহলে আর চিকিসকেরা দেরি করতে চান না। কারণ দেরি করার পর যদি কোন সমস্যা হয়, তাহলে রোগীর লোকেরা বলবে আমরা তো আগেই করতে বলেছিলাম।”

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, কোন একটা জনগোষ্ঠীতে ৫ শতাংশের কম এবং ১৫ শতাংশের বেশি সিজার হওয়া উচিত নয়। তবে জনসংখ্যার অনুপাতে এ হার ১০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশের মধ্যে হতে পারে। কিন্তু সরকারি হাসপাতালেই সিজারের হার ৩৬ শতাংশ।

দেশে বেসরকারি সংস্থা বা এনজিওর মাধ্যমেও কিছু হাসপাতাল পরিচালিত হয়, সেখানে সিজারের হার ৪০ শতাংশ। কিন্তু সিজারের হারে এগিয়ে আছে দেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলো। দেশের ৭০টি বেসরকারি হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার ২০০ এর মত শিশু জন্ম নেয়, যার অন্তত ৮৪ ভাগ সিজারের মাধ্যমে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপচার্য রশিদি মাহবুবকে প্রশ্ন করেছিলাম, এতে বাণিজ্যিক মনোভাব কতটা দায়ী?

অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই- মাহবুব

দুই দশকে সিজার বেড়েছে ১১ গুণ_fororder_cai222

তিনি বলেন, “ডাক্তার বা ধাত্রীদের অত সময় নাই যে তাকে পর্যবেক্ষণে রেখে সময় নিয়ে একটা নরমাল ডেলিভারি করবে। আবার এটাও ঠিক আত্নীয় স্বজন রোগী যখন ব্যাথা উঠে তারাও ধৈর্য্য হারা হয়ে যায় এবং যত দ্রুত প্রসব করানো যায় তারাও সেটা করে।”

সেভ দ্য চিলড্রেনের ২ বছর আগের এক প্রতিবেদন বলছে, অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারে ঐ বছর ব্যয় হয়েছে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। ২০১৯ সালে এ ব্যাপারে সরকারি নির্দেশনা চেয়ে উচ্চ আদালতে দুটি রিট আবেদন হয়। যার প্রেক্ষিতে অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার বন্ধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জাতীয় টাস্কফোর্স গঠনসহ কর্মপরিকল্পনার নির্দেশ দেয় উচ্চ আদালত।