‘হাজার বছরের পুরনো ‘পাখির পথ’ আমাদের জীবনকে আরো সুন্দর করছে’
2021-10-06 16:43:18

অক্টোবর ৬: চীন সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি জীববৈচিত্র্যময় দেশগুলোর অন্যতম একটি। অজস্র পশু-পাখি, উদ্ভিদ এবং সর্বত্র বিরাজমান ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রাণের সমাহার চীনকে সমৃদ্ধ করেছে। জীববৈচিত্র্য ও সংশ্লিষ্ট প্রাকৃতিক ব্যবস্থা মানব জাতির জন্য ব্যাপক স্বার্থ ও সেবামূলক কল্যাণ বয়ে এনেছে। জীববৈচিত্র্য রক্ষা পৃথীবিবাসীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের প্রাকৃতিক সভ্যতা নির্মাণকাজে অংশগ্রহণকারী, অবদানকারী ও পরিচালনাকারী দেশ হিসেবে চীন বরারবরই জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে।

 

সারা বিশ্বে প্রতি বছর শতাধিক কোটি অভিবাসী পাখি এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে স্থানান্তরিত হয়। বিশ্বের আটটি স্থানান্তর পথের মধ্যে তিনটি রয়েছে চীনে। এরই মধ্যে চিয়াংসি প্রদেশের সুই ছুয়ান জেলার ইং পান স্যু উপজেলা খুবই বিখ্যাত। প্রতি বছরের সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে অক্টোবর পর্যন্ত লাখ লাখ অভিবাসী পাখি এ পথ ধরে নানান দেশে স্থানান্তরিত হয়। তখন সেখানে এক অভাবনীয় এবং অসাধারণ দৃশ্য তৈরি হয়। মানুষ ও প্রকৃতির সম্প্রীতিময় সহাবস্থানের এমন দৃশ্যের পিছনে রয়েছে হাজার বছরের পুরনো পাখির এই পথটির রক্ষকদের পরিশ্রম। ‘চীনের ঐতিহ্যবাহী চন্দ্র পঞ্জিকার সৌর চক্র লি ছিউ’র পর শীত পড়তে শুরু করে। এ মৌসুমে শুরু হয় অভিবাসী পাখির স্থানান্তর। টানা কয়েক দিন ধরে তখন চিয়াং সি প্রদেশের সুই ছুয়ান উপজেলার পাখির পথটির আশেপাশে বিভিন্ন রঙের ও আকারের পাখির সমাবেশ হয়। অনেক পাখির হয়ত নাম জানা নেই। তবে দূর থেকে দেখলে তাদের ও পার্শ্ববর্তী বাসস্থান, চাষের ক্ষেত, সুবজ পাহাড় নিয়ে একটি সম্প্রীতিময় ও সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য মনে হয়।’‘এখানকার সুষ্ঠু প্রাকৃতিক পরিবেশ চিয়াং সি প্রদেশের সুই ছুয়ান উপজেলার পাখির বিশ্রাম নেওয়ার অঞ্চল এবং শক্তি পূরণের স্টেশনে পরিণত হয়েছে।’

 

চৌ ওয়েই হুয়া বেশ কয়েক বছর ধরে এখানে চাকরি করেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় অভিবাসী পাখি রক্ষার কাজে জড়িত রয়েছেন। তিনি বলেন, স্থানীয় সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে অভিবাসী পাখি এ পথটি ধরে স্থানান্তরিত হয়।

 তিনি বলেন,‘ইং পান স্যু উপজেলা চিয়াং সি ও হু নান প্রদেশের সংলগ্ন অঞ্চলে অবস্থিত। পুরো উপজেলায় বনাঞ্চলের আয়তন তার মোট আয়তনের ৮২.৬ শতাংশ।  উপজেলার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে রয়েছে বিপ্লবী স্থান চিং কাং শান পর্বত। দক্ষিণ-পূর্বে ছি ইয়ুন শান পর্বত, এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পা মিয়ান শান পর্বত। প্রতি বছরের সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত দশ লাখের বেশি অভিবাসী পাখি শীত্কাল কাটাতে এ পথটি ধরে দক্ষিণাঞ্চলে যায়।’

 

প্রাকৃতিক সম্পদ ছাড়াও স্থানীয় রক্ষক ও পাখি সেচ্ছাসেবকদের কারণে এ সাফল্য অর্জিত হয়েছে। চৌ ওয়েই হুয়া বলেন, স্থানীয় পাখি সেচ্ছাসেবকদের সংখ্যা চারশ’রও বেশি। তাদের মধ্যে রয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা, শিক্ষক, ও  কর্মকর্তা। তারা বছরের পর বছর ধরে পাখি রক্ষার বিষয়ে প্রচারনা চালান।

 

তবে বেশ কয়েক বছর আগেও শরত্কালে পাখি শিকার করা এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের রীতি ছিল। অবৈধভাবে পাখি শিকার দমন,  স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রাকৃতিক শিল্প উন্নয়ন, এবং পাখি রক্ষা সংক্রান্ত শিক্ষাদানসহ নানা ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সরকার ও জনগণের যৌথ প্রচেষ্টায় ২০০০ সাল থেকে সে রীতির অবসান হয়েছে। পাখি শিকারের পরিবর্তে এখন পাখি দেখতে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক এখানে আসেন।

 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পর্যটন শিল্প চাঙ্গা হয়ে ওঠেছে। এখানে পাখি দেখতে আসা পর্যটকের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। পাখি দেখার উপযোগী জায়গায় একটি ২২.২ কিলোমিটার পথ নির্মাণ করেছে স্থানীয় সরকার।

 

চৌ ওয়েই হুয়া বলেন,‘প্রকৃতিকে শ্রদ্ধা করতে হবে, তাকে নষ্ট করা যাবে না। অভিবাসী পাখিদের পথ রক্ষা করায় আমাদের জীবনও অধিক সুন্দর হচ্ছে।’ (রুবি/এনাম/শিশির)